হংকংয়ের ফিরে আসার ২৫তম বার্ষিকী ও নতুন প্রজন্মের কিশোরকিশোরীদের দেশপ্রেম
2022-07-04 15:12:47

চলতি বছরের পয়লা জুলাই হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল চীনের মূলভূভাগের অধীনে ফিরে আসার ২৫তম বার্ষিকী। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সংশ্লিষ্ট উদযাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, যেটা থেকে বোঝা যায় তিনি হংকংয়ের ওপর কতোটা গুরুত্ব দেন। গত কয়েক বছরে চীনা প্রেসিডেন্ট হিসেবে হংকংয়ের সমাজ, অর্থনীতি ও শহরবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে অনেক যত্ন নেন সি চিন পিং এবং কয়েকবার হংকং পরিদর্শন করেন। গত ২৫ বছরে হংকংয়ের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে স্থানীয় শহরবাসীদের জীবনমানও অনেক উন্নত হয়েছে। আজকের আসরে হংকংয়ের কিশোরকিশোরীদের দেশপ্রেম এবং প্রসিডেন্ট সি’র সাথে তাদের গল্প তুলে ধরবো।

 

‘জুনিয়র পুলিশ কল’ ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ সংস্থার মাধ্যমে হংকংয়ের কিশোরকিশোরীরা স্থানীয় পুলিশের সাথে সহযোগিতা করে অপরাধ কমিয়ে দেয় এবং দেশপ্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করে। ২০১৭ সালের ৩০শে জুন প্রেসিডেন্ট সি হংকংয়ের জুনিয়র পুলিশ কলের প্রশিক্ষণকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তখন সেখানকার প্রশিক্ষিত কিশোরকিশোরীদের সাথে দেখা করেন তিনি। ছেলে কুও হং সি তাদের একজন। প্রেসিডেন্ট সি’র সাথে দেখা হবার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে সে বলল, ১১ বছর বয়সে জুনিয়র পুলিশ কলে যোগ দেয় সে। প্রেসিডেন্ট সি’র উত্সাহ তাদের প্রশিক্ষণ ক্লাসের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক উত্সাহব্যাঞ্জক ব্যাপার ছিল। ছেলে কুও আরও বলে, প্রেসিডেন্ট সি তাদের জীবনযাপন, পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের নিয়ে খোঁজ-খবর নেন এবং তাদের কাজের ব্যাপক প্রশংসা করেন। তাঁর হাসি ছিল বেশ আন্তরিক। সেবার সফরে সি বলেছিলেন, প্রতি প্রজন্মের কিশোরকিশোরীদের দায়িত্ব রয়েছে। আধুনিক হংকংয়ের কিশোরকিশোরীদের উচিত সঠিক পথ বেছে নিয়ে হংকং ও দেশের জন্য অবদান রাখার চেষ্টা করা।

প্রেসিডেন্ট সি’র কথা শুনে ছেলে কুও হং সি-র আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। সে আরও ভালো করে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সম্পর্কে সে বলল, ‘আমি একজন ছাত্র। এখন ভালো করে পড়াশোনা ও শরীরচর্চা করা প্রয়োজন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হংকংয়ের উন্নয়নে নিজের অবদান রাখবো।’

সি’র পরিদর্শনের সময় ছেলে তেং ইয়ু সুয়ান তাঁর সাথে জুনিয়র পুলিশ কলের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছে। তার পরিচয় শুনে সি ব্যাপক খুশী হন। এখন বড় হয়ে  একজন পুলিশ কর্মকর্তা হবে বলে পরিকল্পনা করেছে তেং।

২০১৮ সালের নববর্ষের আগে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নববর্ষের শুভেচ্ছাবাণী দেন। সেই ভিডিও প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তাতে দেখা যায় তাঁর পিছনের বইয়ের শেল্ফে হংকংয়ের জুনিয়র পুলিশ কলের বাচ্চাদের সাথে তাঁর তোলা ছবি শোভা পাচ্ছে। ছেলে কুও বলে, ‘প্রেসিডেন্ট সি এতো ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের কথা মনে রেখেছেন। নববর্ষ উপলক্ষ্যে আমরাও তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই।’

