ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ঢাকা ছাড়ছে ঘরমুখী মানুষ। আর এ সময় সড়কে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদেরকে। তবে, এবার পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণবঙ্গ-গামী মানুষ বেশ স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করছেন। আর উত্তরবঙ্গের মানুষের কষ্ট যেন শেষ হচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে উত্তরবঙ্গের সড়কে যানজটের পাশাপাশি ট্রেনযাত্রীরাও ভোগান্তিতে পড়ছেন। জাতীয় উৎসবগুলোতে ঘন ঘন এমন সমস্যা দেখা দেয়। জনগণের এই সমস্যা সমাধানে আশার আলো তৈরি করেছে পদ্মা সেতুর দৃষ্টান্ত। দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার আরেকটু উদ্যোগী হলে জনদুর্ভোগের সমস্যা সহজেই কেটে যেতে পারে।
ঈদের সময়ের ভোগান্তির চিত্র দেখা যাক। গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়- ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের বিলম্বিত যাত্রায় কষ্ট পোহাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। নির্ধারিত সময় থেকে ৩০ মিনিট পর, এমনকি ১ থেকে ৩ ঘণ্টা পরও কমলাপুর থেকে ট্রেনগুলো ছেড়েছে। এ ছাড়া শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের প্রায় সবগুলো ট্রেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো মানুষ। ১০ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে দ্রুতযান এক্সপ্রেস আর ১২ ঘণ্টা পর পঞ্চগড় এক্সপ্রেস।
এদিকে, একমুখী গাড়ির চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হওয়া যানজট ক্রমেই আরো দীর্ঘ হচ্ছে। শনিবার সকাল পর্যন্ত সেতুর পূর্বপ্রান্ত থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গের মানুষজন স্বস্তি নিয়েই ঘরে ফিরেছেন। গত কয়েক বছর ধরে মাওয়া ঘাট দিয়ে পদ্মা নদী পার হয়ে দক্ষিণবঙ্গে যেতেন ২৩টি জেলার লোকজন। এ বছর প্রথম ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছেন কয়েক লাখ মানুষ। এবার পদ্মা সেতুর কারণে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার দিন শুরু। মাওয়া এলাকা থেকে সেতু দিয়ে দক্ষিণবঙ্গে পারাপার হওয়ার কারণে অনেক বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দিত যাত্রীরা। পদ্মা সেতুতে একদিনে রেকর্ড পরিমাণ, অর্থাত্ চার কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকার টোল আদায় হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এই টোল আদায় হয়েছে। পদ্মা সেতুতে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩১ হাজার ৭২৩টি গাড়ি পার হয়েছে। এর আগে গত ১ জুলাই পদ্মা সেতুতে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়েছিল।
আসলে পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। মেঘনা, গোমতী, যমুনার পর প্রমত্তা পদ্মা নদীতে সেতু হবে- তা মানুষের প্রত্যাশা ছিল। এই সেতু বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে- এটা সুস্পষ্ট।
২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতু নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নানা পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলতি বছর সম্পন্ন হয় পদ্মাসেতুর কাজ। বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃদহাকার প্রকল্পের অন্যতম এই পদ্মাসেতু।
জাতিসংঘ ঘোষিত ১৫ বছর মেয়াদি এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কাজ করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ সহজ হলো। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়- পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৩টি জেলার প্রায় তিন কোটি মানুষ উপকৃত হবে। পাশাপাশি দেশের পরিবহন ব্যবস্থাপনা, কৃষি ও শিল্পায়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি বছর দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে বাড়তি ১ দশমিক ২ শতাংশ বা তারও বেশি প্রবৃদ্ধি যুক্ত হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোই নয়, বরং সারা দেশের মানুষ নানাভাবে উপকৃত হতে যাচ্ছে। গোটা দেশের কৃষিপণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হওয়ার পথ উন্মোচিত হয়েছে।
এর পাশাপাশি, সুস্পষ্ট হয়েছে যে- সেতুর মতো যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমগুলো যদি সক্রিয় ও যানজটমুক্ত করা যায়, তাহলে সহজেই দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে। বাংলাদেশের সড়কপথ ও রেলপথ দিয়ে লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। তাই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও বন্ধুপ্রতীম চীনের মতো রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।