বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের মধ্যেই ডেঙ্গু, মৌসুমী সর্দি-জ্বর আর শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে ব্যাপকহারে। করোনা সংক্রমণের হার এখনো দুই অংকের ওপরে। এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। আর মৌসুমী সর্দি-জ্বর আর শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বহু রোগী। বলতে গেলে এখন ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশির রোগী। মানুষজন বুঝতে পারছেন না এ অসুস্থতা কোভিডজনিত না মৌসুমী সর্দি-জ্বর এটি।
গত কয়েক দিনের হিসেবে দেখা যাচ্ছে করোনা সংক্রমণের হার ওঠানামা করলেও তা এখনো দুই অংকের ওপরে রয়েছে। ১০ জুলাই ইদের দিন শনাক্ত হার ছিল ১৭.৪৭ শতাংশ। পরদিন তা নেমে আসে ১৩.১৮ শতাংশে। ১২ জুলাই কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩.৭৮ শতাংশে। তিন দিন পর ১৫ জুলাই এ হার কমে ১১.৫৫ শতাংশ হয়। ১৬ জুলাই এ হার বেড়ে ফের ১৩.৭৭ শতাংশে দাঁড়ায়। দেখা যাচ্ছে কম বেশি হলেও করোনার গড় শনাক্ত হার ১৩ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এটি করোনা সংক্রমণের গড় হার ১৩.৭৭ শতাংশের কাছাকাছি। এ ছাড়া জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬৩ জনের। মৃত্যু হার এখনো উর্ধ্বমুখী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার অমিক্রনের নতুন উপধরনের কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। কোরবানীর ইদের কারণে পশুর হাট এবং ঘরমুখো মানুষের ব্যাপক চলাচলের কারণে আগামী দিনগুলোতে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কা রয়েছে।
করোনার এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৭০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৮৯ জন। এর মধ্যে জুলাইয়ের ১৬ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮১ জন। অর্থাৎ চলতি বছর যত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন তার এক-তৃতীয়াংশই হয়েছেন জুলাইয়ের প্রথম ১৬ দিনে। ১৫ জুলাই ৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। ঠিক পরের দিন তা বেড়ে হয় ৬০- জন অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও আগেই জানিয়েছে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ গতবারের চেয়ে বেশি হবে। কারণ প্রাকবর্ষা জরিপে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার পরিমাণ গতবারের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে।
বর্তমানে সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রয়েছেন ২২০ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে রাজধানীর ৪৭টি হাসাপাতালে ১৭৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৮ জনই চিকিৎসা নিচ্ছেন মুগদা হাসপাতালে। আর ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ৪৪ জন। মোট রোগীর ৮৭ শতাংশই রাজধানীতে। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ৩৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে কক্সবাজারে। ময়মনসিংহে ৩ জন; মুন্সীগঞ্জ ও ভোলায় ২ জন করে। আর সাতক্ষীরা, নড়াইল, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে ১ জন করে রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আগামী দিনগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে এ কথা আন্দাজ করাই যায়।
আশার কথা ডেঙ্গু প্রতিরোধে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসি এরই মধ্যে ডেঙ্গু বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। সেখানে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ডেঙ্গু সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান ও অভিযোগ গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে।
এ ছাড়া ডিএনসিসি ১ থেকে ১৬ জুলাই ড্রোনের সাহায্যে ৭ হাজার ৭৮৬টি বাড়িতে জরিপ চালিয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৪৩টি বাড়িতে ছাদবাগান পাওয়া গেছে। আর ২২৮টি বাগানে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এ জন্য বাড়ির মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসি রোববার থেকে ডেঙ্গু বিষয়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে। ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনার পাশাপাশি ফগিং করে এডিস নিধনের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। তবে, দুই সিটি করপোরেশন সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে এডিস নির্মূলে আরও জোরালো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে ।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা বলা যায় যে দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি একটা উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। করোনা, সর্দি-জ্বর ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের জন্য বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যবিধি না মানাকে দায়ী করছেন। বলছেন করোনার মতোই ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রামক রোগ। এ পরিস্থিতি উত্তরণে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
জ্বর হলে উদ্বিগ্ন না হয়ে করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য কোনো ওষুধ খেতে বারণ করছেন তারা। কারণ, করোনা বা ডেঙ্গু না হলে সাধারণ সর্দি-জ্বর ৫ থেকে ৭ দিনেই সেরে যায়।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।