বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে মজবুত ভূমিকা রাখছে শক্তিশালী চীনা অর্থনীতি
2022-07-25 13:22:51

সম্প্রতি চীনের অর্থনীতির ষাণ্মাসিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রধান অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা ইতিবাচক সংকেত পাঠায়: উৎপাদন সরবরাহ যথাক্রমে সমবেত হয়, বাসিন্দাদের পণ্য-ভোগ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি হয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি উন্নত হয়, দ্রব্যমূল্য সাধারণত উপযুক্ত সীমার মধ্যে রাখা হয় এবং বিদেশি বিনিয়োগ দুই অঙ্কে বাড়তে থাকে। চীনের মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি নিরন্তর উন্নতি চালিয়ে যাবার সঙ্গে-সঙ্গে অর্থনীতি স্থিতিশীল করা নীতি ও ব্যবস্থা দ্রুততার সাথে কার্যকর হয়। চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।

 

বিদেশি তথ্য-মাধ্যম মনে করছে, চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অভীষ্ট লক্ষ্যের চেয়ে ভাল। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল ও কঠোর হবার প্রেক্ষাপটে চীন “বিনিয়োগকারীদের আশ্রয়ে” পরিণত হয়ে অব্যাহতভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য শক্তিশালী চালিকাশক্তি দিতে থাকবে।

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুন মাসে চীনের নির্মাণ শিল্পে  পিএমআই ৫০.২ শতাংশে সমবেত হয়েছে। যা মে মাসের চেয়ে ০.৬ শতাংশ বেশি। ২১টি তদন্তে অংশগ্রহণকারী খাতে ১৩টির পিএমআই সম্প্রসারণ ব্যবধানের মধ্যে ছিল। নির্মাণ শিল্পের সমৃদ্ধি অব্যাহতভাবে সম্প্রসারিত হয়, ইতিবাচক উপাদানও অব্যাহতভাবে জমা করা হয়।

 

চীনের শুল্ক প্রশাসন সম্প্রতি প্রকাশিত বৈদেশিক বাণিজ্যিক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের মালামাল বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানির মোট মূল্য ছিল ১৯.৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান এবং টানা ৮টি প্রান্তিকে বছরের পর বছর বৃদ্ধি বাস্তবায়িত হয়।

 

“সর্বশেষ কর্তৃপক্ষ পরিসংখ্যান প্রতিফলিত হয়েছে যে, বাণিজ্যিক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে চীনের অবস্থান দুর্বল হয় নি।” ব্লুমবার্গ নিউজ বলছে, জুন মাসে চীনের রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকে সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধিতে চীনের বাণিজ্যিক উদ্বৃত্ত ৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে।  ব্লুমবার্গ নিউজের অর্থনীতিবিদ বিশ্লেষণ করেন, বর্তমানে চীনের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও লজিস্টিক কার্যকারিতা উন্নীত হচ্ছে।

 

“চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরল কেস।” সম্প্রতি জাপানের নোমুরা প্রকাশিত সর্বশেষ আন্দাজ অনুযায়ী, মহামারীর প্রভাব থেকে মুক্ত করা এবং সম্প্রসারণ নীতির সমর্থন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু অনেক দেশ সংকোচন নীতি কার্যকর করছে এবং অর্থনৈতিক মন্দা আবির্ভাব হচ্ছে। নোমুরার অর্থনীতিবিদ অনুমান করেন, ইউরো অঞ্চল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক পতন হবে। কিন্তু চীনের ভবিষ্যৎ অনেক ভিন্ন।

 

“ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল”-এর ওয়েবসাইটে জানা গেছে, খাদ্য ও জ্বালানী দাম বৃদ্ধি হবার কারণে জুন মাসে চীনের মুদ্রাস্ফীতি অভীষ্ট লক্ষ্যের চেয়ে কিছুটা বেশি। কিন্তু ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের উঁচু মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে খরচ চাপ কম। অর্থনীতিবিদদের অনুমান, চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে চীনের মুদ্রাস্ফীতি হার সেপ্টেম্বরের কাছাকাছি সময় শীর্ষে পৌঁছে ৩ শতাংশের দিকে এমনকি আরও নিম্ন হবে। সে তুলনায় মে মাসে মার্কিন সিপিআই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৬ শতাংশ বেড়ে ১৯৮১ সাল থেকে সর্বোচ্চ ছিল।

 

ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্ট (বিআইএস) সম্প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক অর্থনৈতিক রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্ব অর্থনীতি নতুন উঁচু মুদ্রাস্ফীতি সময়ে প্রবেশ করার সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। বিআইএস-এর জেনারেল ম্যানেজার এক সাক্ষাতকারে বলেন, বিশ্ব উঁচু মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতিতে চীন শক্তিশালী অর্থনৈতিক বলিষ্ঠতা দেখিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য গঠনমূলক মুদ্রানীতি সমন্বয়ের স্পেস সরবরাহ করে। চীন অব্যাহতভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য চালিকাশক্তি অবদান রাখবে।

 

বৈদেশিক পুঁজি হচ্ছে একটি দেশের অর্থনৈতিক আকর্ষণীয় শক্তি পর্যবেক্ষণের বায়ু পাখা। সম্প্রতি চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের (সিসিপিআইটি) জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, চীন ধারাবাহিকভাবে ব্যবসা পরিবেশ সুবিন্যাস করে, চীনা বাজারের প্রতি বিদেশী বিনিয়োজিত প্রতিষ্ঠানদের প্রত্যয় বাড়িয়ে চীনে তাদের বিনিয়োগ করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা জোরালো করে।

 

অ্যামচ্যান চীন সম্প্রতি প্রকাশিত “চীনে আমেরিকান ব্যবসার উপর শ্বেতপত্রে” দেখা গেছে, দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠান মনে করে, চীন এখনও বিশ্বের প্রথম তিনটি বিনিয়োগ বাজারের মধ্যে অন্যতম। আর ৮৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বলছে, তারা উৎপাদন বা ক্রয় চীনের বাইরে কোন অঞ্চলে স্থানান্তর করতে বিবেচনা করে নি। শ্বেতপত্রে বলা হয়, চীন এখনও মার্কিন প্রতিষ্ঠানের প্রথম বাজার। অনেক মার্কিন প্রতিষ্ঠানের মতে, বিশ্ব বিজয়ী হতে চাইলে, চীনা বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা-ক্ষমতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

গত ১৯ জুন তৃতীয় ছিংতাও বহুজাতিক শীর্ষসম্মেলন উদ্বোধন হয়। তাতে ৪৭৬টি বিশ্বের সেরা ৫শ প্রতিষ্ঠান এবং এ খাতের নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অনলাইন-অফলাইনের মাধ্যমে অংশ নেন। আর ৯৯টি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রকল্প মিলিত হয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে। মোট বিনিয়োগ পরিমাণ ১ হাজার ৫৬০ কোটি মার্কিন ডলার।

 

একই সময় বৈদেশিক বিনিয়োগ সক্রিয়ভাবে চীনের অর্থ বাজারে জড়িত হয়। আর্থিক তথ্য ও বিশ্লেষণ সরঞ্জাম পরিষেবা প্রদানকারী ওয়িন.ড-এর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুন মাসে উত্তরমুখী তহবিলের (শাংহাই ও শেনজেন বাজারে হংকংয়ের অর্থ)  নেট ক্রয় ছিল ৭ হাজার ২৯৬ কোটি ইউয়ান, যা ২০২০ সাল থেকে সর্বোচ্চ। তার মানে আরও বেশি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সংস্থা চীনকে খতিয়ে দেখছে।

 

বিশ্ব পুঁজি বিনিয়োগকারীর জন্য চীনে বিনিয়োগ করার বৈশিষ্ট্য মূল্য আছে। চীনের জ্বালানী রূপান্তর এবং প্রযুক্তি অগ্রগতি সবুজ অবকাঠামোর ক্ষেত্রের বিনিয়োগ সুযোগ প্রদান করে।

 

স্পেনের “দ্য ইকোনমিস্ট”-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়, চীন এবং তার বাজার আর্থিক দাঙ্গাহাঙ্গামার আশ্রয় এবং বিশ্ব অর্থনীতির বিশাল আশা-ভরসায় পরিণত হয়। পশ্চিমা অর্থনীতির জন্য চীন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কারণ চীন সম্পূর্ণ একটি কার্যকরী উৎপাদন ও খরচ কেন্দ্র। মুদ্রাস্ফীতি পশ্চিমা পণ্য-ভোগ’কে গলা টিপে হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গে  চীনা পণ্যভোগীদের ভোগ স্থিতিশীল সমবেত হচ্ছে। সুতরাং চীন অথবা বিশ্ব জরুরী অর্থনৈতিক পতনের একটি মরুদ্বীপে পরিণত হবে। তার বাজারও বিনিয়োগকারীদের স্থিতিশীল আশ্রয় হতে পারবে।

 

(প্রেমা/এনাম)