চীনা অর্থনীতির প্রথমার্ধের প্রতিবেদন প্রকাশিত
2022-07-18 14:54:03

সুধীমণ্ডলী, কেমন আছেন? আমি ওয়াং তান হোং রুবি। সুদূর বেইজিং থেকে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিটি দুই ইউয়ান মূল্যের তিনটি আইসক্রিম কিনতে আমার কেবল ০.৯৬ ইউয়ান লেগেছে। কল্পনা করতে পারেন কি? গতকাল আমি এটা করেছি। কারণ ৫.০৪ ইউয়ান মূল্যের এটি কুপন আমি পেয়েছি। তাই এত অল্প মূল্যে আমি আইসক্রিম কিনতে পেরেছি। সম্প্রতি ভোগ চাঙ্গা করার জন্য বেইজিং ১০ কোটি ইউয়ান মূল্যের কুপন বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসলে এর আগে চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষার লক্ষ্য চীন সরকার ৬টি ক্ষেত্রে ৩৩টি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার ফলাফল সম্প্রতি দেখা দিয়েছে।

 

গত ১৫ জুলাই চলতি বছরের প্রথমার্ধের চীনের অর্থনীতি-বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এসময়ে জিডিপির পরিমাণ ছিল ৫৬,২৬,৪২০ কোটি ইউয়ান, যা তার আগের বছরের একই সময়ের তুলায় ২.৫ শতাংশ বেশি।  প্রথম প্রান্তিকে বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৮ শতাংশ এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে ০.৪ শতাংশ। ফলে ২.৫ শতাংশ  বেশি মাত্রিক চাপে এ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০২২ সালের শুরু থেকে করোনা মহামারির পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। গত মার্চ মাসে চীনের বেশ কয়েকটি প্রদেশে, বিশেষ করে ইয়াং চি নদীর বদ্বীপে, করোনা পরিস্থিতি গুরুতর হয়েছিল, যা চীনের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ব্যাপক আঘাত হানে। সারা বিশ্বে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে  জ্বালানি ও খাদ্যসহ নানা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লজিস্টিক ও সরবরাহ চেইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। কিছু পশ্চিমা দেশ চীনের অর্থনীতির মন্দাবস্থার কথা প্রচার করছে। তবে নানা কঠিনতার পরীক্ষায় চীনের অর্থনীতির প্রবণতা এবং চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের মূল দিক পরিবর্তন হয়নি।

 

 চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মুখপাত্র ফু লিং হুই বলেন, বিগত দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতির ওপর কুপ্রভাব কল্পনার বাইরে থাকা সত্ত্বেও গতিশীল দিক থেকে যদি বলি,  গত এপ্রিল মাসে অর্থনীতির মূল সূচক গভীরভাবে হ্রাস পেয়েছে। সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাষ্ট্রীয় পরিষদ তাতে সচেতন হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য দ্রুত গণমুখী টেলিভিশন সম্মেলনের আয়োজন করে সরকার। পাশাপাশি, সরকার ৬টি ক্ষেত্রে ৩৩টি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আর সেসব ব্যবস্থার সাফল্য প্রাথমিকভাবে দেখা দিয়েছে।

 

 

গত জুন মাসের শুরুতে চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার অধিক দ্রুত হয়েছে। বিশেষ করে এক সময়ের করোনা পরিস্থিতির গুরুতর অঞ্চলে স্বাভাবিক জীবন-যাপন ও উদযাপনে ফিরে আসে। মহামারি পরিস্থিতি ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনেক বেড়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে কুপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলে ভোগের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। দক্ষিণ থেকে উত্তর, সড়ক-মোড় থেকে সরু গলি পর্যন্ত নানা দোকানপাট আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সির ওয়েবসাইটে বিমান টিকিট ও হোটেল সম্পর্কিত সার্চ অনেক বেড়েছে। গ্রীষ্মকালীন পর্যটন বাজারে উত্তাপ দেখা দিয়েছে। গত জুন থেকে বিভিন্ন স্থানের কারখানার স্থিতিশীল পুনরুদ্ধার হয়েছে। শাংহাই আটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রির লিন কাং শাখায় উত্পাদনের কার্যকারিতা চলতি বছরের শুরুর সমান হয়েছে।

 

বৈদেশিক বিনিয়োগ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে সারা চীনে বৈদেশিক বিনিয়োগের বাস্তব ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৫৬,৪২০ কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.৩ শতাংশ বেশি। বিদেশি ব্যবসায়ীরা বাস্তব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে চীনা অর্থনীতির পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাতে তাদের চীনের অর্থনীতির দীর্ঘকালীন ভালো থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রতিফলিত হয়েছে।

 

নানা কঠিনতা কাটিয়ে চীনের অর্থনীতি অল্প সময়ের মধ্যে স্থিতিশীল বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে চীনের অর্থনীতির শক্তিশালী বলিষ্ঠতা ও সম্ভাবনাময় প্রবণতা দেখা দিয়েছে। চীনের অর্থনীতির টেকসই ও সুস্থ উন্নয়নের প্রবণতা এবং গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়নের উপাদন ও শর্ত পরিবর্তন হয়নি। সেগুলোতে আমরা আস্থাশীল এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

 

(রুবি/এনাম/শিশির)