চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চীনের অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। এ অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে অনেক সমৃদ্ধ, দৃশ্য অনেক সুন্দর। এমন ভালো প্রাকৃতিক সম্পদের ভিত্তিতে স্থানীয় লোকজনের জীবন সুন্দর হয়ে উঠেছে। আজ এই বিষয়ে কথা বলবো।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দুইবার চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। সুন্দর নতুন নিংসিয়া নির্মাণ এবং মহান চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন এ অঞ্চলের ৭২ লাখেরও বেশি মানুষ সার্বিক সমৃদ্ধ অর্থনীতি, জাতীয় ঐক্য, সুন্দর পরিবেশের নিংসিয়া নির্মাণে চেষ্টা করছে, হলুদ নদী অববাহিকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উচ্চ মানের উন্নয়নের নতুন যাত্রা উন্মোচন করেছে।
নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উ চুং শহরের হুং সি বাও এলাকা হল চীনের বৃহত্তম স্থানান্তরিত অভিবাসীর আবাসিক এলাকা। এখানে অন্য জায়গা থেকে ২.৩ লাখ মানুষ স্থানান্তর হয়ে এসেছেন। দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার পর আরো সুন্দর জীবনের দিকে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন।
২০২০ সালের জুন মাসে সি চিন পিংয়ের নিংসিয়া পরিদর্শনের প্রথম ধাপই ছিল এই আবাসিক এলাকার হুং দ্য গ্রাম। তিনি দারিদ্র্যবিমোচন কারখানায় গিয়ে কাগজের বাক্স তৈরি করা কৃষকের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলেন, তাঁদের খোঁজখবর নেন। তিনি কৃষক লিউ ক্য রুই-এর বাসায় গিয়ে তাঁর পরিবারের কর্মসংস্থান, আয়, চিকিত্সা, সামাজিক বীমাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তিনি বলেন, কৃষকরা নতুন বাড়িতে স্থানান্তরের পর আরো সুন্দর জীবন তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
নিংসিয়া-এর অভিবাসীদের খুব গুরুত্ব দেন সি চিন পিং। নিংসিয়ার ১২.৩ লাখ অভিবাসীদের পরবর্তী উন্নয়ন সম্বন্ধে তিনি বলেন, স্থানান্তরের পর কিছু সুন্দর বাড়ি নির্মাণই যথেষ্ট নয়। কৃষকরা এখানে আসার পর, তাদের থাকার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে, তাদের ধনী হওয়ার পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। এভাবে তাঁরা এখানে স্থায়ীভাবে থাকতে পারবেন।
নিংসিয়াতে অভিবাসী লোকসংখ্যা পুরো অঞ্চলের সব কৃষকের সংখ্যার অর্ধেক। তাই অভিবাসী এলাকার উন্নয়ন ছাড়া পুরো নিংসিয়া অঞ্চলের সার্বিক গ্রামীণ পুনরুত্থান সম্ভব হবে না।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে, চূড়ান্ত দরিদ্র জেলা দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার পাঁচ মাস পর, নিংসিয়া অঞ্চল সার্বিকভাবে ‘লাখ লাখ অভিবাসীকে ধনী হতে সাহায্য করার অভিযান’ শুরু করে। যে অভিবাসী এলাকার জনসংখ্যা ৮শ’র বেশি, সেখানে শিল্প উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ এবং গণসেবা উন্নয়ন- ইত্যাদি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।
২০২১ সালে নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল অভিবাসী এলাকার শিল্প উন্নয়নের জন্য ১৯৩ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ দেয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে ২১২ হাজারটি। সেই বছর নিংসিয়া’র অভিবাসীদের মাথাপিছু আয় ছিল ১০৫১৭ ইউয়ান, প্রবৃদ্ধির হার ১৮.১ শতাংশ।
হুং দ্য গ্রামের দারিদ্র্যবিমোচন কারখানায় দশ-বারো জন অভিবাসী লোকের গড়পড়তা বয়স ৬০ বছর ‘রৌপ্য চুল লাইভস্ট্রিমিং দল’ গঠন করেছেন। তাঁরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লাইভস্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয় পণ্য বিক্রি করেন। প্রথম বছরই তার বিক্রির পরিমাণ দশ লাখেরও বেশি ইউয়ান ছাড়িয়েছে। তাঁরা বলেন, আমাদের জীবন নিশ্চয় আরো ভালো হবে।
