দেহঘড়ি পর্ব-৭৫
‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, রোগের প্রাক-লক্ষণ নিয়ে আলোচনা ‘উপসর্গে উপলব্ধি’, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা ‘কী খাবো, কী খাবো না।’।
#প্রতিবেদন
হৃদরোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা
হৃদরোগ অনেকটাই জীবনযাপন পদ্ধতির সঙ্গে সম্পর্কিত রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক জীবনাচরণ মেনে চললে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য ছোটবেলা থেকেই শিশুদের জীবনাভ্যাস সম্পর্কে সচেতন করার উপর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে পাঠ্যবইয়ে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের বিষয়টি সংযুক্ত করা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তারা।
সম্প্রতি রাজধানীতে আয়োজিত ‘ঘাতকব্যাধি হার্ট অ্যাটাক: চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
হৃদরোগে চিকিৎসার পাশাপাশি সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা। একইসঙ্গে হৃদরোগমুক্ত থাকতে সচেতনতামূলক নানা পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে মদ্যপান অধিক হারে বেড়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। দেশের বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী ধূমপানে আসক্ত, এটিও বন্ধ করতে হবে। করোনাকালীন ঘরবন্দি মানুষের ফাস্ট ফুড-নির্ভরতা অনেক বেড়েছে। এতে অতিরিক্ত কোলেস্টেরেল গ্রহণে ঝুঁকি বাড়ছে হৃদরোগের।
এসময় হৃদরোগের চিকিৎসায় শহরনির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান বলেন, বেশিরভাগ ক্যাথল্যাব শহরকেন্দ্রিক। কেউ যদি প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে হৃদরোগে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাকে কোথায় নেওয়া হবে। এ নিয়ে একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন। যেন হৃদরোগীরা সবাই চিকিৎসার জন্য ঢাকামুখী না হন। স্থানীয়ভাবে ক্যাথল্যাব ও ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সুবিধার ব্যবস্থা হলে মানুষ সময়মতো চিকিৎসাসেবা পাবে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য টোল ফ্রি নম্বরকে আরও কার্যকর করার তাগিদ দেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হৃদরোগ থেকে বাঁচতে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এরসঙ্গে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগগুলোও সঠিক জীবন যাপনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। - অভি/রহমান
#বুলেটিন
করোনায় মৃত্যু বেড়েছে বিশ্বে
চলমান করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়েছে। একইসঙ্গে আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে সোয়া ৭ লাখ।
এদিকে ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে জার্মানিতে। অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ব্রাজিল। প্রাণহানির তালিকায় এরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও রাশিয়া। এতে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৪ কোটি ৭৩ লাখের ঘর। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার।
শুক্রবার সকালে ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গেল ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৬৫০ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে শতাধিক। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭৬ জনে।
দুই ডোজের আওতায় ১১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গেল একদিনেই সারাদেশে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন এক লাখ ১৩ হাজার মানুষ।
এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১২ কোটি ৮৯ লাখ ৭৪ হাজার জন। এছাড়া দুই ডোজ টিকার আওতায় এসেছেন ১১ কোটি ৮৯ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ। এছাড়াও দেশে এখন পর্যন্ত বুস্টার ডোজ পেয়েছেন দুই কোটি ৮৩ লাখ ২৮ হাজার মানুষ।
‘কৃমি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় সাফল্য’
২০০৬ সাল থেকে শুরু হওয়া কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে বাংলাদেশের উন্নতি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো ও ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনটিডিস’র পরিচালক ডা. আন্তোনিও মন্ট্রেসর।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালে কৃমি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ শতাংশ হলেও বর্তমানে তা নেমে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্বের ১০০টি দেশের মধ্যে প্রথম।
সম্প্রতি রাজধানীতে আয়োজিত কৃমি সংক্রামক ব্যাধি সামিট-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আন্তোনিও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে ১০০টি দেশে এই প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। এসব দেশে কৃমি রোগের প্রধান কারণ দূষিত পানি ও অনিরাপদ পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত অনেক বড় দেশ, সেখানে তারা রাজ্যে ভাগ করে কৃমি নিরোধক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও খুব দ্রুত এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। একই সঙ্গে অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে।
