সাধারণ গ্রামীণ নারী দেশ রক্ষায় কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন
2022-07-09 18:56:25

ইতিহাসে এক সময় যুদ্ধের কবলে পড়েছিল চীন। দেশ রক্ষায় অনেক সাধারণ মানুষ অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। চীনে এমন একজন মা আছেন, তিনি দেশ রক্ষায় নিজের স্বামী এবং সাত সন্তানকে  যুদ্ধের মাঠে পাঠিয়েছেন। তাঁর গল্প কেমন? তিনি সাধারণ একজন গ্রামীণ নারী হয়ে কীভাবে এমন মহান ও বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন? আজ তাঁর গল্প আপনাদের জানাবো।    

 

১৯৩৭ সালের ৭ জুলাই রাতে জাপানি বাহিনী চীনের বিরুদ্ধে সার্বিকভাবে যুদ্ধ শুরু করে। তখন থেকে চীনের জাপানি-আগ্রাসন বিরোধী যুদ্ধ শুরু হয়। আর সেই রাতে যুদ্ধের জায়গাটা হল চীনের বেইজিংয়ের লু কৌ ছিয়াও সেতু। এখানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জাপানি-আগ্রাসন বিরোধী যুদ্ধের ৭৭তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একজন বীর মাতার গল্প তুলে ধরেন।

তিনি বলেন: বেইজিংয়ের মি ইয়ুন এলাকার তেং ইয়ু ফেন নামে একজন মা, তিনি স্বামী এবং পাঁচ ছেলেকে যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনে পাঠিয়েছেন। যুদ্ধে তাঁরা সবাই মারা গেছেন।

এটি হল তেং ইয়ু ফেনের ভাস্কর্য। এখানে সাতটি চীনা অক্ষর আছে: বীরের মাতা তেং ইয়ু ফেন।

অতীতে তেং ইয়ু ফেন এবং তাঁর স্বামী গ্রামে ভাড়া করা অল্প কিছু জমি চাষাবাদ করে সাত সন্তানের লালন-পালন করতেন। তখন চীনে জাপানি বাহিনীর আগ্রাসন  হতো। তিনি সবসময় ছেলেদের শেখাতেন: তোমরা মনে রাখবে, আমরা চীনা মানুষ, কখনই নিজের দেশকে ভুলে যাবো না।

১৯৪০ সালে অষ্টম রুট বাহিনী তেং ইয়ু ফেনের গ্রামে যায়। যখন তিনি জানতে পারেন যে এই বাহিনী হল জাপানি-আগ্রাসন বিরোধী এবং দেশকে উদ্ধার করার এক বাহিনী, তিনি যেন আত্মীয় পাওয়ার মতো খুশি হন। তিনি বার বার অষ্টম রুট বাহিনীর কাছ থেকে জাপানি আগ্রাসনের বিরোধিতা করার তাত্পর্য শোনেন। তিনি অবশেষে বুঝতে পারেন যে, দরিদ্র মানুষরা এতে যোগ দিলেই নিজ দেশকে রক্ষা করতে পারে, নিজেকে উদ্ধার করতে পারে। তাই তিনি বাসায় ফিরে স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করেন: জাপানি আগ্রাসনের বিরোধিতায় আমরা সবাই যোগ দেবো। অন্যরা টাকা থাকলে টাকা দেন, অস্ত্র থাকলে অস্ত্র দেন, আমরাও এজন্য কিছু করবো। ছেলেদের যুদ্ধমাঠে নিয়ে জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করাবো।

তাই তেং ইয়ু ফেনের বড়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছেলে যথাক্রমে জাপানি-আগ্রাসন বিরোধী বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪১ সালের শরত্কালে জাপানি বাহিনী তেং ইয়ু ফেনের গ্রামে বড় আকারের নির্মূল অভিযান চালায়। এমন সময় তেং-এর চতুর্থ এবং পঞ্চম ছেলে সবচেয়ে কঠিন সময় জাপানি আগ্রাসন-বিরোধী বাহিনীতে যোগ দেয়।

১৯৪২ সালে জাপানি আগ্রাসন-বিরোধী সরকার সবাইকে বসন্তে চাষাবাদ করার আহ্বান জানায়। তেং নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি স্বামীকে প্রথমে গ্রামে ফিরে বাড়িঘর নির্মাণের কথা বলেন। তবে স্বামী চলে যাওয়ার কয়েকদিন পর তিনি স্বামীর মৃত্যুর খবর পান। স্বামী, চতুর্থ ও পঞ্চম ছেলে জমিতে কাজ করার সময় জাপানি বাহিনীর আকস্মিক হামলার শিকার হয়। এতে স্বামী ও পঞ্চম ছেলে মারা যায়। চতুর্থ ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় জাপানি বাহিনী। এরপর দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বার বার ঘটে। বড় ছেলে যুদ্ধে মারা যায়। চতুর্থ ছেলে জাপানি বাহিনীর কারাগারে মৃত্যুবরণ করে। দ্বিতীয় ছেলে যুদ্ধে আহত হয়ে বাসায় ফিরে বিশ্রাম নেন, তবে শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ হওয়ায় মারা যায়। সপ্তম ছেলে জাপানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে মারা যায়।

 

এমন গভীর আঘাতের পরও তেং নতি স্বীকার করেন নি। এরপর তাঁর বাসা অষ্টম রুট বাহিনীর বিশ্রাম নেয়ার জায়গায় পরিণত হয়। সবাই জানে একজন মা আছেন, তাঁর নাম তেং। তিনি দেশ রক্ষায় নিজের সবকিছু উত্সর্গ করেছেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় নিজের চোখে বিজয়ের দিন দেখতে হবে। ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট, তেং ইয়ু ফেনের স্বপ্নের সেই দিন আসে। জাপানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে। চীনারা অবশেষে নিজের দেশ এবং বাসা রক্ষায় সক্ষম হয়।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বার বার বীর মাতা তেং ইয়ু ফেনের কথা উল্লেখ করেন। এতে বোঝা যায়, নতুন যুগে আমাদের উচিত দেশ শক্তিশালী করতে নিরলসভাবে চেষ্টা করতে হয়। শান্তি রক্ষা করতে হয়, ইতিহাসকে ভোলা যায় না। একদিকে দেশের ভালো করার জন্য প্রত্যেক মানুষ নিজের শক্তি ব্যয় করতে পারে,  অন্যদিকে বিশ্বের শান্তি রক্ষায় চীন নিজের অবদান রাখতে পারে।