১৪তম ব্রিক্স শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠিত
2022-06-24 14:35:13

জুন ২৪: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল (বৃহস্পতিবার) বেইজিং থেকে এক ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে ব্রিক্স দেশগুলোর শীর্ষনেতাদের ১৪তম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

 

সি চিন পিং তাঁর ভাষণে বলেন, আরও সার্বিক, ঘনিষ্ঠ, বাস্তব ও সহনশীল গুনগতমানের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গঠন করা এবং ব্রিক্স দেশগুলোর সহযোগিতার নতুন যাত্রা উন্মোচন করা উচিত। এখন শুনবেন বিস্তারিত।

 

গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা আটটায় ব্রিক্স দেশগুলোর পাচঁজন নেতা অনলাইনে ছবি তোলেন। বৈঠকের শুরুতে চিন পিং স্বাগত ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেন,‘গত একবছরে করোনা মহামারি সবদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি কঠিন পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। শান্তি ও নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ আরও চরম হয়েছে। এ কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা বরাবরই উন্মুক্ত ও সহনশীল, সহযোগিতার মাধ্যমে সমন্বিত অর্জনের ব্রিক্স চেতনায় সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করে কঠিনতা কাটিয়ে উঠেছি। ব্রিক্স ব্যবস্থায় প্রতিফলিত হয়েছে বলিষ্ঠতা ও প্রাণশক্তি। ব্রিক্স সহযোগিতার ইতিবাচক অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জিত হয়েছে। মানব জাতি কোন দিকে যাবে? এমন সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের বৈঠক। নবত্থিত বাজার ও উন্নয়নশীল বড় দেশ হিসেবে ব্রিক্স দেশগুলোর উচিত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে বিশ্বের জন্য ইতিবাচক, স্থিতিশীল এবং গঠনমূলক চালিকাশক্তি যোগানো’।

 

শীর্ষসম্মেলনে ‘গুনগত মানসম্পন্ন অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গঠন ও ব্রিক্স সহযোগিতার নতুন যাত্রা উন্মোচন’ শীর্ষক ভাষণও দিয়েছেন সি চিন পিং। ভাষণে তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে শত বছরের অদেখা পরিবর্তন দ্রুত দেখা দিচ্ছে। করোনা মহামারি এখনও ছড়িয়ে পড়ছে। মানব জাতি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত ১৬ বছরে চরম তরঙ্গ ও ঘুর্ণিঝড়ের কবলে পড়েও ব্রিক্স সাহসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এবং পরস্পরকে উত্সাহ প্রদান এবং সহযোগিতার মাধ্যমে কল্যাণ অর্জনের সঠিক পথ আবিষ্কার করেছে। ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমাদের উচিত আশার পথ ফিরে দেখা। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, ব্রিক্স দেশগুলো কেন যাত্রা শুরু করলো? এবং কেন একসাথে ভবিষ্যত সৃষ্টি করতে চায়? আমাদের উচিত হাতে হাত রেখে আরও সার্বিক, ঘনিষ্ঠ, বাস্তব এবং সহনশীল গুণগত মানসম্পন্ন অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গঠন করা এবং ব্রিক্স সহযোগিতার নতুন যাত্রা উন্মোচন করা।

 

এ বিষয়ে তিনি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেশ করেন।

প্রথমত: আমাদের উচিত পরস্পরের সহযোগিতায় অবিচল থাকা এবং বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। কিছু কিছু দেশ সামরিক মৈত্রী সম্প্রসারণ করে চরম নিরাপত্তার চেষ্টা চালায় এবং অন্য দেশকে তার পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে বাধ্য করে। এভাবে চললে বিশ্ব আরও দাঙ্গাময় ও অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। ব্রিক্স দেশগুলোকে একে অপরের কেন্দ্রীয় স্বার্থে পরস্পরকে সমর্থন দেওয়া, বাস্তব বহুপক্ষবাদ বাস্তবায়ন করা, সমতা রক্ষা, আধ্যিপত্যবাদের বিরোধিতা করা, ন্যায্যতা সংরক্ষণ এবং সংহতি রক্ষা করতে হবে।  চীন ব্রিক্স দেশগুলোর অংশীদারদের সঙ্গে বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাব বাস্তবায়ন  এবং অভিন্ন, কমপ্লেক্স, সহযোগিতামূলক ও টেকসই নিরাপত্তামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে বৈরিতার পরিবর্তে সংলাপ, মিত্রের পরিবর্তে সঙ্গি হওয়া, জিরো-সামের পরিবর্তে অভিন্ন অর্জন ভিত্তিক নিরাপত্তামূলক পথ সৃষ্টি করবে, যাতে বিশ্বের স্থিতিশীলতা জোরদার করা যায়।

 

দ্বিতীয়ত: আমাদের উচিত সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন করা এবং একসাথে সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।  ব্রিক্স দেশগুলোর উচিত শিল্প ও সরবরাহ চেইনের যোগাযোগ বাড়ানো এবং দারিদ্র্যবিমোচন, কৃষি, জ্বালানি ও লজিস্টিকসহ নানা ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। চীন ব্রিক্স দেশগুলোর সঙ্গে বিশ্ব উন্নয়নের প্রস্তাব গভীরভাবে সম্প্রসারণ এবং জাতিসংঘ ‘এজেন্ডা ২০৩০’র টেকসই উন্নয়ন বেগবান করবে।

 

তৃতীয়ত: আমাদের উচিত উদ্ভাবন জোরদার করা এবং সহযোগিতার সম্ভবনাময় প্রাণশক্তি চাঙ্গা করা। প্রযুক্তিগত আধিপত্য করা। অবরোধ এবং বাধা দেওয়ার মাধ্যমে অন্য দেশের সৃজনশীল উন্নয়ন ব্যাহত করার পথ ব্যর্থ হবেই। বিশ্ব প্রযুক্তিগত প্রশাসন বিন্যাস তরান্বিত করতে হবে, যাতে অধিক মানুষ প্রযুক্তিগত সাফল্য ভোগ করতে পারেন।

 

চতুর্থত: আমাদের উচিত সহনশীল এবং উন্মুক্ত পথে অবিচল থাকা। ব্রিক্স দেশগুলো দ্বাররুদ্ধ ক্লাব নয়। এটি পরস্পরকে সহযোগিতা করার পরিবার। ব্রিক্স সদস্য সম্প্রসারণ জোরদার করা উচিত, যাতে আরও বেশি অংশীদার ব্রিক্স পরিবারে যোগ দিতে পারে।  

 

(রুবি/এনাম/শিশির)