২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি কাশগারে তুষার পড়ছিল। একটি আকস্মিক চিত্কার কাশগার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকেলের শান্ত পরিবেশ অশান্ত করে তোলে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণার্থী লাজিনী বেইকা ও মুশাজিয়াং নুরদুন শোনেন কান্নার আওয়াজ। তাঁরা দেখেন একটি শিশু বরফের গুহায় পড়ে গেছে। কাছাকাছি শিশুর মা সাহায্যের জন্য চিত্কার করছেন ও কাঁদছেন।
লাজিনী সময়মতো শিশুকে উদ্ধারের জন্য হ্রদের দিকে দৌড়ান। কিন্তু তিনি যখন বরফের উপর দাঁড়ান, তখন বরফ ভেঙ্গে যায়। তিনিও বরফের গুহায় পড়ে যান। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য চিত্কার করতে থাকেন। তাঁর চিত্কার শুনে আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে আসে এবং শিশুটিকে উদ্ধার করে। কিন্তু ৪১ বছর বয়সী লাজিনী ততক্ষণে পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
তাঁর সহপাঠি মুশাজিয়াং বলেন, লাজিনী প্রথমে বরফের গুহায় নামেন। কিন্তু পানিতে বেশি সময় থাকায় আর উঠতে পারেননি। এখনও তাঁর কানে লাজিনীর আর্তচিত্কার ‘শিশুটিকে কেউ উদ্ধার করুন’ বাজে।
নিজের জীবন দিয়ে অন্যকে উদ্ধার করেন তিনি, প্রেম দিয়ে অন্যের জীবন বাঁচান। লাজিনী মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন উত্সর্গ করেন।
লাজিনীর পরিবারের তিন প্রজন্মের সদস্য হলেন সীমান্তরক্ষী। তাঁরা দেশ ও জনগণকে ভালবাসেন। তাঁরা পামির মালভূমিতে সীমান্ত সুরক্ষা করছেন ৭০ বছর ধরে।
২০০৪ সালে লাজিনী পিতার কাছ থেকে সীমান্তরক্ষীর কাজ বুঝে নেন। সীমান্তে তিনি টহল দিতেন নিয়মিত। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে ‘পামির গার্ল’ ডাকতেন।
১০ বছরের সীমান্তরক্ষী কাজে লাজিনীর অনেক কঠিন ও বিপজ্জনক সময় কেটেছে। কিন্তু লাজিনীর কখনও ভয় লাগেনি। তিনি নিজের জীবন দিয়ে রাষ্ট্রের সীমান্ত সুরক্ষার কাজ করেছেন।
লাজিনীর উত্সাহে অনেক স্থানীয় পশুপালক সীমান্ত সুরক্ষার কাজে অংশ নিয়েছেন। তিনি ভালভাবে কাজ করার জন্য অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি পামির মালভূমির জাতিগত ঐক্য উন্নয়নের জন্য অবদান রেখেছেন। বর্তমানে তাঁর গল্প নিয়ে একটি টিভি সিরিজ তৈরি হয়েছে। তাঁর চেতনার প্রচার হওয়া উচিত। (ছাই/আলিম/রুবী)