গ্রীষ্মকালের হ্য লান পাহাড়ের পূর্ব দিকে, সবুজ আঙুর বাগান যেন অসীম সবুজের সমুদ্রের মতো হয়। ২০২০ সালের ৯ জুন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইন ছুয়ান শহরের একটি আঙুর মদ বাগানের আঙুর চাষ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি হ্য লান পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের খোঁজখবর নেন। তিনি বলেন, হ্য লান পাহাড় চীনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ভৌগলিক সীমারেখা এবং উত্তর-পশ্চিম চীনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক নিরাপত্তার দেয়াল। তাই এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এই মদ বাগানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইউয়ান ইউয়ানের বাবার প্রজন্ম হ্য লান পাহাড় থেকে পাথর সংগ্রহ করতেন। এখন কাজের দায়িত্ব ইউয়ান ইউয়ানের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে, তিনি আর পাহাড় থেকে পাথর সংগ্রহ করেন না। বরং গাছ রোপণ শুরু করেছেন। বর্তমানে তিনি পরিত্যক্ত খনি এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার করেছেন এবং অনেক আঙুর চাষ করেছেন।
হ্য লান পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে স্থানীয় সরকার অনেক গুরুত্ব দেয়। ১৫ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ দিয়ে প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকার ১৬৯টি জায়গা পুনর্নির্মাণ করেছে। আগের কয়লা খনি, এখন আবার সবুজ হয়েছে। হ্য লান পাহাড়ের চেহারা আরও সুন্দর হয়েছে।
পাহাড়, নদী, বনভূমি, জমি, হ্রদ, ঘাস, বালি, নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে সব কিছুই আছে। হ্য লান পাহাড় সংরক্ষণ, থিংক্যলি মরুভূমির দূষণ প্রতিরোধ, হলুদ নদী অববাহিকার পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বহুবার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন।
২০২০ সালের জুন মাসে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নিংসিয়া পরিদর্শনের সময় সেই অঞ্চলকে ‘হলুদ নদী অববাহিকার প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এবং উচ্চ মানের উন্নত এলাকা হিসেবে নির্মাণের’ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, সবুজ পাহাড় এবং পরিচ্ছন্ন পানি হল সোনার পাহাড় এবং রূপার পাহাড়’—এমন চিন্তাধারায় ভালোভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নত করতে হয়।
নিংসিয়া দেশের সব প্রদেশের মধ্যে সবার আগে হলুদ নদীর অববাহিকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উচ্চ মানের উন্নয়নের বিষয়ে আঞ্চলিক আইন প্রণয়নের কাজ করেছে। যাতে হলুদ নদী অববাহিকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উচ্চ মানের উন্নয়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণের পাশাপাশি পুরো অঞ্চলের পরিচালনা বাস্তবায়ন করা যায়।
এসব চেষ্টার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। পুরো অঞ্চলে ভূমিক্ষয় নেই বললেই চলে। হলুদ নদীর নিংসিয়া এলাকার পানির গুণগতমান টানা ৫ বছর ধরে দ্বিতীয় পর্যায়ে বজায় রয়েছে। ২০২১ সালে পুরো অঞ্চলের ভালো বাতাস ছিল ৩০৬ দিন। চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ আরও জোরদার হয়েছে।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় নিংসিয়া আরো অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে। পানি অধিকার সংস্কার, ভূমি অধিকার সংস্কার, দূষণ নির্গমন সংস্কার ইত্যাদি। ব্যাপকভাবে বায়ুশক্তি, ফটোভোলটেইক, হাইড্রোজেনশক্তি ইত্যাদি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি শিল্প উন্নত করা, জ্বালানি শিল্পের সবুজায়ন জোরদার করা ইত্যাদি।
২০২১ সালের শেষ নাগাদ, নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে, বায়ুশক্তি এবং ফটোভোলটেইকসহ বিভিন্ন নতুন জ্বালানি দিয়ে ৪৬ শতাংশ বিদ্যুত্ উত্পাদন করা হয়। যা দেশের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। পুরো নিংসিয়া অঞ্চলে দেখুন, সেখানে সুন্দর প্রকৃতি উন্নয়নের নতুন অবস্থা দেখা দিয়েছে।
৫ বছরে চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে গবেষণা ও পরীক্ষায় বরাদ্দের পরিমাণ বার্ষিক বৃদ্ধি দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে। সহস্রাধিক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা প্রকল্প চালু রয়েছে। শিল্প উন্নয়নের বাধা দূর হয়েছে।
আগামী পাঁচ বছরে নিংসিয়া অঞ্চল দেশের গুরুত্বপূর্ণ নতুন উপকরণ উত্পাদনের কেন্দ্র এবং বিশ্বের আঙুর মদের বিখ্যাত জায়গা হিসেবে উন্নত হবে। এ অঞ্চলের বিভিন্ন জাতির জনগণ উদ্ভাবনের মাধ্যমে সুন্দর জীবনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করছে।