ডব্লিউএইচওর মেডিকেল অফিসার ডা. অনুপমা হাজারিকা বলেন, কৃমি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের নিজস্ব পরিকল্পনা প্রশংসার দাবিদার, বিশেষ করে ক্ষুদে ডাক্তার প্রজেক্ট, যা শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলে। এতে করে শিশুরা এবং তাদের পরিবার বিষয় সচেতন হচ্ছে।
ভাসমান চিকিৎসা কেন্দ্রের উপকরণ নেই: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সিলেট-সুনামগঞ্জসহ বাংলাদেশের ১১ জেলায় বানভাসীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছে দুইশোরও বেশি মেডিকেল টিম। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য দিয়েছেন । তিনি বলেন, অনেক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে ভাসমান চিকিৎসা কেন্দ্র করার মতো উপকরণ দেশে নেই।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেল আয়োজিত এক সামিটে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, দেশে প্রতিবছর বন্যা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কোনো হেলিকপ্টার, পানিতে চলার অ্যাম্বুলেন্সসহ কোনও পরিবহন ব্যবস্থা নেই। সরকারের কাছে বিষয়টির গুরত্ব তলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, স্থানীয় হাসপাতালে বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে রোগী ভর্তি আছে। কিন্তু পানি উঠে যাওয়ায় তাদের অন্য স্থানে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। - অভি/রহমান
## ‘উপসর্গে_উপলব্ধি’
কিডনি রোগের ব্যাপারে সতর্ক হোক এখনি
যে কোনও ব্যক্তির কোনও রোগ নিরাময়ের পূর্বশর্ত হচ্ছে শরীরে রোগটির উপস্থিতি সম্পর্কে জানা। তবে অনেক রোগের ক্ষেত্রে আক্রান্তের বিষয়টি জানা যায় না, রোগটি ইতোমধ্যে শরীর বা শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গের বেশ ক্ষতি সাধন করার আগ পর্যন্ত। এ কারণে সতর্ক থাকা প্রয়োজন ওই ধরনের রোগ শরীরে বাঁধছে কিনা তা জানার জন্য। কিডনি রোগ সম্পর্কে এ কথাটি আরও বেশি প্রযোজ্য। কারণ কিডনির যেটুকু ক্ষতি একবার হয়, তা আর সারা যায় না। আসুন জেনে নিই এ রোগের গুরুত্বপুর্ণ কয়েকটি পূর্বলক্ষণ সম্পর্কে।
ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া
যদি কারও প্রায়ই, বিশেষ করে রাতের বেলায়, ঘন ঘন মূত্রত্যাগ বা প্রস্রাবের বেগ হয় তাহলে এটা কিডনি রোগের লক্ষণ। কিডনির ছাঁকনিগুলো নষ্ট হয়ে গেলে প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ঘন ঘন মূত্রত্যাগ ইউরিন ইনফেকশনেরও পূর্বলক্ষণ। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে গেলেও এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব করা
কিডনির কর্মক্ষমতা বেশিমাত্রায় কমে গেলে রক্তে অপদ্রব্য হিসেবে টক্সিন তৈরি হয়। এর ফলে শরীরে রক্তশূন্যতা বা এনেমিয়াও দেখা দিতে পারে। আর এই রক্তস্বল্পতার কারণেও দুর্বলতা বা অবসাদগ্রস্থতা সৃষ্টি হতে পারে।
নিদ্রাহীনতা দেখা দেওয়া
কিডনি যদি সঠিকভাবে রক্ত পরিশোধন না করতে পারে তাহলে রক্তের টক্সিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হতে পারেনা। এর ফলে টক্সিন রক্তেই থেকে যায়, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই অতিমাত্রায় নিদ্রাহীনতা দীর্ঘস্থানীয় কিডনি রোগের উপসর্গ হতে পারে। এছাড়া স্থূলতার সঙ্গেও দীর্ঘস্থানীয় কিডনি রোগের একটি যোগসূত্র রয়েছে।
চোখের চারপাশে ফুলে যাওয়া
কিডনি বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হলে, আক্রান্ত ব্যক্তির প্রস্রাবের সাথে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন বের হতে পারে। এর ফলে তাঁর চোখের চারপাশে ফুলে যেতে পারে।
প্রস্রাবে বেশি ফেনা হওয়া
প্রস্রাবে অনেক বেশি ফেনা হলে বুঝতে হবে যে, প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ যাচ্ছে। ডিমের সাদা অংশ ফাটানো হলে যেমন ফেনা হয় প্রস্রাবের এই বুদবুদও ঠিক সেই রকম। প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নামক প্রোটিনের উপস্থিতির জন্য এমনটি হয়। কিডনি-ফিল্টার ড্যামেজ হয়ে গেলে এমন প্রোটিন জাতীয় পদার্থ প্রস্রাবের সঙ্গে বের হতে থাকে।
ক্ষুধামন্দা দেখা দেওয়া
শরীরে টক্সিনের উৎপাদন বেড়ে গেলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়। এর ফলে রোগীর ক্ষুধার পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে।
পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া
কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। ফলে রোগীর পায়ের পাতা ও গোড়ালি ফুলে যায়। এই পায়ের নীচের অংশ ফুলে যাওয়া হৃদরোগ ও লিভারের জটিলতাসহ নানাবিধ দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করতে পারে।
প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
কিডনি রক্ত কণিকাগুলোকে শরীরের ভিতরে ছেঁকে রেখে বর্জ্য পদার্থ মূত্র হিসেবে বের করে দেয়। তবে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হলে প্রস্রাবের সাথে রক্ত কণিকা বের হতে শুরু করে। ফলে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে। রক্ত যাওয়ার এই লক্ষণ কিডনি রোগের পাশাপাশি টিউমার, কিডনি পাথর বা ইনফেকশনেরও ইঙ্গিত দেয়।
মাংসপেশীতে খিঁচুনি হওয়া
কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এই ভারসাম্যহীনতার জন্য মাংসপেশিতে খিঁচুনি জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া বমি বমি ভাব, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, সব সময় ঠাণ্ডা অনুভব করা, মাথা ঘোরা, কোমর ও পায়ে ব্যাথা হওয়া ইত্যাদি উপসর্গগুলোও দেখা দিতে পারে।
শরীরের চামড়া শুষ্ক হয়ে যাওয়া
কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল বের করে দেয়, লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে, হাড়কে শক্তিশালী করা এবং দেহে খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু কিডনি যখন এসব উপাদানের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনা তখন শরীরের চামড়া শুষ্ক ও ফেটে যেতে পারে।- রহমান
## আপনার ডাক্তার
দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি বা অপরিণত শিশু অন্ধত্ব নিয়ে। বাংলাদেশের জন্য আরওপি সমস্যাটি যত বড়, ততটা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় না। জাতিসংঘের উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে, ৬ লাখ শিশুর জন্ম হয় অপরিণত অবস্থায়। অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া এসব শিশুদের মধ্যে ২০ থেকে ২২ শতাংশ আরওপি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আমাদের সাথে যুক্ত হন দেশের একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক ডা. লুত্ফুল হোসেন। ডা. লুত্ফুল হোসেন বর্তমানে দায়িত্ব পালন করেছেন অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ হিসাবে।
#কী খাবো, কী খাবো না
গুণে ভরপুর কাজু বাদাম
স্বাস্থ্যগত গুণ বিবেচনায় কাজু বাদামের জুড়ি নেই। কাজু বাদাম প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনসহ পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ একটি বীজ। এ বাদামের আদিনিবাস ব্রাজিলে হলেও সারাবিশ্বের উষ্ণ আবহাওয়ার দেশগুলোতে এখন এটি চাষ হয়। কাজু বাদাম চিবিয়ে খাওয়া যায়; আবার রান্না করেও খাওয়া যায়। এটি রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধি করে। কাজু বাদামে যে পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়, তা রান্না করা মাংসে পাওয়া প্রোটিনের প্রায় সমান। এ ছাড়া এতে অধিক পরিমাণে আঁশ থাকে কিন্তু শর্করার পরিমাণ থাকে কম।
নানা পুষ্টি উপাদানের কারণে কাজু বাদামের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা অনেক। হাড়ের জন্য এটি ভীষণ উপকারী। পাশাপাশি ওজন কমাতে, হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে এবং ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে কাজু বাদাম। চলুন জেনে নিই কাজু বাদামের কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে:
ওজন কমায়:
অন্যান্য বাদামে বেশি পরিমাণে ক্যালোরি ও স্নেহজাতীয় পদার্থ থাকে বলে সেগুলো ওজন বাড়ায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাজু বাদামে যে পরিমাণ ক্যালোরি থাকে, তার ৮৪ শতাংশই পোড়াতে এবং শুষে নিতে পারে মানব দেহ। এ ছাড়া এটি প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় ক্ষুধা কমাতে এবং পেটভরা রাখতে সহায়তা করে বলে দেহের ওজন কমে।
চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে:
কাজুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর রেটিনার ক্ষমতা বাড়ায়। সেই সঙ্গে মলিকিউলার ডিজেনারেশের আশঙ্কা কমায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার সম্ভবনা হ্রাস পায়। যাদের দিনের বেশিরভাগ সময় কম্পিউটার বা ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে কাজ করতে হয়, তাদের উচিৎ নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়া।
নার্ভের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম নার্ভের ক্ষমতা বাড়িয়ে সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর একবার ব্রেন পাওয়ার বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে ব্রেনের কগনিটিভ ফাংশনেরও উন্নতি ঘটে। ফলে বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগও বাড়তে শুরু করে।
হাড় শক্ত করে:
কাজু বাদামে ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ থাকার কারণে এটি হাড়ের জন্য ভীষণ উপকারী। এ ছাড়া মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় কপারের অভাব পূরণ করে এটি।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের আধার:
কাজু বাদামকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগ, চোখের বিভিন্ন রোগ ও স্মৃতিশক্তিজনিত যে কোনও সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বজায় থাকে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
হার্ট সুস্থ রাখতে এবং স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ভীষণ উপকারী কাজু বাদাম। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে তা রক্তচাপ ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে:
রক্তচাপ ওঠা-নামা করলে দ্রুত কাজু খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এই বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে:
ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করে কাজু বাদাম। এতে থাকা ফাইবার রক্তের শর্করার স্পাইক প্রতিরোধে সহায়তা করে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে।
অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমায়:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কাজু খেলে দেহে কপার ও আয়রনের ঘাটতি দূর হয়। ফলে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমে।
কাজু বাদামের এতো উপকারিতা থাকলেও এটি খাওয়ার সময় কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। এটি কাঁচা অবস্থায় না খেয়ে ভেজে খাওয়া ভালো। কারণ কাঁচা অবস্থায় এতে উরুশিওল নামে একটি বিষাক্ত পদার্থ থাকে, যা মানুষের ত্বকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। - রহমান
‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।