জুন ২৯: ২০২০ সালে চরম দারিদ্র্যকে বিদায় জানিয়েছে চীন। এর মধ্যে কোন কোন জায়গা গ্রামীণ পর্যটনের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। তবে, কোভিড-১৯ মহামারি দেখা দেয়ার পর থেকে পর্যটন শিল্প বড় আঘাতের শিকার হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনের তাবিয়ে পাহাড়ের গল্প বলব। দেখতে যাব সেখানে স্থানীয়রা মহামারি মোকাবিলায় কী কী নতুন ব্যবসার সুযোগ খুঁজে পেয়েছেন।
তাবিয়ে পাহাড় ইয়াংসি নদী ও হুয়া হ্য নদীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এটি চীনের পুরোনো বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকা। হ্য নান প্রদেশের সি হ্য পাহাড় ও নদীর মধ্যে অবস্থিত একটি গ্রাম। গ্রামটির ইতিহাস ৭০০ বছরের প্রাচীন এবং এখনো গ্রামটিতে রয়েছে ১৫০টির বেশি প্রাচীন বাড়িঘর। একসময় সি হ্য গ্রামে গ্রামীণ পর্যটন বেশ জনপ্রিয় ছিল। সর্বোচ্চ ব্যস্ত সময়ে এখানকার পারিবারিক হোটেলে কোন খালি রুম খুঁজে পাওয়া যেতো না। করোনা মহামারির কারণে স্থানীয় পর্যটনের ক্ষতি হয়েছে। তবে, স্থানীয়রা হাল ছাড়েননি, বরং কষ্টকর অবস্থায় নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পাচ্ছেন।
সি হ্য গ্রামে জনপ্রিয় একটি দোকান আছে। তার ব্যবসা অনলাইনেও চলে। দোকানের মালিক খুয়াং চিয়ান সিন ২০১৬ সালে শেনচেন শহর থেকে এসেছেন হ্য সি গ্রামে। তখন তিনি এই স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পণ্যের দোকানটি খুলেন। খুয়াং চিয়ান সিন একসময় আইটি খাতে কাজ করতেন, তাই তিনি একটি অনলাইন দোকানও খুলেছেন। আগে স্থানীয় পর্যটন শিল্পের সাহায্যে প্রতিবছর দশ হাজারের বেশি ভোক্তা তার দোকানে আসতেন। স্থানীয় আচার দোকানটির সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পণ্য। তার তৈরি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আচার বছরে ৭ লাখ বোতল বিক্রি হতো। তবে, চলতি বছর মহামারির কারণে প্রায় কোন পর্যটকই তার দোকানে আসেনি। পর্যটন ব্যবস্থা ব্যাহত হলেও খুয়াং চিয়ান সিন একটি বৈশিষ্ট্যময় কৃষি খাবার গবেষণা দল গঠন করেন। তারা একটি আচার প্রক্রিয়াকরণ লাইন তৈরি করেছেন এবং সেখানে প্রতিদিন ৫০ টন কাচামাল প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পাশাপাশি, কারখানাকে আপগ্রেড করে আচারের রান্না ও ক্যানিংয়ের জীবাণুমুক্ত পরিবেশে করা হয়েছে। এখন আচারের উত্পাদন দক্ষতা ও মান আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে এবং এসব সারা চীনে পাঠানো হয়। এ আচার তৈরিতে স্থানীয় আদা দরকার হয়। খুয়াং চিয়ান সিনের নেতৃতে স্থানীয় কৃষকরা আদা চাষ করেন। খুয়াং বলেছেন, যদিও এখন গ্রামে পর্যটক আসে না, তবে আগের তুলনায় আমি আরও ব্যস্ত আছি। পাহাড়ে চাষের জমি তৈরি, রোপন এবং ডাইভারশন সেচসহ নানা কাজ করেন খুয়াং চিয়ান সিন। স্থানীয় সরকারের সমর্থনে নতুন এ ব্যবসায় ১.৩ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগ করেছেন তিনি এবং একটি আদা চাষের কেন্দ্র নির্মাণ করেছেন। অনুর্বর পর্বতকে উর্বর ফসলের কেন্দ্রে পরিণত করেছেন।
