প্রথমার্ধে চীনের আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে ৯.৪ শতাংশ
2022-07-18 15:09:53

সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসনের মুখপাত্র লি খুই ওয়েন ২০২২ সালের প্রথমার্ধের আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। শুল্ক বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রথমার্ধে চীনের মালামাল মোট বাণিজ্যিক আমাদনি-রপ্তানি মূল্য ছিল ১৯.৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.৪ শতাংশ বেশি। আসিয়ান অব্যাহতভাবে চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বৈদেশিক বাণিজ্য স্থিতিশীল বৃদ্ধির প্রবণতা বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

শুল্ক বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য রপ্তানি ছিল ১১.১৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩.২ শতাংশ বেশি। আমদানি ছিল ৮.৬৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৮ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য টানা ৮টি প্রান্তিকে তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি বজায় ছিল, বৈদেশিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধিও বাস্তবায়িত হয়েছে। যা সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল করার জন্য অবদান রাখছে। ইউনিভার্সিটি অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের (ইউআইবিই) আন্তর্জাতিক অর্থনীতি গবেষণালয়ের প্রধান সাং বাই ছুয়ান বলেন, কোভিড মহামারীর ঝুঁকিতে এ রকম ফলাফল খুবই মূল্যবান। বৈদেশিক বাণিজ্যের ধারাবাহিক বৃদ্ধি চীনের অর্থনীতির সাধারণ সমবেত করতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা ভূমিকা পালন করেছে। বৈদেশিক বাণিজ্য চীনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।

 

রাষ্ট্রীয় তথ্য কেন্দ্রের অর্থনীতি পূর্বাভাস বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি গবেষণা অফিসের পরিচালক ইয়ান মিন বলেন, প্রথমার্ধে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের স্থিতিশীল বৃদ্ধি বাস্তবায়িত হবার সঙ্গে গুণগতমানও স্পষ্ট উন্নত হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্য সত্ত্বা প্রাণশক্তির ধারাবাহিক বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক পদ্ধতিও আরো বহুমুখী হয়েছে। যা পুরোপুরিভাবে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের শক্তিশালী বলিষ্ঠতা ও সামগ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্ষমতা তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চীনা অবদান রাখা হয়।

 

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রথমার্ধে আসিয়ান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রে চীনের আমদানি-রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ১০.৬, ৭.৫ ও ১১.৭ শতাংশ বেড়েছে। আসিয়ান অব্যাহতভাবে চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল এবং চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যিক মোট পরিমাণের ১৪.৯ শতাংশ দখল করেছে। একই সময় “এক অঞ্চল এক পথ” বরাবর দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.৮ শতাংশ বেড়েছে, আরসিইপি’র অন্য ১৪টি সদস্য দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি ছিল ৬.০৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৬ শতাংশ বেশি। ইউআইবিই’র আন্তর্জাতিক অর্থনীতি গবেষণালয়ের প্রধান সাং বাই ছুয়ান বিশ্লেষণ করে বলেন, চীন-আসিয়ান এবং চীন-মার্কিন বাণিজ্যিক বৃদ্ধি গতির নেতৃত্বাধীন হওয়ায় দু’পক্ষের অর্থনৈতিক শক্তিশালী পরিপূরকতার প্রতিফলন হয়েছে। তিনি বলেন, শিল্প চেইন, সরবরাহ চেইন এবং মূল্য চেইনে চীন ও আসিয়ানের মধ্যে পরিপূরকতা খুবই স্পষ্ট। সুতরাং দু’পক্ষের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে উঁচু বৃদ্ধি বজায় ছিল। চীন-মার্কিন বাণিজ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গুরুতর মুদ্রাস্ফীতি হবার কারণ ঘনীভূত শ্রম ধরণের বিশেষ করে সস্তা ও উচ্চ মানের পণ্যের প্রতি জোরালো চাহিদা বজায় আছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানিও বৃদ্ধি প্রবণতা বজায় ছিল। এছাড়া, চীনের অর্থনৈতিক কাঠামো উন্নততর প্রক্রিয়ায় মার্কিন উচ্চ প্রযুক্তির চাহিদাও উঠতি ছিল। চীন-মার্কিন সম্পর্ক অনিশ্চিত ঝুঁকি কমানোর পরিস্থিতিতে অব্যাহতভাবে সুষ্ঠু প্রবণতা বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

সাং বাই ছুয়ান আরো বলেন, চীন ও “এক অঞ্চল এক পথ” বরাবর দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক বৃদ্ধি স্পষ্টভাবে প্রথমার্ধে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের সামগ্রিক বৃদ্ধির চেয়ে বেশি। এটা প্রতিফলিত হয়েছে যে, চীন ও “এক অঞ্চল এক পথ” বরাবর দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থিতিশীল, ভবিষ্যতে উন্নয়নের সুপ্তশক্তি অপরিসীম।

 

দ্বিতীয়ার্ধে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসনের মুখপাত্র লি খুই ওয়েন বলেন, অব্যাহতভাবে স্থিতিশীল বৃদ্ধি বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে কোভিড মহামারী ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ আরো গুরুতর ও জটিল। চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যিক উন্নয়ন এখনও কিছু অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত উপাদানের সম্মুখীন হচ্ছে, স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং গুণগতমান বাড়ানোর অনেক চাপ আছে। কিন্তু চীনের অর্থনৈতিক বলিষ্ঠতা শক্তিশালী, সুপ্তশক্তি যথেষ্ঠ, দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক মৌলিক বিষয় পরিবর্তন হয়নি। দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করা সংক্রান্ত এক গুচ্ছ নীতি ও ব্যবস্থার কার্যকর করার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ও উত্পাদন পুনরুদ্ধার সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের স্থিতিশলী বৃদ্ধি বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

সাং বাই ছুয়ান মনে করেন, মহামারীর প্রশমন এবং সরকারী অবকাঠামো বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার সঙ্গে সঙ্গে চীন বৈদেশিক বাণিজ্যের স্থিতিশীল বৃদ্ধি প্রবণতা বজায় রাখতে পারবে। তিনি বলেন, মহামারী প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হবার পরিস্থিতিতে মহামারী প্রশমিত হয়ে পুরো পণ্যভোগ ও কর্মসংস্থান তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হয়। এটা বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য একটি সহায়ক। বিশেষ করে, অবকাঠামো ক্ষেত্রে সরকারের বিনিয়োগ ত্বরান্বিতকরণ অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও পণ্যভোগের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য একটি সুষ্ঠু ভিত্তি স্থাপন করা যায় এবং পুরো বিনিয়োগ ও পণ্যভোগের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সুষ্ঠু সামষ্টিক শর্ত পাওয়া যাবে।

 

(প্রেমা/এনাম)