১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই মানুষ প্রথমবারের মতো চাঁদে অবতরণ করে। ফলে প্রতিবছর ২০ জুলাই চাঁদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। প্রাচীনকাল থেকে চীনা জাতি চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছে। পৌরাণিক কাহিনীতে চাঁদে বাস করেন ছাং-এ নামের এক দেবী। আর মোগাও গুহার দেয়ালে আঁকা হয় চাঁদে ওড়ার চিত্র। দু’হাজার বছর আগে কবি ছু ইউয়ান ‘স্বর্গ জিজ্ঞাসা’ নামের কবিতা লিখেছেন এবং মিং রাজবংশে ওয়ান হু নামের একজন ৪৭টি রকেটে বাঁধা একটি চেয়ারে বসে, হাতে একটি ঘুড়ি নিয়ে আকাশে উড়ার চেষ্টা করেছেন। চীনাদের চাঁদ ও মহাকাশের প্রতি ভালবাসা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা কখনও পরিবর্তন হয়নি।
সবাই জানতে থাকে যে আধুনিক সময়ে অনেক দেশ নানা ধরনের চাঁদ অনুসন্ধান পরিকল্পনা তৈরি করেছে। তবে এর মধ্যে খুব কমই বাস্তবায়ন হয়েছে। পূর্ণিমা এবং ত্রৈমাসিক চাঁদের পরিবর্তনের সময় চলে গেছে। আর এর পাশাপাশি চীনা মহাকাশ কর্মীরা দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।
২০০৪ সালে চীনে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্প। আর তার নাম ‘ছাং-এ প্রকল্প’। চাঁদের এ দেবিকে দেখার রোমান্টিক স্বপ্ন নিয়ে চীন যথাক্রমে ৫টি চন্দ্র অনুসন্ধান উপগ্রহ উত্ক্ষেপণ করে। ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর ছাং-এ-১ উপগ্রহ উত্ক্ষেপণ করা হয়। চীনে বাস্তবায়ন হয় চাঁদকে কেন্দ্র করে উপগ্রহের পরিক্রমণ। ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর ছাং-এ-৩ সফলভাবে অবতরণ করেছে। তাতে চীন বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে চাঁদে অবতরণ করে। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর ছাং-এ-৪ মানবজাতির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চাঁদের পিঠে অবতরণ করে। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ছাং-এ-৫ চাঁদ থেকে ১,৭৩১ গ্রাম মাটি নিয়ে ফিরে এসেছে। চীন প্রথমবারের মতো পৃথিবীর বাইরে থেকে নমুনা নিয়ে এসেছে। আর মানবজাতি ৪২ বছর পর আবারও চাঁদ থেকে নমুনা নিয়ে ফিরেছে।
এখনও মনে আছে, ১৯৭৮ সালে মার্কিন বিশেষ দূত চীনকে একটি উপহার দিয়েছেন। সেটি হলো অ্যাপোলো মহাকাশচারীর চাঁদ থেকে নিয়ে আসা পাথরের নমুনা। এক গ্রামের ওই নমুনাটি দু’ভাগে ভাগ করা হয়। তার ০.৫ গ্রাম জনগণের কাছে প্রদর্শন করা হয়। আর বিজ্ঞানীরা বাকি ০.৫ গ্রাম নিয়ে চাঁদের গবেষণা করেন। বিয়াল্লিশ বছর পর চীনারা চাঁদ থেকে ১,৭৩১ গ্রাম নমুনা নিয়ে এসেছে। আর এ পরিবর্তন থেকে বোঝা যায়, আমরা চাঁদ এমনকি মহাকাশ অনুসন্ধান প্রকল্পে কত দূর এগিয়েছি।
ছাং-এ-৫-এর পৃথিবীতে ফিরে আসার ওই দিনে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন। বার্তায় তিনি প্রথমবারের মতো চাঁদ অনুসন্ধান চেতনার কথা উল্লেখ করেছেন। স্বপ্নকে তাড়া করা, অনুসন্ধানের সাহস থাকা, সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করা, এবং পারস্পরিক কল্যাণে সহযোগিতা করার চেতনায় আমাদের বিজ্ঞানীরা দেশ ও জাতির মহান পুনরুদ্ধারে বড় অবদান রেখেছেন। পাশাপাশি, মহাকাশের শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন ও মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনে তারাও অবদান রেখেছেন।
চীনের চাঁদ অনুসন্ধানে অসাধারণ সফলতা নির্ভর করে প্রজন্মের পর প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের জ্ঞান ও পরিশ্রম, নির্ভর করে চীনের ব্যাপক শক্তি আর চীনা মানুষের উপর। চাঁদ অন্বেষণ একটি ঝুঁকিপূর্ণ, চ্যালেঞ্জিং এবং অজানা কাজ। তবে ১০-১২ বছরে ৩ লাখ ৮০ হাজার কিলোমটারের উড্ডয়ন, শতাধিক সংস্থান ও হাজার হাজার কর্মীর প্রচেষ্টায় এক একটি স্বপ্ন বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। আর চাঁদ অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় যে চেতনা আমরা দেখি সেটি চীনা জাতির অদম্য জাতীয় চেতনার প্রতিফলন। চীনা জাতির মহান পুনরুদ্ধার ও চীনা স্বপ্নের বাস্তবায়নে এমন চেতনা খুব দরকার। (শিশির/এনাম)