জ্বালানি সাশ্রয় এবং সবুজ উন্নয়নে পদক্ষেপ নিচ্ছে চীন
2022-07-26 13:59:16

এখন আবহাওয়া ধীরে ধীরে উষ্ণ হচ্ছে। আর এসি যেন সবার জীবনের একটি অবিচ্ছেদ অংশ। এখন চীনে আরো বেশি মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে যে দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুত্ সাশ্রয়ী এবং নিম্ন কার্বনের গুরুত্ব অনেক। এসি’র তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেশি করলে ৬ থেকে ৮ শতাংশ বিদ্যুত্ সাশ্রয় করা যায়। ফ্রিজারের দরজা এক মিনিট কম খুললে ০.০০৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বিদ্যুত্ সাশ্রয় করা যায়। এমন বিদ্যুত্ সাশ্রয়ের ছোট ছোট কৌশল এখন চীনাদের সাধারণ জ্ঞানে পরিণত হয়েছে।

আসলে জ্বালানি সাশ্রয় প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন অব্যাহতভাবে জ্বালানি সাশ্রয়, কার্বন নির্গমন কমানো এবং পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ জোরদার করেছে। এটাই হলো জ্বালানি সাশ্রয়ের চেতনা চীনে এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ।


চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের নির্ধারিত ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনাকালে জ্বালানি সাশ্রয় এবং কার্বন নির্গমন কমানোর প্রস্তাব’ অনুযায়ী, ২০২৫ সালে চীনের জিডিপি’র জ্বালানি ব্যয়ের হার ২০২০ সালের চেয়ে ১৩.৫ কমানো হবে। জ্বালানি ভোগের মোট পরিমাণ যৌক্তিক মানে বজায় থাকবে। সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা আরো সুসংহত করা হবে। প্রধান শিল্প ও বিভিন্ন খাতের জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ এবং প্রধান দূষিত পদার্থ নির্গমন নিয়ন্ত্রণের মান মোটামুটি আন্তর্জাতিক আধুনিক মানে পৌঁছাবে। অর্থনীতি ও সমাজের সবুজ রূপান্তর বাস্তবায়ন করা হবে।

তাহলে চীন কীভাবে আরো ভালোভাবে জ্বালানি সাশ্রয়, কার্বন নির্গমন কমানো এবং সবুজ উন্নয়ন বাস্তবায়ন করবে? বর্তমানে চীনে সমাজের সবাই গভীরভাবে সবুজ জীবন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে, সবার মনে সাশ্রয়ী চেতনা তৈরি হয়েছে। চীনাদের মধ্যে সহজ জীবন, সবুজ ও নিম্ন কার্বন নির্গমনের জীবন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি আরো জনপ্রিয় হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের দাতব্য-কাজও আয়োজন করা হচ্ছে।

পাশাপাশি চীন বিশ্বের জ্বালানি সাশ্রয় এবং কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ৭৬তম জাতিসংঘ সম্মেলনের সাধারণ বিতর্কে বলেছিলেন: চীন ২০৩০ সালের আগে সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমন অবস্থা এবং ২০৬০ সালের আগে কার্বন নিরপেক্ষ অবস্থা বাস্তবায়ন করবে। এজন্য কঠোর চেষ্টা করতে হবে। চীন সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোর সবুজ জ্বালানি উন্নয়নে সমর্থন করবে, বিদেশে নতুন করে কোনো কয়লা-বিদ্যুত্ প্রকল্প নির্মাণ করবে না। যা সমাজের বিভিন্ন মহলের প্রশংসা পেয়েছে। বিভিন্ন দেশ চীনের এই প্রতিশ্রুতিকে মহান অবদান হিসেবে উল্লেখ করেছে।

 

চীন ও বাংলাদেশের সবুজ ও নিম্ন কার্বন নির্গমন সহযোগিতা একটি উদাহরণ। পহেলা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চীনের চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিএমইসি)-র সঙ্গে উত্তরায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য পোড়ানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উত্পাদন প্রকল্পে পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই প্রকল্প বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ‘বর্জ্যের মাধ্যমে বিদ্যুত্ উত্পাদন প্রকল্প’ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই প্রকল্প চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশবান্ধব সহযোগিতা প্রকল্প। এটি বাংলাদেশের প্রথম বর্জ্য থেকে বিদ্যুত্ উত্পাদানকারী প্রকল্প। স্থানীয় বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এতে পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যও বাস্তবায়িত হবে।

 

‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় সিএমইসি ছাড়া অনেক চীনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উন্নয়নে অবদান রেখেছে। বাংলাদেশে চীনের সহায়তায় নির্মিত সৌরশক্তি সড়ক বাতির ব্যবস্থা কয়েকটি বড় শহরে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে চীনা পোশাক প্রতিষ্ঠান-লিজ ফ্যাশন ঢাকার কারখানায় ফটোভোল্টেইক পাওয়ার স্টেশন স্থাপন করেছে, যাতে কার্বন নির্গমন কমানো যায়।

জনসাধারণের জ্বালানি সাশ্রয়ী চেতনা, থেকে গোটা সমাজের অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে নিম্ন কার্বন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পর্যন্ত বিস্তৃত। চীন কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বের পরিবেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে।