এনডিবি’র সাহায্যে ভারতীয় গ্রামবাসীদের পানি সমস্যা সমাধান
2022-06-27 11:16:35

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) অর্থে গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হবার পর ৫ লাখ স্থানীয় গ্রামবাসীর পানি সমস্যা সমাধান হবে।

 

সম্প্রতি প্রদেশটির কাংড়া বিভাগে প্রকল্পের পাইপলাইনের স্থাপন সুষ্ঠুভাবে চলছে। স্টোরেজ ট্যাঙ্কের নির্মাণ কাজও অবিলম্বে শুরু হবে।

 

প্রকল্পটি প্রথমে সমভূমি থেকে পানি সংগ্রহ করে বিরাট একটি ট্যাঙ্কে জমা করবে; তারপর তা থেকে পাইপের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিবারে পাঠানো হবে। ফলে কৃষকরা নিজেদের বাসায় পানির কল খুলে পানি ব্যবহার করতে পারবে।

 

ত্রিশ বছর বয়সী গ্রামবাসী রমন জানান, জন্মগ্রহণ থেকে তার বাসার পানি সরবরাহ স্থিতিশীল ছিল না। বাসায় কেবল ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পানি থাকতো। সে কখনো পানি সরবরাহ ১ ঘন্টা ছিল- এমনটি দেখেনি । মাঝেমাঝে বিদ্যুত্‌ও থাকে না, তখন ৫ থেকে ৮ দিন পানি থাকে না।

 

হিমাচল প্রদেশের গ্রামীণ পানি সরবরাহ অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। পাহাড়ী এলাকায় দৈনন্দিন পানি পেতে বিশেষ অসুবিধা হয়। এনডিবি’র পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রদেশটির প্রায় ৪২ শতাংশ অধিবাসী কার্যকরভাবে বিশুদ্ধ পানীয় জল পায় না। গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীরা প্রতিদিন পানি আনতে কমপক্ষে ২ ঘন্টা সময় ব্যয় করে।

 

২০২১ সালের ডিসেম্বরে হিমাচল প্রদেশের গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য এনডিবি ৮ কোটি মার্কিন ডলার দেয়। প্রকল্পে আনুমানিক খরচ হবে ১০ কোটি মার্কিন ডলার, বাকি অর্থ ভারত সরকার দেবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রদেশটির ৮টি অঞ্চলে ১ হাজার ২৫৫টি গ্রামের ৫ লাখেরও বেশি কৃষক প্রকল্প থেকে লাভবান হবে।

 

প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী সুশীল বলেন, এনবিডি’র প্রকল্পটি সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য একটি সুখবর। হিমাচল একটি পাহাড়ী প্রদেশ। ভূখণ্ড খুবই রুক্ষ। মানুষ খুব দূর থেকে পানি আনে। বিশেষ করে নারীদের দৈনন্দিন পানির জন্য দূরে যাতায়াত করতে হয়।

 

সুশীল জানান, বর্তমানে প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প কার্যকর হবার চার মাসের মধ্যে তারা এনডিবি থেকে প্রথম দফা অর্থ ছাড় পায়। এটা রেকর্ড পরিমাণ দ্রুত হয়েছে।

 

শাংহাই-ভিত্তিক এনডিবি ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো ব্রিকসসহ নবোদিত অর্থনৈতিক গোষ্ঠী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সম্পদ সমন্বয় করার পাশাপাশি বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক আর্থিক সংস্থা হিসেবে বিশ্ব প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালানো। ২০২২ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত এনডিবি সদস্য দেশগুলোর জন্য ৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের আর্থিক সমর্থন দিয়েছে।

 

সম্প্রতি এনডিবি ভারতে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করার কথা ঘোষণা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন কার্যালয় এনডিবি’র সদর দপ্তরের সঙ্গে সহযোগিতা করে ভারত ও বাংলাদেশের অবকাঠামো এবং টেকসই উন্নয়ন চাহিদা পূরণ করে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে।

 

ভারতের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক বি আর দীপক বলেন, ব্রিকস সাফল্যের সঙ্গে সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। এর মধ্যে এনডিবি ব্রিকস হার্ডওয়ার ও সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

