বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হঠাৎ পতন
2022-07-15 17:13:03

সম্প্রতি বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে আমদানির অর্থ বাবদ ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভের এই পতন হলো। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬.১৫ বিলিয়ন ডলার। গত দুই বছর ধরে রিজার্ভের এই পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলারের উপরে ছিল। তবে, এই প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে আসায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বেড়ে গেছে ডলারের দাম এবং কমেছে টাকার মান।

 

হঠাৎ কেন এই সংকট তৈরি হলো? এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুতে আমদানি পণ্যের মূল্য পরিশোধ করা বাংলাদেশের একটি নিয়মিত কর্মসূচি। দেখা যাচ্ছে, মাসের পর মাস রেমিট্যান্স কমায় ও আমদানি ব্যয় বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে। এখন তা কমে গত ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে আমদানি ব্যয় আরও বাড়ছে। আগামী মাসগুলোতে আমদানি ব্যয় আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেখা যায়, বাংলাদেশ গত সপ্তাহে এসিইউ এর সঙ্গে ১.৯৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমদানি অর্থ পরিশোধ করেছে। এসিইউ ব্যবস্থার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি আঞ্চলিক লেনদেনের জন্য আমদানি পেমেন্ট নিষ্পত্তি করে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এসিইউ-এর সদস্য। ইরানের রাজধানী তেহরানে এর সদর দপ্তর। এই ব্যবস্থায় দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, গত কয়েক মাসে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নামলো। এর আগে ধারাবাহিকভাবে তা বাড়ছিল। আজ থেকে ১০ বছর আগে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে তা হয় ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। দেখা গেছে গত কয়েক মাসে ধরে সেই সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রা ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত বছরের আগস্ট থেকেই রিজার্ভ কমা শুরু হয়েছে। টানা ১১ মাস ধরে কমছিল। সে সময়ে ৬১৯ কোটি ডলার কমেছে। এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে রিজার্ভ তিন হাজার কোটি ডলারের বৃত্ত পার হয়ে চার হাজার কোটি ডলারের ঘরে প্রবেশ করে। চলতি বছরের শুরুতে দেশে বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে, প্রণোদনা বাড়ানোসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও প্রতিদিনই কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম।

পাশাপাশি, আমদানি বেড়ে যাওয়া ও প্রবাসী আয় কমার কারণে দেশে মার্কিন ডলারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে দাম। অপরদিকে ডলারের বিপরীতে পতন হচ্ছে টাকার মান।

তবে, রিজার্ভে এই ধস ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংকারদের বিদেশ ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা, রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া, দেশে বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি কমানো ইত্যাদি। পাশাপাশি, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যয় সঙ্কোচন নীতিসহ নানা ধরনের সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। দেশের জনগণকেও সাশ্রয়ী হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু, এত কিছুর পরেও গত কয়েক মাস ধরে রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের তুলনায় আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণেই হঠাত্ করে চাপ পড়েছে দেশের রিজার্ভে এবং কমে গেছে তার পরিমাণ।