কুয়াংতোং-হংকং-ম্যাকাও হবে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু
2022-06-30 20:29:05

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: হংকং আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় রানওয়েতে বিমান চলাচলের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন হলো। ফলে বিমান বন্দরের ফ্লাইট চলাচল সক্ষমতা বাড়লো দ্বিগুণ। টানা ৬ বছরের নির্মাণ কাজ শেষে খুব শিগগিরই শুরু হবে বিমান চলাচল। এর মাধ্যমে কুয়াংতোং-হংকং-ম্যাকাও বৃহৎ উপকূলীয় এলাকায় বিপুল উন্নয়ন সম্ভাবনা তৈরি হলো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। চীনের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, মূল ভূ-খণ্ডের মতোই হংকংয়ের উন্নয়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ চীন সাগরের উপকূলীয় বিশাল এলাকাজুড়ে কুয়াংতোং-হংকং-ম্যাকাও। পুরো সাগর পথের বাণিজ্য ও কৌশলগতকারণে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা যাতায়াতের কেন্দ্রস্থল।

এই অঞ্চলের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে তাই উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে চীন। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালে এক চুক্তিতে সাক্ষর করে তিন অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ। আর পুরো কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে পাশে থাকে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি মানুষের কর্মচাঞ্চল্য বাড়াতে, বিনিয়োগ ও অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয় চীনের মূল-ভূখণ্ড।

এরই অংশ হিসেবে হংকং বিমান বন্দরকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বিশেষ করে চীনের ক্ষমতাসীন দল সিপিসি’র ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসে হংকংয়ের উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে প্রস্তাব পাশ করে।

ফ্রেড লাম টিন-ফুক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, হংকং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ

“আমরা কেবল হংকং এর জন্য এই বিমান বন্দরটি সম্প্রসারণ করছি না বরং পুরো কুয়াংতোং-হংকং-ম্যাকাও এলাকার কাজে লাগবে এটি। আশা করছি আন্তর্জাতিক আকাশ পথ পরিবহন ব্যবস্থায় আমাদের দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ বিমান চলাচলের কেন্দ্র হবে এই বিমানবন্দরটি।“

এরইমধ্যে টানা ৬ বছরের বিশাল কর্মযজ্ঞের পর হংকং বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। শেষ হয়েছে পরীক্ষামূলক বিমান চলাচলের কাজও। এবার আনুষ্ঠানিকবাবে বিমান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পালা। চলতি বছরের মধ্যেই উন্মুক্ত হবে তৃতীয় টার্মিনাল।

চীনা পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের নির্বাহী কমিটির সদস্য জনাথন চোই কুন-শাম জানান, এসব কার্যক্রমের ফলে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখছেন এখানকার ব্যবসায়ীরাও।

জনাথন চোই কুন-শাম, চীনা পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স

“আমাদের মাতৃভূমির জোরালো সমর্থন ও সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে পুরো দেশের মতো এখানেও একই রকম উন্নয়ন হচ্ছে। বিশেষ করে ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নেওয়ার পর হংকংয়ের স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ব্যাপক আশাবাদী হয়ে উঠেছে।“

এদিকে, হংকংয়ের সঙ্গে সড়ক পথে ম্যাকাওকে সংযুক্ত করেছে এক বিশাল সেতু। পুরো ৫ বছর নির্মাণ কাজ শেষে হংকং-ছুহাই-ম্যাকাও সেতু কুয়াংতোং প্রদেশের মাধ্যমে যুক্ত করেছে দুই দ্বীপ অঞ্চলকে।

এই অঞ্চলের ৫৮টি শহরের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কুয়াংচৌ-শেনঝেন-হংকং দ্রুত গতির রেলপথ। স্থানীয় নেতারা বলছেন, মূল-ভূখন্ড ও হংকংয়ের উন্নয়ন কার্যক্রমে কোন পার্থক্য নেই বরং সব মানুষের জন্য অভিন্ন ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে হাঁটছে চীন সরকার। 

লিউং চুন-ইং, চীনা পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স

“আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ব্যবসার কেন্দ্র হওয়ায় হংকং এর উন্নয়ন সব সময় প্রাধান্য পায়। এখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অফশোর কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখান থেকে দেখলে বোঝা যায়, এক দেশ দুই নীতি কতোটা বৈজ্ঞানিক, নিয়মতান্ত্রিক ও গুরুত্বপূর্ণ।“

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জাহাজ চলাচল আর তথ্য-প্রযুক্তির কেন্দ্রস্থল হিসেবে আরো সুদৃঢ অবস্থানে পৌছে যাবে হংকং।