জুন ২৭: জার্মানি হলো ২০২২ সালে জি-৭ গোষ্ঠীর পালাক্রমিক রাষ্ট্রপতি দেশ। গতকাল (রোববার) জার্মানির বাভারিয়ার এলমাউ ক্যাসেলে তিন দিনের জি-৭ গোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন পরিস্থিতি এই শীর্ষসম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাশাপাশি জলবায়ু সুরক্ষা এবং জ্বালানি সংকট প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় এ বিষয়ে শুনুন একটি প্রতিবেদন।
বহির্বিশ্বের জনসাধারণ মতে, জি-৭ গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫০ বছরে কখনও বর্তমান সময়ের মতো একাধিক এবং গুরুতর সংকট সামনে আসেনি। রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে, খাদ্য নিরাপত্তায় চ্যালেঞ্জ বাড়ছে, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি তীব্র হচ্ছে এবং আর্থিক পুনরুদ্ধারে অনিশ্চয়তায়ও বাড়ছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, অবকাঠামো ও বিনিয়োগে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও, জি-৭ গোষ্ঠীর সম্মেলন চলাকালে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারীর চ্যালেঞ্জের প্রতি মনোনিবেশ করেছেন।
জার্মান চ্যান্সেলার ওলাফ স্কোলজ বলেন, এবারের শীর্ষসম্মেলন সব সমস্যার সমাধান করতে না-পারলেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে এবং কিছু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া যাবে।
তিনি বলেন,
‘বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ততটা সুষ্ঠু নয়। জি-৭ গোষ্ঠীর দেশগুলো বর্তমান সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিছু কিছু দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমেছে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে, কাঁচামালের অভাব দেখা দিয়েছে এবং সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছে। এগুলো আমাদের সম্মুখীন বিশাল চ্যালেঞ্জ, তাই আমাদেরও দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে। যাই হোক, আশা করা যায়, এবারের শীর্ষসম্মেলন থেকে সংহতি ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের একটি স্পষ্ট সংকেত দেওয়া যাবে।’
উল্লেখ্য, এটি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের পর বাইডেনের প্রথমবার জার্মানি সফর।
হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিপুল মাত্রায় প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোয় জার্মানির ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানান বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি অব্যাহতভাবে ইউক্রেনকে সামরিক, অর্থনৈতিক, মানবিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দেবে এবং বিশ্বের খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তায় সামরিক সংঘর্ষের নেতিবাচক প্রভাব কমানোর চেষ্টা চালাবে।
জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি, কানাডা ও জাপান-- এই সাতটি দেশের নেতৃবৃন্দ ছাড়া, জার্মানি ভারত, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সেনেগাল ও আর্জেন্টিনার নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এবারের শীর্ষসম্মেলন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন নিশ্চিত করতে এবং আশেপাশের যেসব এলাকায় বিক্ষোভ চলছে- সেখানকার শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জার্মানি সারা দেশে প্রায় ১৮ হাজার পুলিশ এবং সামরিক হেলিকপ্টার ও জল কামান মোতায়েন করেছে।
শীর্ষসম্মেলনের প্রাক্কালে, হাজার হাজার মানুষ জি-৭ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মিউনিখে মিছিল করেছিল। গতকাল (রোববার) উদ্বোধনী দিনে প্রায় এক হাজার লোক গার্মিশ-পার্টেনকির্চেনের কেন্দ্রে বিক্ষোভ করে। ‘জি-৭ জোটের বিরোধিতা করুন’, ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন’ এবং ‘জলবায়ু রক্ষা করুন’ স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। একজন প্রতিবাদকারী বলেন,
‘জি-৭ গোষ্ঠী জলবায়ু সংকটের জন্য বেশি দায়ী। বিপর্যয়কর জলবায়ু পরিবর্তন রোধে তাদের চেষ্টা যথেষ্ট ছিল না। তাই আমরা জি-৭ গোষ্ঠীকে জলবায়ু রক্ষায় ভূমিকা রাখা, ২০৩০ সালের আগে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করা এবং দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু সুরক্ষার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানাই। লিলি/তৌহিদ/শুয়ে