জুলাই ১৫: গত ১২ থেকে ১৩ জুলাই সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমুচি পরিদর্শন করেছেন। সিপিসির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর এটি সি চিন পিংয়ের দ্বিতীয় সিনচিয়াং সফর।
সিনচিয়াংয়ের কথা সবসময় গভীরভাবে সি চিন পিং’র মনে পড়ে। গত শতাব্দীর ৮০-এর দশকের শুরুতে সি চিন পিং সিনচিয়াং পরিদর্শন করেছেন। তার পরে ২০০৩, ২০০৯, ও ২০১৪ সালে তিনি সিনচিয়াং পরিদর্শন করেছেন।
এবারের সফরে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর এলাকা, একটি আবাসিক কমিউনিটি, এবং একটি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
গত ১২ জুলাই সকালে সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা ও উন্নয়নের বিষয়ে তিনি খুঁজ-খবর নিয়েছেন।
১৯৬০ সালে সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। ‘মার্কসবাদের তত্ত্ব’ সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার অনেক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত, ইউ সিউ সং ও লিন চি লু সহ একাধিক সিপিসি সদস্য সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন।
ইউ সিউ সং ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন সেমিস্টারের প্রথম ক্লাসে শিখিয়েছেন। পাঠ্যবই ছিল তাঁর নিজের রচিত ‘১৯১১ সালেন বিপ্লবের শিক্ষাসমূহ’।
লাল রক্ত ধারন করা থেকে নানা দিক সি চিন পিং সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনকালে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা ও উন্নয়নে ফোকাস করেন।
সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করার পর সি চিন পিং উরুমুচি আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর এলাকায় যান। এটি হচ্ছে প্রথম প্রতিষ্ঠিত স্থল বন্দর সমূহের অন্যতম। এটি জাতীয় পরিবহন কেন্দ্র। সিল্ক রোড় ইকোনমিক বেল্টের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং প্রকল্প এটি।
এখানে সি চিন পিং বলেন, ‘এক অঞ্চল এক পথ” উদ্যোগ-বিষয়ক অভিন্ন নির্মাণ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাতে সিনচিয়াং একটি মূল এলাকা এবং কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তোমরা ইতোমধ্যে অনেক সুফল অর্জন করেছ, আরো সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। উজ্জ্বল ভবিষ্যত অবশ্যই রয়েছে।
উন্নয়ন হচ্ছে সিনচিয়াংয়ের দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও সুশৃঙ্খলার গুরুত্বপূর্ন ভিত্তি। সিনচিয়াংয়ের ভৌগলিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে গণকল্যাণ বৃদ্ধি ও সিনচিয়াংয়ের সমৃ্দ্ধির জন্য আরো সুযোগসুবিধা সৃষ্টি করতে হবে। এজন্যই সি চিন পিং এ বন্দর পরিদর্শন করেছেন।
গত ১৩ জুলাই সকালে সি চিন পিং কু ইয়ান সিয়াং আবাসিক কমিউনিটি পরিদর্শন করেন। এখানে জাতিগত একতা ও অগ্রগতির বিষয়ে তিনি খুঁজ-খবর নিয়েছেন।
কু ইয়ান সিয়াং আবাসিক কমিউনিটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন এখানে মোট ১,৭৫০টি পরিবার রয়েছে। মোট ৪,৬৩৫ জন মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে সংখ্যালঘু জাতির অধিবাসীদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশেরও বেশি।
কু ইয়াং সিয়াং বয়স্ক ও বাচ্চাদের সেবা প্রদান করে আসছে। তা স্থানীয়ভাবে অনেক বিখ্যাত। এখানে বয়স্কদের জন্য ডে-টাইম কেয়ার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তাতে চিকিত্সা, বিনোদন ও খাবারসহ নানা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এখানে কিশোরদের বাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাতে চারুলিপি ও নৃত্যসহ নানা কার্যক্রম আয়োজন করা হচ্ছে।
কু ইয়ান সিয়াং কমিউনিটিতে সি চিন পিং বলেন, আবাসিক কমিউনিটি-বিষয়ক কাজের উপর আমি অনেক গুরুত্ব দিই। তৃণমূলে আমাদের নানা কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে হবে। জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশা অনুসারে আমাদের কাজ করতে হবে।
উরুমুচিতে সি চিন পিং সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন। ১৯৫৯ সালে এ জাদুঘরের নির্মাণ সম্পন্ন হয়। তার মোট আয়তন হচ্ছে ৪৯.৬ হাজার বর্গমিটার।
জাদুঘরে এখন ‘সিনচিয়াংয়ের ঐতিহাসিক স্মারক প্রদর্শনী’ চলছে। প্রদর্শনীর আয়তন তিন হাজার বর্গমিটার। এতে মোট ১,৭০০টিরও বেশি স্মারক প্রদর্শন করা হচ্ছে। তা চীনা জাতির বিনিময়ের ইতিহাস প্রদর্শন করছে। এটি প্রমাণ করেছে, প্রচীনকাল থেকেই সিনচিয়াং চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সি চিন পিং কিরগিজ জাতির বীরোচিত মহাকাব্য তথা ‘মানস’ উপভোগ করেছেন। তিনি বলেন, এসব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হচ্ছে চীনা জাতির অমূল্য সম্পদ। তাদের সুষ্ঠুভাবে রক্ষা করতে হবে।
‘আইন অনুসারে সিনচিয়াংকে শাসন, একতার মাধ্যমে সিনচিয়াংয়ের স্থিতিশীলতা জোরদার, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, গণজীবনের মানের উন্নতি করা , দীর্ঘমেয়াদে সিনচিয়াংকে নির্মাণ করা।’ দু’বছর আগে সিনচিয়াং-বিষয়ক একটি সভায় সিপিসির নতুন যুগের সিনচিয়াং শাসন করার এ কৌশল ও নীতি নির্দিষ্ট করা হয়। এবারের সি চিন পিংয়ের সফর এ কৌশল ও নীতির একটি সার্বিক ও সঠিক ব্যাখা ও প্রদর্শন।
(আকাশ/এনাম/রুবি)