যেই ভাবা সেই কাজ। জুনিয়র পুলিশ কলের ২২ জন শিক্ষার্থী নিজেরা একটি নববর্ষের কার্ড তৈরি করে এবং প্রেসিডেন্ট সি-কে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সেই কার্ড পাঠায়। তাদের জন্য অতি আনন্দের ব্যাপার হল, ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের ঐতিহ্যিক বসন্ত উত্সবের আগে প্রেসিডেন্ট সি তাদেরকে চিঠি লেখেন। তাদের তৈরি কার্ডের জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাচ্চাদের আরও ভালোভাবে পড়াশোনা করার এবং স্বাস্থ্য ঠিক রাখার পরামর্শ দেন।

চিঠিতে সি লিখেছেন যে, হাজার বই পড়া ও হাজার মাইল চলার মাধ্যমে আরো বেশি ইতিহাস ও দেশের অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। এভাবে ছোটদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্প্রসারিত হবে, দক্ষতা বাড়বে; তারা তখন বড় হয়ে দেশ ও হংকংয়ের উন্নয়নে সেরা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

এ সম্পর্কে ছেলে কুও হং সি বলে, “আমরা কখনও ভাবিনি প্রেসিডেন্ট সি আমাদের চিঠির উত্তর দিবেন। সেই চিঠি আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। তাঁর পরামর্শ আমরা মেনে চলার সর্বাত্মক  প্রচেষ্টা চালাবো।”

ছেলে তেং ইয়ু সিউয়ান গত কয়েক বছরে ‘জুনিয়র পুলিশ কল’ বিনিময় দলের অংশ হিসেবে চীনের কানসু প্রদেশের চিউছুয়ান উপগ্রহ কেন্দ্র, রাজধানী বেইজিং ও উত্তরপূর্ব চীনের হারবিন শহরসহ মূল ভূভাগের অনেক জায়গা সফর করেছে। এ অভিজ্ঞতা তার বড় হওয়ার পথে ইতিবাচক ভুমিকা পালন করবে বলে সে আশা করে।

চিঠিতে সি আরো লিখেছেন, ‘তোমাদের দেখে অনেক প্রাণচঞ্চল মনে হয়, যা হংকংয়ের কিশোরকিশোরীদের চেতনা ও আত্মার প্রতিফলন। মাতৃভূমি ও হংকংয়ের সুন্দর ভবিষ্যত কিশোরকিশোরীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।’ ছেলে কুও আরও বলল, বড় হওয়ার পর চিকিত্সা, জীববিজ্ঞান বা আইনের সাথে জড়িত চাকরি করতে চায়, কারণ এমন কাজ সমাজকে পরিষেবা দিতে পারে এবং অন্যদের সহায়তা দিতে পারে। সেটি বেশ ভালো ও তাত্পর্যপূর্ণ ব্যাপার।

ছেলে তেং ইয়ু সুয়ান পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন পুলিশ প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়। পুলিশ পরীক্ষার চারটি মেজরে সে পাসও করেছে। শীঘ্রই সে হংকংয়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা হতে পারবে। হংকংয়ের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে প্রেসিডেন্ট সি’র কথা মনে রেখে দেশের উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় সে। সেটি সি’র জন্য সান্ত্বনা ও খুশির ব্যাপার।

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা এ পর্যন্ত । আপনারা আমাদের অনুষ্ঠান সময় মতো শুনতে না পারলে আমাদের ওয়েবসাইটে শোনা যায়,আমাদের ওয়েবসাইট ঠিকানা Bengali.cri.cn,ফেসবুক আকাউন্ট CRIbangla থেকেও প্রতি সোমবার আমাদের অনুষ্ঠান শোনা যায়।তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি,সবাই ভালো থাকুন,সুন্দর থাকুন,আগামী সপ্তাহের একই দিনের একই সময় আবার কথা হবে,যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)