জুলাই ৭: ২০১৩ সালের মার্চ মাসে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় সফর করেন। তখন তিনি এনগুয়াবি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও এর চীনা প্যাভিলিয়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তা ছাড়া, তিনি চীনের সহায়তায় নির্মিত চীন-কঙ্গো প্রজাতন্ত্র মৈত্রী হাসপাতালের উদ্বোধনও করেন। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প দুই দেশের সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
দুটি দেশের মৈত্রী নির্ভর করে জনগণের মৈত্রীর ওপরে এবং জনগণের মৈত্রী নির্ভর করে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপরে। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কঙ্গো প্রজাতন্ত্র সফরকালে বলেন, চীন ও আফ্রিকার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব অনেক গভীরে প্রোথিত। চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার ফলাফল থেকে জনগণ উপকৃত হতে থাকলেই কেবল এর প্রতি জনগণের ব্যাপক ও দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
রাজধানী ব্রাজাভিলে অবস্থিত এনগুয়াবি বিশ্ববিদ্যালয় হল কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের বৃহত্তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। চীনের সহায়তায় নির্মিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের কাজ ২০১৩ সালের মার্চ মাসে সম্পন্ন হয়। ৬ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ গ্রন্থাগার কাঙ্গো প্রজাতন্ত্রের বৃহত্তম ও সবচেয়ে উন্নত লাইব্রেরি যেখানে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রন্থাগারে স্থাপিত চীনা প্যাভিলিয়নটি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের সাথে একীভূত। এটি কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে বড় চীনা ভাষা প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং এটি দেশের জনগণের জন্য চীনা সংস্কৃতি জানার একটি জানালা।
কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট এবং চীনা প্যাভিলিয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকে, এনগুয়াবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কলেজ চীনা কোর্স চালু করেছে। শিক্ষার্থীরা চীনা সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে এবং চীন ও চীনা জনগণকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। এনগুয়াবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বাজ্জলো বোয়া বলেন:
"চীনা ভাষা শেখার পরে আমি দেখতে পেলাম যে, চীনা লোকেরা বিশ্বের ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখে। তারা খুব দয়ালু এবং আন্তরিক। চীনা ভাষা শিখে আমি চীনাদের সাথে চীনা ভাষায় কথা বলতে পারি। চীন সম্পর্কে আমার জানাশোনা অনেক পরিবর্তন হয়েছে।"
কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের ছাত্রী বাজেবি কার্ডাইন সাবলীলভাবে চীনা বলতে পারেন। তার চীনা নাম "ইউ ফেই"। তার মতে, চীনা ভাষা শেখা তার ভবিষ্যত আরও উজ্জ্বল করবে। তিনি বলেন,
"আমি চীনা ভাষা শিখি, কারণ ভবিষ্যতে অনেক চাকরির সুযোগ থাকবে। বিদেশে যাওয়ার (অধ্যয়নের) অনেক সুযোগও থাকবে।"
২০১৩ সাল থেকে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে চীনা ভাষা কোর্স চালু হওয়া মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা প্রথম দিকের ৩টা থেকে বর্তমানে ৫০টিতে উন্নীত হয়েছে। স্কুলে চীনা ভাষা অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার। এনগুয়াবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের চীনা পরিচালক ওয়াং ইয়ং খাং জানান, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটে সফলভাবে অধ্যয়নকারী কোনো কোনো শিক্ষার্থী এখন নিজেরাই চীনা ভাষার শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছে।
কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে চীনা ভাষার প্রচার দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উন্নত করেছে। চীনের সহায়তায় নির্মিত চীন-কঙ্গো ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল দু’দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার প্রতীক। ব্রাজাভিলের এমফিলু জেলায় অবস্থিত হাসপাতালটির আয়তন ৬৩০০ বর্গমিটার। ২০১৩ সালে চালুর পর থেকে এটি স্থানীয় চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। এ হাসপাতালে "চীন-কঙ্গো প্রজাতন্ত্র চক্ষুবিদ্যা কেন্দ্র"-ও স্থাপিত হয়েছে, যা বেইজিংয়ে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত "আটটি প্রকল্পের" একটি। চীনা ডাক্তারদের চমত্কার চিকিৎসাদক্ষতা স্থানীয় রোগীদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিতও হচ্ছে।
চীন-কঙ্গো ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পরিচালক বেঞ্জামিন নজাকোনো বলেন, এ হাসপাতাল দেশের বৃহত্তম সাধারণ হাসপাতালগুলোর একটি। এটি মহামারীর সময় কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিত্সার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এমফিলু জেলার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ হাসপাতাল বিশাল অবদান রেখে আসছে।
এনগুয়াবি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার থেকে চীন-কঙ্গো ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল পর্যন্ত; কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সড়ক-১ থেকে "১৯৬০ সালের ১৫ আগস্ট সেতু" পর্যন্ত; কোভিড-১৯ টিকা ও চিকিত্সা সামগ্রী প্রদান থেকে দুর্যোগের পরে জরুরি মানবিক সহায়তা পর্যন্ত…দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করতে দু’দেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের অষ্টম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে প্রস্তাবিত "নয়টি প্রকল্প"-এর সাথে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার একীকরণের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে দুই দেশের সহযোগিতা দু’দেশের জনগণের জন্য আরও বেশি সুবিধা বয়ে আনবে, এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা চলে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)