জুন ২৯: গতকাল (মঙ্গলবার) শেনচৌ-১৩ মহাকাশযানের মহাকাশচারী চাই চি কাং, ওয়াং ইয়া পিং এবং ইয়ে কুয়াং ফু বেইজিং এরোস্পেস সিটিতে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়েছেন। শেনচৌ-১৩ মহাকাশযানের মাহাকাশচারীরা ফিরে আসার পর প্রথমবার মিডিয়া এবং জনগণের সঙ্গে দেখা করলেন। বর্তমানে নভোচারীদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভালো রয়েছে। সার্বিক পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন কাজ শেষ করে এবং একটি পুনরুদ্ধার ও স্বাস্থ্য মূল্যায়ন সারাংশ পরিচালনা করার পরে তিনজন মহাকাশচারী স্বাভাবিক প্রশিক্ষণে যোগ দেবেন। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় এ সম্পর্কে শুনুন একটি বিশ্লেষণ।
৭৪ দিন পর তিন মহাকাশচারী জনসমক্ষে সতেজ ও প্রাণোচ্ছলভাবে আবির্ভূত হয়েছেন। নভোচারী ব্রিগেডের ক্যাপ্টেন এবং মহাকাশচারী ব্যবস্থার ডেপুটি কমান্ডার জিং হাইপেং বলেন, ক্রুরা স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসার পর পুনরুদ্ধারের সময় শুরু হয়েছে। এই সময় প্রধানত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত: বিচ্ছিন্নতা পুনরুদ্ধার, পুনরুদ্ধারে বিশ্রাম ও পুনরুদ্ধার পর্যবেক্ষণ। শেনচৌ-১৩ ক্রুদের বিশ্রাম পর্ব শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন,
‘সামগ্রিকভাবে মহাকাশচারীদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভালো রয়েছে। বিভিন্ন চিকিৎসা পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক রয়েছে, কার্ডিওপালমোনারি ফাংশন পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং পেশীশক্তি, সহনশীলতা ও হাড়ের ঘনত্ব ফিরে এসেছে। পাশাপাশি প্রত্যাশিত সাফল্যও অর্জিত হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশেষ মেডিকেল পরীক্ষা এবং পরীক্ষামূলক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং এখন পুনরুদ্ধার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পুনরুদ্ধারের তিনটি সময় বিভিন্ন কাজ শেষ করে স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করার পর তিনজন কমরেড স্বাভাবিক প্রশিক্ষণ শুরু করবেন।
দুই মাসেরও বেশি আগে শেনচৌ-১৩ মনুষ্যবাহী মহাকাশযানের রিটার্ন ক্যাপসুল সফলভাবে পৃথিবীতে অবতরণ করে এবং তিনজন নভোচারী নিরাপদে ফিরে আসেন। কক্ষপথে থাকার সময় গ্রাউন্ড স্টাফদের সহায়তায় তারা দু’বার মহাকাশযান থেকে বের হয়ে কিছু কার্যক্রমে অংশ নেন। দু’বার ‘তিয়েনকোং ক্লাসরুম’ স্পেস শিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন এবং বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রকল্প সম্পন্ন করেছেন। মিশনটি চীনা মহাকাশচারীদের ১৮৩ দিনব্যাপী একটানা কক্ষপথে উড়ে যাওয়ার একটি নতুন রেকর্ডও তৈরি করেছে।
শেনচৌ-১৩ মহাকাশযানের ক্রুর কমান্ডার চাই চি কাং। তিনি মহাকাশচারীদের মধ্যে সবচে বেশিবার মহাকাশযানের বাইরে গিয়েছেন। তিনি বলেন যে, মাটিতে ফেরার আগে, তিনজন নভোচারী শেনচৌ-১৪এর ফ্লাইট ক্রুদের সঙ্গে একটি দ্বিমুখী ভিডিও আলাপ করেছিলেন। তারা মহাকাশ স্টেশনের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষামূলক স্থাপনা এবং ব্যবহারের দক্ষতা সম্পর্কে সতর্কতার সঙ্গে অবহিত করেন। তারা জীবনের কিছু খুটিনাটি বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন,
‘মহাকাশযানে সুন্দর ও আরামদায়ক ঘুমের জন্য কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে- তার দক্ষতা ও প্রত্যেকের অভ্যাস আলাদা।’
চীনা মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানরত প্রথম নারী মহাকাশচারী হিসেবে ওয়াং ইয়াপিং অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। স্পেস স্টেশনের মিশনে কেবিনের বাইরে যাওয়ার অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, কেবিনের বাইরে যাওয়ার মুহূর্তে মনে হয়েছিল যেন- অন্য জগতের দরজা খুলে গেছে।
তিনি বলেন,
‘মহাবিশ্বের সৌন্দর্য আমাকে হতবাক করেছিল, মহাবিশ্বের গভীরতা ছিল অপ্রত্যাশিত এবং মহাবিশ্বের নিস্তব্ধতা ছিল অকল্পনীয়। আমরা যে নীল গ্রহে বাস করি- তা যেন অন্ধকারের মাঝে ঝুলে আছে, শান্ত, সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ, এমন একটি অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি- আগে কখনও হয়নি।’
শেনচৌ-১৩এর ফ্লাইট ক্রুদের মধ্যে ইয়ে কুয়াংফু, আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী প্রথম চীনা মহাকাশচারী। তিনি বলেন,
‘মহাকাশ অন্বেষণ মানবজাতির অভিন্ন বিষয়। আমরা আশা করি, মহাকাশে মানবজাতির সর্বোত্তম গুণাবলী এবং সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে পারবে। যাতে মানবজাতির ভবিষ্যত স্থানটি বিশ্বাস, সৌন্দর্য ও আশায় পূর্ণ হয়। চাইনিজ স্পেস স্টেশনে যোগ দিতে বিদেশি নভোচারী বন্ধুদের স্বাগত জানান তিনি।’
লিলি/তৌহিদ