বাংলাদেশের গণমাধ্যমে হংকংয়ের ২৫তম বার্ষিকী উদযাপনের খবরে গুরুত্ব
2022-07-03 20:03:58


কোলাজ: হোসনে মোবারক সৌরভ


হংকংয়ের চীনের মূল ভূভাগে ফিরে আসার ২৫তম বার্ষিকী গত ১ জুলাই জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। হংকংয়ের প্রদর্শনীকেন্দ্রে এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট সি’র তত্ত্বাবধানে শপথ নেন হংকংয়ের ষষ্ঠ প্রধান নির্বাহী লি চিয়াছাও ও নতুন স্থানীয় সরকার।

এ উপলক্ষে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে হংকংয়ের বাসিন্দাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান চীনের প্রেসিডেন্ট। বলেন ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ সময় ও অনুশীলনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এটি পরিবর্তনের কোনো কারণ নাই। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, হংকংয়ের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যা হংকংবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করেছে; যা হংকংয়ের সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়ক। এর ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। 

হংকংয়ের চীনে মূল ভূভাগে ফিরে আসার ২৫তম বার্ষিকী উদযাপন ও প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের দিকনির্দেশনাপূর্ণ ভাষণ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, বেতার ও জাতীয় সংবাদপত্র এ বিষয়ে সচিত্র সংবাদ দিয়েছে। 

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ১ জুলাই তার আন্তর্জাতিক পাতায় প্রেসিডেন্ট সি’র ছবিসহ- ‘আগুন থেকে হংকংয়ের পুনর্জন্ম হয়েছে: সি’- শিরোনামে সংবাদ ওই খবরে বলা হয়েছে: প্রেসিডেন্টে সি বলেন, ‘এ সময়ে হংকং একাধিক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছে। একাধিক ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ উৎরে গেছে। এ ঝড়ের পর আগুনের মধ্য থকে হংকং নতুন করে জন্ম নিয়েছে’।

একই দিন দেশের অন্যতম জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ছবিসহ- ‘ভস্ম থেকে উত্থান হংকংয়ের: চিনপিং’ শিরোনামে তাদের আন্তর্জাতিক পাতায় ৩ কলামজুড়ে খবর ছাপে। সংবাদটিতে প্রেসিডেন্ট সি’কে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘বাস্তবতা প্রমাণ করেছে যে এক দেশ দুই ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী ও প্রাণপ্রাচূর্যে ভরপুর। এট দীর্ঘ মেয়াদে হংকংয়ের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের নিশ্চয়তা দেয়’। 

২ জুলাই প্রথম আলোর আন্তর্জাতিক পাতায় অন্যতম প্রধান সংবাদ হিসেবে তিন কলাম খবর ছাপা হয় হংকংয়ের ২৫ বছর উদযাপন ও প্রেসিডেন্ট সি’র ভাষণ। সচিত্র এ খবরটির শিরোনাম ছিল হংকংয়ে এক দেশ, দুই ব্যবস্থা নীতি বদলাবে না। সংবাদে ব্যবহৃত তিন কলামজুড়ে ছবিতে প্রেসিডেন্ট সি, তাঁর স্ত্রী পেং লিইউয়ান, হংকংয়ে বিদায়ী গভর্নর ও নতুন গভর্নর রয়েছেন।

খবরটিতে হংকংয়ের ২৫ বছর পূর্তির উদযাপন অনুষ্ঠানের বিস্তারিত, এর ইতিহাস ও প্রেসিডেন্ট সির ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো তুলে ধরা হয়। প্রেসিডেন্ট সি’কে উদ্ধৃত করে সংবাদটিতে বলা হয়েছে- হংকং শাসনের ক্ষেত্রে যে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে, তা বজায় থাকবে। এ ধরনের ভালো ব্যবস্থা পাল্টানোর কোনো কারণ নেই। এটি দীর্ঘ মেয়াদে বজায় রাখতে হবে। 

২ জুলাই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার হংকংয়ের ২৫ বছর পূর্তি উদযাপনের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। এদিন পত্রিকাটি তাদের প্রথম পাতায় মাস্টহেড অর্থাৎ পত্রিকার নামের ডান পাশে শীর্ষে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ছবি ও বক্তব্যসহ সংবাদটি হাইলাইটস আকারে দিয়েছে। আর আন্তর্জাতিক পাতার শীর্ষভাগে ৮ কলাম জুড়ে সচিত্র সংবাদটি ছেপেছে। সংবাদের সঙ্গে ছাপা ৬ কলাম রঙিন ছবিতে দেখা যায় চীন ও হংকংয়ের পতাকা হাতে ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করছে লোকজন।  আর সংবাদটি শিরোনাম- সি হেইলস চায়না’স রুল ওভার হংকং: বেকস ওয়ান কান্ট্রি টু সিস্টেম। 

সংবাদটিকে উদযাপনী অনুষ্ঠানের খবর হংকং হস্তান্তরের ইতিহাস ও প্রেসিডেন্ট সি’র ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বেইজিং সবসময় হংকংয়ের কল্যাণের জন্য কাজ করেছে। মাতৃভূমিতে ফিরে আসার পর হংকংয়ের মানুষ নিজেদের শহরের মাস্টার হয়েছে। হংকংয়ের সত্যিকারের যাত্রাও সেখান থেকে শুরু।

প্রেসিডেন্ট সি’কে উদ্ধৃত করে সংবাদটিতে আরও বলা হয়, এক দেশ, দুই ব্যবস্থা চীনের সমন্বিত এখতিয়ারে সফল হয়েছে। এমন একটি ভালো ব্যবস্থা পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই। এটি দীর্ঘমেয়াদে বলবৎ থাকবে। 

চায়না মিডিয়া গ্রুপ- সিএমজি-বাংলাও উদাপনের খবরের পাশাপাশি চীনে তত্ত্বাবধানে হংকংয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন ও অগ্রগতির খবর প্রকাশ করেছে তাদের ফেসবুক পেজে। দেশে অন্যান্য সংবাদপত্র ও অনলাইন গণমাধ্যমও হংকংয়ের ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন ও প্রেসিডেন্ট সির ভাষণকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার ও প্রকাশ করেছে। 

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এ সব সংবাদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুএকটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রধান প্রধান সংবাদ মাধ্যমগুলো হংকংয়ের ২৫ বছর পূর্তি ও প্রেসিডেন্ট সি’র ভাষণকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছে। এর ফলে হংকংয়ে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের জানার পরিধি আরও প্রসারিত ও ইতিবাচক হবে বলে আশা করা যায়। 

মাহমদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।