জুলাই ৫: টিভি-পর্দার ‘একই ফ্রেমে পৃথিবী ও মহাকাশ’। এই দৃশ্য চীনা মানুষকে বরাবরই অনুপ্রাণিত করে আসছে। এ পর্যন্ত তিন বার প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মহাকাশে অবস্থানরত নভোচারীদের সঙ্গে ভিডিও-লিঙ্কের মাধ্যমে কথাবার্তা বলেছেন, যা দেশবাসী করেছে অনুপ্রাণিত।
২০২১ সালের ২৩শে জুন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিং এরোস্পেস ফ্লাইট কন্ট্রোল সেন্টারে আসেন এবং থিয়ানহ্য কোর মডিউলে অবস্থানরত শেনচৌ-১২ মহাকাশচারী নি হাইশেং, লিউ পোমিং এবং থ্যাং হংপোর সাথে ভিডিও-লিঙ্কের মাধ্যমে কথা বলেন।
এ সময় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন: "আপনারা ভালো আছেন এবং আপনাদের কাজ ভালোভাবে চলছে দেখে সবাই খুব খুশী। মহাকাশকেন্দ্র নির্মাণ চীনের মহাকাশ-গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। মানবজাতির শান্তিপূর্ণ মহাকাশ-গবেষণালয় এটি অগ্রণী অবদানও রাখবে। আপনারা নতুন যুগে চীনের মহাকাশ-গবেষণায় অগণিত সংগ্রামী মানুষের প্রতিনিধি। আমি আশা করি, আপনারা ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করবেন এবং সফলভাবে সকল কাজ সম্পূর্ণ করবেন! আমি মহাকাশে আপনাদের সুষ্ঠু জীবন কামনা করি। আমরা বেইজিংয়ে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি!"
১৯৯২ সালে চীনের মানববাহী মহাকাশ প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার পর ৩০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। মহাকাশে চীনাদের নিজের "বাড়ি" তথা মহাকাশকেন্দ্র তৈরি করা ছিল অগণিত মহাকাশচারীর স্বপ্ন। এখন ধীরে ধীরে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং শেনচৌ-১০, শেনচৌ-১১ এবং শেনচৌ-১২ মিশনের নভোচারীদের সাথে কথা বলেছেন, সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর সাথে মহাকাশের সংযোগসেতু।
নয় বছর আগে, ২০১৩ সালের ১১ই জুন, চিউছুয়ান উপগ্রহ উতক্ষেপণকেন্দ্রের নভোচারীদের অ্যাপার্টমেন্ট- ওয়েনথিয়ানকা পরিদর্শন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি শেনচৌ-১০ মানববাহী মিশনের নভোচারী নিয়ে হাই শেং, চাং শিয়াও কুয়াং এবং ওয়াং ইয়া ফিংয়ের সাথে দেখা করেন।
প্রেসিডেন্ট সি শেনচৌ-১০ মিশনের তিন মহাকাশচারীর খোঁজখবর নেন। মহাকাশযান উত্ক্ষেপণের আগে তিনি বিশেষভাবে ড্রাগন বোট উত্সবের বিশেষ খাবার ‘জুংজি’ নভোচারীরা মহাকাশে যাতে খেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন।
২৪শে জুন প্রেসিডেন্ট সি মহাকাশচারীদের সাথে আবার কথা বলার জন্য বেইজিং এরোস্পেস ফ্লাইট কন্ট্রোল সেন্টারে আসেন। কথাবার্তার সময় তিনি মহাকাশচারীদের উত্সাহ দেন এবং তাদের অনুপ্রাণিত করেন। তিনি বলেন,"মহাকাশ-গবেষণার ক্ষেত্রে শক্তিশালী দেশগঠন চীনা স্বপ্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনের মহাকাশ প্রকল্পের দ্রুত বিকাশের সাথে সাথে চীনা জনগণ মহাকাশ-গবেষণায় আরও বেশি অগ্রগতি অর্জন করবে।"
২০১৬ সালের ৯ই নভেম্বর বিকেলে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনের মানববাহী মহাকাশ অভিযান প্রকল্পের পরিচালনাকেন্দ্রে আসেন এবং থিয়ানকুং-২ মিশনে থাকা শেনচৌ-১১ নভোচারী চিং হাইপেং এবং চেন তুং-এর সাথে আন্তরিকভাবে কথাবার্তা বলেন। মহাকাশচারীরা ভালো আছেন দেখে প্রেসিডেন্ট সি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন: "আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন অসুবিধা কাটিয়ে উঠেছেন, যা প্রথম শ্রেণীর ও চমত্কার মানের প্রতিফলন।"
চিং হাইপেং এবং চেন তুং সাফল্যের সাথে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর প্রেসিডেন্ট সি বেইজিংয়ের মহা গণভবনে থিয়ানকুং-২ এবং শেনচৌ-১১ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন এবং তাদেরকে অভিনন্দন জানান। যখন তিনি জানতে পারেন যে, চিং হাইপেং মহাকাশে তার ৫০তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন, তখন প্রেসিডেন্ট সি মজা করে বলেন, "উঁচু মানের" জন্মদিন!
একজন ব্যক্তির একদিনের জন্য মহাকাশে থাকা থেকে শুরু করে একাধিক ব্যক্তির বহুদিন মহাকাশে থাকা, তথা ৩ মাস বা ৬ মাস থাকা...এভাবেই চীনের মহাকাশ-গবেষণা সামনে এগিয়ে চলেছে। ২০২২ সালের ৫ই জুন, চিউছুয়ান উপগ্রহ উতক্ষেপণকেন্দ্র থেকে শেনচৌ-১৪ মানববাহী মহাকাশযান সফলভাবে উত্ক্ষেপণ করা হয়। এবারের মিশন হচ্ছে থিয়ানহ্য কোর মডিউলের সাথে ওয়েনথিয়ান পরীক্ষামূলক মডিউল ও মেংথিয়ান পরীক্ষামূলক মডিউলের সংযুক্তির মাধ্যমে থিয়ানকুং মহাকাশকেন্দ্রের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করা।
চীনের মহাকাশ স্বপ্ন অবশ্যই শক্তিশালী দেশ গড়ার স্বপ্নকে বৃহত্তর মহাবিশ্বে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং চীনের মহাকাশ-গবেষণা থেকে নতুন নতুন সাফল্য অর্জিত হবে, এ কথা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। (ইয়াং/আলিম/ছাই)