একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর গল্প
2022-07-17 06:36:37

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু এনাম ও আকাশ।


আকাশ: এনাম, জুন মাসের শেষ দিকে সাধারণত চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে স্নাতক হয়ে থাকেন। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বছরের কোন সময়ে তাদের পড়া-লেখা শেষ করেন? এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন? 

এনাম:..

আকাশ: তাহলে আজ আমরা স্নাতক হওয়া নিয়ে একটি গল্প আমাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করব, কেমন?


গত ২২ জুন চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এর মধ্যে একজন ছাত্র হুইলচেয়ারে করে এসেছেন। তার সহপাঠীরা তাকে একটি ডাকনাম দিয়েছেন, আর তা হচ্ছে ‘হুইলচেয়ার সুপার ছাত্র’। তার আসল নাম চাং চি ফান। 


তেইশ বছর বয়সী চাং চি ফান উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ব্যবস্থাপনা ইনষ্টিটিউট থেকে স্নাতক হয়েছেন। প্রাথমিক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালে তিনি রোগের কারণে হুইলচেয়ার ব্যবহারে বাধ্য হন। পেশীর দুর্বলতার কারণে তিনি কিছুটা ধীরে চীনা হরফ লেখেন তার সহপাঠীদের চেয়ে । স্কুলে থাকার সময় তিনি আরো অনেক সমস্যার মুখে পড়েছেন। 


কিন্তু শরীরের কষ্ট তাকে দমাতে পারেনি। তিনি সবসময় ইতিবাচক মনোভাব বজায় রেখে আসছেন। তিনি কখনোই লেখাপড়া ছেড়ে দেননি। চাং চি ফানের মুখে সবসময় উষ্ণ হাসি লেগে থাকে। তিনি কখনো জীবনের কষ্ট ও অন্যায় অভিযোগ করেননি। তিনি সবসময় প্রচেষ্টা চালাতে এবং তার ভাগ্যের সাথে লড়াই করতে থাকেন। 


চাং চি ফান জানান, যে শব্দ তিনি সবচেয়ে বেশি বলতে চান, তা হচ্ছে “কৃতজ্ঞতা”। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় যেসব সুবিধা আমাকে প্রদান করেছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। শিক্ষক ও সহপাঠীরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার বাবা-মা আমার জন্য যা করেছেন, তার জন্য আমি তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ’। 


তার সুবিধার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে তার আবাসিক হল, ক্লাসরুম ও পরীক্ষা নেয়ার ঘরকে নিচ তলায় ব্যবস্থা করেছে। তার যত্ন নিতে তার মা আসতে চাইলে তাও বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন করেছে। 

মায়ের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আম্মু আমাকে কখনো ছেড়ে যাননি। কলেজের ভর্তি পরীক্ষার আগে তার আরো বেশি যত্ন নেয়ার জন্য তার মা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। 


তিনি বলেন, ‘আম্মু আমার জন্য অনেক করেছেন। তিনি আমার হাত ও পায়ের মত। আমি আশা করি, একদিন আমি নিজেকে সাহায্য করতে পারব, তখন আমার পরিবারের চাপ একটু কমে যাবে’। 


তার স্বপ্ন হচ্ছে লব্ধ জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করা। সমাজ সেবার মাধ্যমে নিজের জীবনের মূল্যবোধের বাস্তবায়ন করা।