গ্রামের দায়িত্বশীল ব্যক্তি চাং ই মো বলেছেন, কোন একদিন মহামারি শেষ হবে এবং তার আগেই আমরা নিজকে আরও ভাল করে গড়ে তোলতে পেরেছি। এ সময়টি ধরে সি হ্য গ্রামে চলছে নানা প্রকল্প। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ, আবর্জনা বাছাই বুথ নির্মাণ, পাবলিক টয়লেটের সংস্কার ইত্যাদি কাজ এ সময়ে শেষ করা হয়েছে। পাশাপাশি, নদীতে লাইট ইনস্টল করা হয়েছে। রাতের আলোতে গ্রামটিকে দেখতে আরও সুন্দর লাগবে।
সিন জেলা ছিল হুবেই, হ্যনান এবং আনহুই সোভিয়েত এলাকার রাজধানী এবং এ জেলার সু পাং গ্রাম মধ্য চীনে প্রথম গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত হয়। হান সিয়াও ছুন গ্রামের একটি পারিবারিক হোটেলের মালিক। যদিও গেল দু’বছরে পর্যটন শিল্পে কিছুটা কষ্ট দেখা দেয়, তবে ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদী হান সিয়াও ছুন। তিনি বলেছেন, যদিও মহামারির কারণে আমাদের ব্যবসা বন্ধ রয়েছে; তবে, এ সময়ে আমরা আমাদের হোটেলগুলোকে আপগ্রেড করেছি। বিপ্লব এলাকার মানুষেরও বিপ্লবী চেতনা আছে। একান্ন বছর বয়সি হান কুয়াং ইংও সম্প্রতি নিজের হোটেলকে আপগ্রেড করেছেন এবং আরেকজন হোটেল মালিক হান কুয়াং চি সাংবাদিককে জানিয়েছেন, তার হোটেল সাজানোর সবখরচ সরকার বহন করেছে।
পাশাপাশি, গ্রামে চালু হয়েছে হোটেল খাবার তৈরি ও সেবা প্রদানের প্রশিক্ষণ এবং পার্কিং লট, পুকুর সংস্কারসহ দশ-বারোটি প্রকল্পও চলছে।
হ্য নান সিন ইয়াং সরকার একদিকে গ্রামীণ পর্যটন শিল্পকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি নীতিগত সুবিধাও দেয়। সাংস্কৃতিক ও পর্যটন শিল্পকে সাদা নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। হ্য নান প্রদেশ ও সিন ইয়াং শহরের নাগরিকদেরকে স্থানীয় গ্রামে ভ্রমণ করতে সুবিধা প্রদান করে সরকার।
তাবিয়ে পাহাড়ের উত্তর দিকে অবস্থিত চিন কাং ক্যানিয়ন হচ্ছে একটি চা চাষের এলাকা। বসন্তকাল ছিল চা বিক্রির সোনালী সময়, তবে মহামারির কারণে পর্যটকরা এখানে আসতে পারেন না। ছি পেং চা সমবায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ৩৬ বছর বয়সি চৌ চেং সিয়াং জানিয়েছেন, পাহাড়ের বাইরে চা বিক্রি করতে আমরা অনলাইনে লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। পাশাপাশি, পাহাড়ে চা বাগানের ছোট ভিডিও বানিয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চা চাষের প্রক্রিয়া এবং চা বাগানের সুন্দর দৃশ্য প্রদর্শন করেন, তাতে অনেক মানুষ স্থানীয় চা সম্পর্কে জানতে পেরেছে।
তাবিয়ে পাহাড়ের নম্বর ১ সড়ক পথও নির্মিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এতদঞ্চলের সবদর্শনীয় স্থান এ সড়ক পথের মাধ্যমে যুক্ত হবে। লিন চুং গ্রামের তাবিয়ে পাহাড় ক্যাম্পিং পার্কের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পও এগিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পিং হোটেল, ক্যাম্পিং একাডেমি, চত্বর এবং উন্মুক্ত থিয়েটার নিয়ে ভবিষ্যতে ক্যাম্পিং পার্কটি ক্যাম্পিং গ্রামে পরিণত হবে।
মহামারি তাবিয়ে পাহাড়ের পর্যটন শিল্পের বিরতি বোতাম চেপে দিয়েছে, তবে, তা স্থানীয় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ভিত্তি তৈরির সময় দিয়েছে। বিশ্বাস করি, মহামারির পর এটি উচ্চ মানের এবং আরো সুন্দর ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত হবে। (শিশির/এনাম/রুবি)