প্রসঙ্গ: ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের বেইজিং সফর
2022-07-27 14:00:19

জুলাই ২৭: ২৬শে জুলাই বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ের তিয়াওইয়ুথাই রাষ্ট্রীয় অতিথিভবনে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। দুই প্রেসিডেন্ট  সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে চীন-ইন্দোনেশিয়া সম্পর্ক এবং অভিন্ন স্বার্থজড়িত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে ব্যাপক ও গভীরভাবে মতবিনিময় করেন। বৈঠকে তাঁরা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঐকমত্যেও পৌঁছান।

বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের পর প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো হলেন প্রথম বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান যাকে চীনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মহামারীর পরে প্রেসিডেন্ট জোকো-র প্রথম পূর্ব-এশিয়া সফরের প্রথম গন্তব্যও চীন। এতে বোঝা যায়, চীন ও ইন্দোনেশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

আলোচনার শুরুতে প্রেসিডেন্ট সি চীন-ইন্দোনেশিয়া সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন,

“আপনি হলেন বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের পরে চীনে আসা প্রথম বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান। এর মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা প্রমাণিত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আমাদের যৌথ নেতৃত্বে, চীন-ইন্দোনেশিয়া সম্পর্ক বিকশিত হয়েছে। দু’দেশের সম্পর্ক দৃঢ় স্থিতিস্থাপকতা ও প্রাণশক্তির পরিচয় দিয়েছে। বাস্তবে দেখা গেছে, চীন-ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কের উন্নয়ন কেবল দুই দেশের  দীর্ঘমেয়াদী  স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্তরেও এর ইতিবাচক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। আপনার সাথে আমি চীন-ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কের একটি গ্র্যান্ড ব্লুপ্রিন্ট আঁকতে আগ্রহী, যাতে দু’দেশের জনগণ আরও লাভবান হতে পারে।”

প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, “চীন ও ইন্দোনেশিয়ার জন্য উন্নয়নের পর্যায় প্রায় একই, এবং যৌথ স্বার্থও পারস্পরিক সংযুক্ত। চীন ও ইন্দোনেশিয়ার অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলা হচ্ছে দু’দেশের জনগণের অভিন্ন আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং সাধারণ প্রত্যাশা। যৌথভাবে চীন-ইন্দোনেশিয়া অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নির্ধারণে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চীন যৌথভাবে কাজ করে পারস্পরিক কৌশলগত আস্থা জোরদার করবে; একে অপরের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, ও উন্নয়নের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে;  পরস্পরের উন্নয়ন-পথকে সমর্থন করবে; এবং একে অপরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের কাজকে সমর্থন করবে।”

তিনি বলেন, দু’পক্ষের উচিত উচ্চ গুণগত মানের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রতিষ্ঠাকাজকে এগিয়ে নেওয়া; সময়মতো জাকার্তা-বান্দুং দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা; এবং ‘আঞ্চলিক বহুমুখী অর্থনৈতিক করিডোর’-সহ গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক প্রকল্পগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। ইন্দোনেশিয়ায় টিকা উত্পাদনকেন্দ্র নির্মাণে সর্বাত্মক সমর্থন দেবে চীন। পাশাপাশি, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ডিজিটাল অর্থনীতি এবং সবুজ উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে আগ্রহী বেইজিং। জি-টোয়েন্টি বালি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে ইন্দোনেশিয়াকে সহযোগিতা করবে চীন এবং এ সম্মেলন সফল করতে ইন্দোনেশিয়ার সাথে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক চীন।

এসময় প্রেসিডেন্ট জোকো বলেন,

“মহামান্য প্রেসিডেন্ট সি, আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোয় চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ইন্দোনেশিয়া ও চীন অভিন্ন ভাগ্যের অংশীদার এবং একে অপরের কৌশলগত অংশীদার।”

উইডোডো চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের সম্পূর্ণ সাফল্য কামনা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, প্রেসিডেন্ট সি’র দৃঢ় নেতৃত্বে চীন ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্য অর্জন করবে।

তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া ও চীন যৌথভাবে অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলার লক্ষ্য ঠিক করেছে। পারস্পরিক সহযোগিতা দু’পক্ষের জন্যই কল্যাণকর। দু’দেশের সহযোগিতা শুধু দু’দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে তা নয়, বরং তা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

বৈঠকশেষে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়। পরে, দু’নেতা রেশমপথ অর্থনৈতিক এলাকা ও ২১ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশমপথ প্রস্তাব, টিকা, সবুজ উন্নয়ন, সাইবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক দলিলপত্র সাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ইয়াং)