আজকের টপিক: পদত্যাগের পর পুরোপুরি রাজনীতি ছাড়ার কথা ভাবছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন
2022-07-13 11:31:31

জুলাই ১৩: ব্রিটিশ ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ অনুসারে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন তাঁর দলের সহকর্মী ও মন্ত্রিপরিষদের সহকারীদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়ার পর নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। এমনকি, তিনি পুরোপুরি রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথাও বিবেচনা করছেন।


ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত ৭ জুলাই লন্ডনের ‘থাং নিং’ রাস্তার ১০ নম্বর গেটের সামনে এক বক্তৃতায় বলেন, তিনি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন, তবে নতুন নেতা নির্বাচিত না-হওয়া পর্যন্ত তিনি এই পদে থাকবেন। এর আগে, গত ৫ জুলাই থেকে একের পর এক মন্ত্রীসহ কয়েক ডজন ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী কেন পতত্যাগ করেছেন? আমরা ব্রিটিশ পোলিং এজেন্সি ‘YouGov’র সম্প্রতি প্রকাশিত এক সর্বশেষ জনমত জরিপের ফল থেকে এ প্রশ্নের উত্তর পেতে পারি।

 

জরিপ অনুসারে, ব্রিটেনের প্রায় ৭০ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন যে, জনসনের পদত্যাগ করা উচিত। ব্রিটিশ কনজারভেটিভ ভোটারদের মধ্যে, গত ৯ জুন থেকে জনসনকে সমর্থন করে না এমন ভোটারের সংখ্যা ২০ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ৫৪ শতাংশ হয়। কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেও এই প্রথম জনসনকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানানোর সংখ্যা অর্ধেক ছাড়িয়ে যায়।

 

প্রধানমন্ত্রী জনসনকে কী কী সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে?

 

‘কিছু বিশ্লেষক বলছেন যে, কিছু সময়ের জন্য, জনসন ‘পার্টিগেট’ কেলেঙ্কারিতে, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচনে পরাজয় এবং অনুপযুক্ত নিয়োগের গোলযোগের ত্রিবিধ সংকটের শিকার হন। যার ফলে কনজারভেটিভের মধ্যে তার পদত্যাগের পক্ষে সমর্থন বেড়েছে। বিপুলসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তার পদত্যাগ জনসনকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ অবস্থায় সরকার নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে না। এ সব কারণেই মূলত তাকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হয়।’

 

আসলে এই তিনটি সংকট ছাড়াও, কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতা এবং ব্রেক্সিট থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসায় ব্রিটেনের অর্থনীতি আরও দুর্বল হওয়াও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পেছনে কাজ করে বলে অনেকে বিবেচনা করেন।


প্রথমত, জনসন নিজেই কেলেঙ্কারিতে আচ্ছন্ন। জনসনকে ব্রিটিশ মহামারী প্রতিরোধের নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য দলের মধ্যেই অনাস্থা ভোটের সম্মুখীন হয়েছিলেন। যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত এ সংকট কাটিয়ে ওঠেন। ৪০ শতাংশের বেশি কনজারভেটিভ এমপি অনাস্থা ভোট দিলেও তিনি টিকে যান। দ্বিতীয়ত, ব্রেক্সিটের পর, জনসনের নেতৃত্বে, ব্রিটিশ অর্থনীতি উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সংকটে পড়ে। গত ২২ জুন ব্রিটিশ রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ব্রিটেনে গত মে মাসের ভোক্তা মূল্যসূচক–সিপিআই আগের মাসের ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৯.১ শতাংশে, যা ১৯৮২ সালের মার্চের পর সর্বোচ্চ।

 

ব্রিটেন কয়েক দশক সবচেয়ে গুরুতর সংকটে রয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ডপরিমাণ বেড়েছে এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এ অবস্থায় বরিস জনসনের পক্ষে পদত্যাগ না-করে কোনো বিকল্প ছিল না। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই )