জুলাই ১২: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ সপ্তাহে ইসরাইল, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এবং সৌদি আরব সফর করবেন। দেশের ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি তাঁর প্রথম মধ্যপ্রাচ্য সফর। গত ৯ জুলাই প্রেসিডেন্ট বাইডেন ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত প্রবন্ধে বলেন, এবারের সফর যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ পাশাপাশি তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রক্রিয়ায় জয়ী হবে যুক্তরাষ্ট্র’।
প্রবন্ধে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অনেক শব্দ ব্যাবহারে করে এবারের মধ্যপ্রাচ্য সফরের লক্ষ্য ব্যাখ্যা করেছেন। তবে, সংবাদমাধ্যম সিএনএন (CNN) মনে করে, কোনো শব্দ দিয়ে বাস্তবতা আড়াল করা যায় না। তা হলো- যদি রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষের কারণে বৈশ্বিক তেল বাজারের অশান্তি দেখা না দিত, তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই মধ্যপ্রাচ্য সফরে যেতেন না।
বর্তমান বিশ্ব বাজারে, তেলের দাম হু হু করে বাড়ছে। ৪০ বছরের সবচেয়ে কঠিন মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিচ্ছে। মার্কিনীরা অর্থনৈতিক মন্দার জন্য দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এসব অবস্থা নির্বাচনের আগে বাইডেন প্রশাসনের ওপর পাহাড়ের মত চাপ সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি অনলাইন জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৯ তারিখ পর্যন্ত, বাইডেনের প্রতি সমর্থনের হার সবচেয়ে কমে এসেছে। এ সমস্যা মোকাবিলার একটি মৌলিক উপাদান হতে পারে তেল-সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাইডেন কেন এ সফরকে চীনের সঙ্গে জড়াতে চান? এর অনেক কারণ রয়েছে।
এখন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে, একটি বিকৃত ধারণা রয়েছে, তা হলো চীনকে বৃহত্তম ‘রাজনৈতিক শত্রু’ বানানো। চীন-বিরোধী কোন ব্যাপার হলে, তা যুক্তিসঙ্গত হয়। প্রজেক্ট সিন্ডিকেট ওয়েবসাইটের এক প্রবন্ধে বলা হয়, যদি প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর সৌদি আরব সফরযাত্রাকে চীনের বিরুদ্ধে ‘নতুন স্নায়ুযুদ্ধে’ জয়ী হওয়ার বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করেন, তাহলে তিনি দেশে কিছু সমর্থন পাবেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর প্রবন্ধে আরো জানান, রাশিয়াকে মুকাবিলা ও চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। এতে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যকে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতার একটি মঞ্চে পরিণত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতাগ্রহণের এক বছরে, তারা বৈশ্বিক কৌশলগত ফোকাস এশিয়া ও প্রশান্ত অঞ্চলে স্থানান্তর করেছে। তাদের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক নীতি বেশি সাফল্য দেয়নি। ইরানের সার্বিক পরমাণু চুক্তির আলোচনা কোনো ফলাফল দেয়নি, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পর নিরাপত্তা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
সেই সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে, মধ্যপ্রাচ্য চীনের সঙ্গে সহযোগিতায় নতুন ফলাফল অর্জন করছে। ২০০০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের পরিমাণ ২০.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৪.৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। পাশাপাশি, সৌদি আরবের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৬৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ সৌদি আরবের ‘২০৩০ পরিকল্পনা’র সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। যা সৌদি আরবের উন্নয়নে নতুন সুযোগ বয়ে এনেছে। এসব বিষয়ে কিছু মার্কিন রাজনীতিক অনেক ঈর্ষান্বিত। তারা দুশ্চিন্তা করছে যে- মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব কমে যাবে।
এবারের মধ্যপ্রাচ্য সফরে চীনবিরোধী ‘ছোট জোট’ সৃষ্টি করাসহ নানা লক্ষ্য বাস্তবায়ন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য সহজ হবে না। কারণ কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের জন্য নিজের স্বার্থ ত্যাগ করবে না। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফর আবারও প্রমাণ করবে যে, যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য আর বজায় নেই।
(আকাশ/তৌহিদ/রুবি)