বিদেশে পশ্চিমা দেশগুলোর অপরাধ বিচার করা উচিত
2022-07-19 15:07:32

জুলাই ১৯: নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে পশ্চিমা আগ্রাসন কত নিষ্ঠুর হতে পারে? বিবিসি’র সম্প্রতি প্রকাশিত আফগানিস্তান নিযুক্ত ব্রিটিশ বাহিনীর বর্বরোচিত আচরণের ভিডিওতে দেখা যায়: ভয়ংকর ‘হত্যা প্রতিযোগিতার’ ভিডিও’র পিছনে রয়েছে রক্ত ও পাপ; যা নিষ্ঠুর অপরাধের পর পালিয়ে যাওয়ার ছবি।

ব্রিটিশ বাহিনীর সামরিক রিপোর্ট, ইমেইল, ঘটনাস্থলে গুলির ছবিসহ বিভিন্ন প্রমাণ তদন্ত করে বিবিসি জানিয়েছে যে, আফগানিস্তান নিযুক্ত ব্রিটেনের বাহিনী বার বার যুদ্ধবন্দি এবং নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। এমন কি তারা ‘কে বেশি মানুষ হত্যা করতে পারে’ এমন প্রতিযোগিতাও করেছে। এমন শীর্ষ অপরাধকারী একটি বাহিনী আফগানিস্তানে ছয় মাসে অবৈধভাবে ৫৪জন মানুষ হত্যা করেছে। তা ছাড়া, তদন্ত থেকে প্রমাণিত যে, সংশ্লিষ্ট বাহিনীর অপকর্ম ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেয় নি।

 

এমন আচরণ প্রকাশের পর ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ক্ষমা চায় নি, অপরাধের তদন্ত করে নি। বরং সেনাদের অন্যায় গোপন করতে চেয়েছিল। মন্ত্রণালয় বিবিসি’র খবরকে দায়িত্বহীন ও ভুল হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। তাদের দাবি, বিবিসি’র খবর প্রকাশ ফ্রন্ট লাইনের সেনাদের বিপদে ফেলেছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ তদন্তের পর মনে করেন, যারা গুলিতে নিহত হয়েছে, তারা অনেকেই যুদ্ধরত নয়, বরং বসে থাকা অবস্থায় ছিল। ঘটনাস্থলে যা ঘটেছে, তা নিছক দেখামাত্র হত্যা বা ‘execution killing’। ব্রিটেনের ‘দি গার্ডিয়ান’ সম্পাদকীয়তে বলেছে, বর্তমান প্রমাণগুলো থেকে জানা যায়, আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সেনারা যুদ্ধাপরাধ করেছে।

আসলে নিরীহ মানুষকে হত্যার অপরাধ শুধু ব্রিটিশ বাহিনী করেনি, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার সেনারা আফগানিস্তানে নিরীহ মানুষ হত্যা করার মতো অপরাধ করেছিল। যেমন তারা দু’জন ১৪ বছর বয়সী কিশোরকে গলা কেটে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। এমন নিষ্ঠুর আচরণকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সমাজ।

 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালানোর ২০ বছরে ১ লাখ ৭৪ হাজার আফগান মানুষকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ৩০ হাজারই নিরীহ মানুষ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘নিউইয়র্ক টাইমসের’ অনুসন্ধানী সাংবাদিকের লেখা ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে যুদ্ধে মার্কিন সেনাদের নিরীহ মানুষ হত্যা করার বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। মার্কিন বাহিনী জমিতে কাজ করা কৃষক, রাস্তায় খেলাধুলা করা শিশু, যুদ্ধে পালিয়ে যাওয়া নিরীহ পরিবারের ওপর গুলি চালিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইরাক থেকে আফগানিস্তান, সিরিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত, ২০ বছরেরও বেশি সময়ে, মার্কিন বাহিনীর ৯০ হাজারেরও বেশি বোমা হামলায় অন্তত ৪৮ হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

 

আরো খারাপ ব্যাপার হল, এসব অপকর্মের পর পশ্চিমা দেশগুলো অপরাধ গোপন করতে চেয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ‘বিদেশে কার্যক্রম প্রস্তাব’ জারি করেছে, বিদেশে গুরুতর অপরাধ করা সেনাদের আশ্রয় দিয়েছে। মার্কিন সরকার আফগান যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর অপরাধ তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের কর্মীদের শাস্তি দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া সবসময় ‘মানবাধিকারের’ কথা বলে। অথচ তারা কীভাবে বিদেশে এত বেশি অপরাধের ব্যাখ্যা দেবে? জেনিভা কনভেনশনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, যুদ্ধে নিরীহ মানুষ হত্যা করা, হুমকি, নির্যাতন ও বহিষ্কার করা নিষিদ্ধ। যারা যুদ্ধে অংশ নেয় নি, তাদেরকে মানবিক মর্যাদা দেওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া এই কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ। তবে, তাদের আচরণ হল গোটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তাদের ন্যায়বিচার করা উচিত।

(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)