জুলাই ১৮: চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, প্রথমার্ধে চীনের জিডিপি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৃদ্ধির হার ০.৪ শতাংশ। বর্তমানে আন্তর্জাতিক পরিবেশ আরো জটিল ও কঠোর হচ্ছে, চীনের বিভিন্ন স্থানে বার বার করোনাভাইরাসের মহামারি দেখা যায়। এমন প্রেক্ষাপটে, চীনের অর্থনীতি চাপের মধ্যেও প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়ন করেছে।
বছরের প্রথমার্ধে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এমন ফলাফল অর্জন করা সহজ ব্যাপার নয়। জটিল ও কঠোর দেশ-বিদেশের উন্নত পরিবেশে চীন মহামারি প্রতিরোধ এবং অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নের সমন্বয় করে কার্যকরভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। চীন সবসময় জনগণকে শীর্ষস্থানে রাখা এবং প্রাণকে শীর্ষস্থানে রাখার নীতি অনুসরণ করে দৃঢ়ভাবে মহামারি প্রতিরোধ করেছে এবং প্রতিরোধের সুফল সুসংবদ্ধ করেছে। জনগণের প্রাণ ও স্বাস্থ্য রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। এর ফলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক জন ওয়াল বলেছিলেন, চীনের মহামারি প্রতিরোধ নীতি একদিকে প্রাণ রক্ষা করেছে, অন্যদিকে অর্থনীতি রক্ষা করেছে। বলা যায়, উভয়ের কল্যাণ বাস্তবায়ন করেছে। অনেক আন্তর্জাতিক ব্যক্তি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় চীনা অর্থনীতির সুপ্তশক্তি অনেক।
চীনের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ করতে সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। মহামারির প্রভাব অল্প সময়ের। চীনা বাজারে দীর্ঘস্থায়ী সমৃদ্ধ উপাদান রয়েছে এবং বিশাল আকারের বাজার সুবিধা আছে। ভোগ পুনরুদ্ধার, উত্পাদনের বাড়ানো, উদ্ভাবনী শক্তি জোরদার, সামষ্টিক নীতির বাস্তবায়নের সঙ্গে চীনা অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়ন সম্ভব। আর চীন সার্বিকভাবে উন্নয়নের নতুন চিন্তাধারা বাস্তবায়ন করছে, উন্নয়নের নতুন কাঠামো গঠন দ্রুততর করছে, উচ্চ মানের উন্নয়ন জোরদার করছে। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন সুবিধা তৈরি হচ্ছে, উন্নয়নের নতুন চালিকাশক্তি বাড়ছে, যা চীনা অর্থনীতির টেকসই সুষ্ঠু উন্নয়নে অবিচ্ছিন্ন শক্তি যোগাচ্ছে।
চীনের অর্থনীতির দীর্ঘস্থায়ী সুষ্ঠু উন্নয়নের প্রবণতার পরিবর্তন হয় নি। বিশ্ব অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে চীনের অবস্থান পরিবর্তন হয় নি। চীনের অর্থনীতির ভবিষ্যত্ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সমাজের আস্থা পরিবর্তন হয় নি।
এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে চীনের আকৃষ্ট বৈদেশিক পুঁজির পরিমাণ ৮৭.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২.৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রথম চার মাসে চীনের নতুন করে চুক্তি করা- ১০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের বড় প্রকল্পের সংখ্যা ১৮৫টি। অর্থাৎ গড়ে প্রত্যেক দিনে ১.৫টি বড় প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি হ্রাসের ঝুঁকি বাড়ছে, প্রধান অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর নীতি আরো সংকোচিত হচ্ছে। বাহিরের অস্থিতিশীল উপাদান বেড়ে যাচ্ছে। চ্যালেঞ্জ ও কঠিনতার সামনে চীন আরও ভালোভাবে নিজের কাজ করবে। মার্কিন ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়, চীনের মুদ্রাস্ফীতির চাপ আপাতত কম। তার মানে চীন আরো স্পষ্টভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গুরুত্ব দেবে। সই সঙ্গে চীন অব্যাহতভাবে উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করবে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের আমদানি-রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়িত হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.৪ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয়ার্ধে, দ্বিতীয় চীন আন্তর্জাতিক ভোগ্য পণ্য মেলা, ২০২২ সালের চীন আন্তর্জাতিক পরিষেবা বাণিজ্য মেলা এবং পঞ্চম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা অনুষ্ঠিত হবে। বাজারের সুবিধার ভিত্তিতে চীন অর্থনীতির টেকসই সুষ্ঠু উন্নয়ন জোরদার করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের জন্য আরো বেশি বাজারের সুযোগ, পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ এবং প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)