জুলাই ১১: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে জি-টোয়েন্টি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার পর, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’দেশ মনে করে, এবারের বৈঠক ছিল বাস্তবমূখী ও গঠনমূলক এবং সার্বিকভাবে ফলপ্রসূ। বৈঠকের ফলে দু’দেশের পারস্পরিক সমঝোতা বেড়েছে, মতভেদ কমেছে, এবং ভবিষ্যতে দু’দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
১০ই জুন থেকে এ পর্যন্ত গত এক মাসে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ হয়েছে পাঁচ বার। গত ১০ই জুন চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেং হ্য ও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সিঙ্গাপুরে আয়োজিত ১৯তম শাংরি-লা সংলাপের সময় বৈঠক করেন। ১৩ই জুন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় পলিট ব্যুরোর সদস্য ও বৈদেশিক কর্মকমিশন কার্যালয়ের মহাপরিচালক ইয়াং চিয়েছি লুক্সেমবার্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠক করেন। ৫ই জুলাই চীনা উপপ্রধানমন্ত্রী ও চীন-মার্কিন সার্বিক অর্থনৈতিক সংলাপের চীনা পক্ষের প্রধান লিউ হ্যে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট এল ইয়েলেন এক অনলাইন সংলাপে মিলিত হন। ৭ই জুলাই চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিটি ও যৌথ স্টাফ সেনাপতি লি জুও ছেং মার্কিন চিফ অব স্টাফসের চেয়ারম্যান মার্ক মিলি’র সঙ্গে এক অনলাইন সংলাপে মিলিত হন।
শুক্রবার আয়োজিত চীন-মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপ হলো গত মার্চে আয়োজিত দু’দেশের নেতাদের যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। এটি দু’দেশের মধ্যে সংলাপ ও যোগাযোগ বজায় রাখা, ভুল বোঝাবুঝি হ্রাস করা, এবং যৌথভাবে মতভেদ নিয়ন্ত্রণ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। এটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তথা চীন-মার্কিন সম্পর্ক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্যবহ।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের আগে ব্লিঙ্কেন সাংবাদিকদের কাছে সংলাপ ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক হওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন। সেজন্য আমরা মনে করতে পারি যে, এবারের সংলাপের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক অগ্রগতি ও উন্নতি চায় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সাথে যোগাযোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন বাড়ছে।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের সংলাপে দু’দেশের সম্পর্ক এবং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে সার্বিকভাবে মত বিনিময় করেন।
এদিকে, চীন এবারের বৈঠকে দু’টি সংকেত দিয়েছে। দু’দেশের সম্পর্ক উন্নত না-হলে দু’দেশের জন্যই বিরাট ঝুঁকির ব্যাপার হবে। অবশ্যই দু’দেশকে এটা বুঝতে হবে।
এবারের বৈঠক পাঁচ ঘন্টা স্থায়ী হয়। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য ৫ ঘন্টা দীর্ঘ সময়। দুই মন্ত্রী আন্তরিতভাবে যোগাযোগ ও মত বিনিময় করেছেন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খবরে বলা হয়েছে, দুই মন্ত্রী খুবই স্পষ্টভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন।
বৈঠকে ওয়াং ই বলেছেন, ‘চীন-মার্কিন তিনটি যৌথ ইস্তাহার’ হলো দু’দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ‘সুরক্ষাব্যবস্থা’। দু’দেশকেই এতে দেওয়া নিজ নিজ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। না-হলে দু’দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল হবে না। গত কয়েক দশক ধরেই এই ‘তিনটি যৌথ ইস্তাহার’ হলো দু’দেশের সম্পর্কের সুষ্ঠু উন্নয়ন ও কার্যকরভাবে দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ বজায় থাকার নিশ্চয়তা।
জো বাইডেন সরকার চীনের সঙ্গে ‘প্রতিযোগিতা, দ্বন্দ্ব ও সহযোগিতার’ কথা বলে আসছে। তবে, চলতি বছরে দু’দেশের মধ্যে কোনো সহযোগিতার চিহ্ন দেখা যায়নি। এবারের বৈঠকে চীন দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সুপ্তশক্তির কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেছে। এটি ছিল দুই দেশের সম্পর্ককে নেতৃত্ব দেওয়ার চীনা সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।
বস্তুত, চীন-মার্কিন সম্পর্ক জটিল ও বিশেষ ধরনের। কারণ, দু’দেশের মধ্যে মতভেদ প্রচুর। আবার দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার খাতও কম নয়। ওয়াং ই ও ব্লিঙ্কেনের এবারের বৈঠক হলো দু’দেশের সম্পর্ক সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার সুযোগ। চীন বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখতে ইচ্ছুক। (ছাই/আলিম)