 

তুর্কি কৃষকদের উপকৃত করছে “এক অঞ্চল এক পথ” সহযোগিতামূলক প্রকল্প

 

 

সুগজু গ্রাম তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় আদানা প্রদেশে অবস্থিত। সেখানকার কৃষকরা প্রধানত  সূর্যমুখী, জলপাই, তরমুজ ও যবসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে। সবার আয়ের উত্স তুলনামূলকভাবে একই। দেশটির অনেক গ্রামাঞ্চলের মতো এখানেও গ্রীষ্মকালে খরা থাকে এবং বৃষ্টি কম হয়। কৃষির জলসেচন পানির অভাব হয়। কিন্তু বর্তমানে চীন ও তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক প্রকল্প হুনুতলু তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র প্রকল্প স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি পানি সমস্যা প্রশমন করেছে।

 

হুনুতলু তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র হচ্ছে চীন ও তুরস্কের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর তুরস্কে সরাসরি বিনিয়োগের বৃহত্তম প্রকল্প। প্রকল্পটি চালু হবার পর বছরে তুরস্কের জন্য ৯শ’ কোটি ওয়াট বিদ্যুত্ সরবরাহ করবে। যা দেশটির বার্ষিক বিদ্যুত্ উত্পাদন পরিমাণের ৩ শতাংশ হবে। অগ্রণী বিদ্যুত্ উত্পাদন প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে প্রকল্পটি দেশটির প্রথম চিমনিহীন বিদ্যুত্ কেন্দ্র হতে চলেছে। ফলে জ্বালানী সাশ্রয় ও পরিবেশ সংরক্ষণ করবে এটি।

 

সুগজু গ্রাম সবচেয়ে আগে প্রকল্পের ডাবল কল্যাণ—কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং পরিষ্কার পানি সম্পদ--উপভোগ করে।

 

গ্রামের প্রধান আলি এরদোগান বলেন, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু থেকে অনেক গ্রামবাসী কর্মসংস্থান খুঁজে পায়। নিজেকে লালন-পালন করার পাশাপাশি প্রতিদিন পাউরুটি বাসায় নিয়ে যায়। সবাই নতুন দক্ষতা শিখে ফেলেছে।

 

তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটি থাকার কারণে আমাদের এখানকার তরুণ-তরুণীরা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ প্রত্যাশা করতে পারছে।

 

একই সময় চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়। শিল্প ও স্যানিটারি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং ভূজল দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প নির্মাণ করে। ফলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা নিরাপদ ও পরিষ্কার পুনরায় ব্যবহারযোগ্য জল দিয়ে ফসল উত্পাদন করতে পারছে।

 

হুনুতলু বিদ্যুত্ কেন্দ্রের প্রধান পরিবেশ তত্ত্বাবধান প্রকৌশলী দুহান আরজ ব্যাখ্যা করে বলেন, কঠোরভাবে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য জলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রকৌশলী নিয়মিতভাবে তিনটি তত্ত্বাবধান কুয়া থেকে পানি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করেন। পরীক্ষায় দেখা গেছে কোন দূষণ ছিল না।

 

স্থানীয় গ্রামবাসী আদম কার্গি বলেন, ২০১৮ সালে তিনি একটি জলপাই বাগান প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু সবসময় পানির অভাব ছিল। বিদ্যুত্ কেন্দ্র প্রকল্পটি যথেষ্ঠ পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পানি নিয়ে এসেছে। বর্তমানে ফসল নির্দিষ্ট সময়ের আগে হয়। আগের অনুমান ছিল, ৭ বছর পর প্রথম দফা জলপাই হবে, কিন্তু ৪ বছরেই আমি ফলন পেয়েছি।

 

তরমুজচাষী ভেলিকয়াল জানান, চলতি বছর তরমুজের ফলন খারাপ নয়। গত ৩ বছর তিনি বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প থেকে লাভবান হন। বিশেষ করে তার পানি সমস্যা প্রশমন হয়েছে।

 

(প্রেমা/এনমা)