লি চান শু-র সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকারের ভিডিও-বৈঠক
2022-07-21 16:26:34

জুলাই ২১: চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান লি চান শু গত ১৯ই জুলাই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সাথে এক ভিডিও-বৈঠকে মিলিত হন।

ভিডিও-বৈঠকে লি চান শু বলেন, চীন ও বাংলাদেশ পরস্পরের ঐতিহ্যবাহী বন্ধু ও প্রতিবেশী। চীন ও বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের কৌশলগত দিক্নির্দেশনায় দুই দেশের সম্পর্ক দ্রুত উন্নয়নের এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে; পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা আরও গভীর হয়েছে; অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিনিময় ক্রমাগতভাবে উন্নত হচ্ছে; দ্বিপক্ষীয় মহামারী-বিরোধী সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ থেকে সৃষ্ট কল্যাণ দু’দেশের জনগণেরই কাজে লাগছে।

তিনি বলেন, দুই দেশের নেতৃবৃন্দ যেসব গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন, তা বাস্তবায়ন করতে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বৃহত্তর উন্নয়নের জন্য চীন বাংলাদেশের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক।

লি চান শু উল্লেখ করেন, চীন বাংলাদেশের সাথে কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। তাইওয়ান, সিনচিয়াং, তিব্বত, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের সমর্থনের প্রশংসা করে চীন। আবার চীনও জাতীয় অবস্থার সাথে মানানসই উন্নয়ন-পথ বেছে নেওয়ার বাংলাদেশের অধিকারকে সমর্থন করে। এই সমর্থন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

তিনি আশা করেন, উভয় পক্ষ পারস্পরিক রাজনৈতিক বিশ্বাসকে আরও জোরদার করবে, কৌশলগত যোগাযোগ আরও বাড়াবে, একে অপরের মূল স্বার্থ ও প্রধান উদ্বেগকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে যাবে, এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুস্থ ও স্থিতিশীল উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।

লি চান শু বলেন, তাঁর দেশ "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগের সঙ্গে দুই দেশের উন্নয়ন-কৌশলগুলোকে সমন্বয় করতে ইচ্ছুক। চীন বাংলাদেশের "সোনার বাংলার" স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করতে; অবকাঠামো, অর্থনীতি ও বাণিজ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে; ক্লিন এনার্জি, গ্রিন টেকনোলজি, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, ইত্যাদি খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়াতে চায়। আর এজন্য চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বকে সমর্থনকারী বেসরকারি সংস্থাগুলোকে ক্রমাগত আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে ইচ্ছুক চীন।

তিনি বলেন, বর্তমানে নিরাপত্তা ও উন্নয়ন সব দেশের অভিন্ন উদ্বেগ। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ’ এবং ‘বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ’ হলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীন কর্তৃক প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রস্তাব। বৈশ্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধি সম্মিলিতভাবে প্রচারের উদ্যোগে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণকে স্বাগত জানায় বেইজিং।

লি চান শু বলেন, দুই দেশের মধ্যে আইনসভা পর্যায়ের দীর্ঘমেয়াদী বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনের জাতীয় গণকংগ্রেস বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সাথে সকল স্তরে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীর আদান-প্রদান করতে ইচ্ছুক। এসব ক্ষেত্রের মধ্যে আছে: আইন প্রণয়ন ও তত্ত্বাবধায়ক কাজে পারস্পরিক শিক্ষা ও পারস্পরিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং প্রাসঙ্গিক আইন ও প্রবিধান প্রবর্তন, সংশোধন ও উন্নত করা এবং প্রচার করা।

তিনি আরও বলেন, উন্নয়নশীল সকল দেশের অভিন্ন স্বার্থ রক্ষার জন্য আন্তঃ-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন এবং এশিয়ান পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলির মতো বহুপাক্ষিক কাঠামোতে সহযোগিতা জোরদার করা উচিত।  

এসময় বাংলাদেশের সংসদের স্পিকার বলেন, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সফর ছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে  একটি মাইলফলক। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে চীনের মূল স্বার্থ ও প্রধান উদ্বেগকে সমর্থন করে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক ক্রমাগত উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে, মহামারীর বিরুদ্ধে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে, এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়াতে ইচ্ছুক। (ইয়াং/আলিম/হাইমান)