জমে উঠেছে জাতীয় বৃক্ষমেলা
2022-06-23 19:35:05

আফরিন মিম, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বাংলাদেশে আয়োজন করা হয়নি বৃক্ষমেলা। এবার রাজধানী ঢাকায় বসেছে বৃক্ষমেলার জমজমাট আয়োজন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে চলছে মাসব্যাপী ‘জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০২২’। এবারের জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ-প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ’।

বন অধিদপ্তর আয়োজিত বৃক্ষমেলায় স্টল রয়েছে ১১০টি। মেলায় প্রতিদিন হাজার হাজার চারাগাছ বিক্রি হচ্ছে। বন বিভাগ জানিয়েছে, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিক্রিত চারার সংখ্যার ৯ লাখ ৮২ হাজার ১২৫। যার বিক্রয়মূল্য ৬ কোটি ১৬ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬৯ টাকা। 

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকৃতিপ্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে বৃক্ষমেলা। বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ, সার, গাছ পরিচর্যার যন্ত্রপাতি বিক্রিও হচ্ছে বেশ। বৃক্ষমেলায় দর্শনার্থীরা ঘুরেঘুরে দেখছেন, ভিডিও করছেন, ছবি তুলছেন।

মেলা ঘুরে দেখা যায় চেনা অচেনা নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ। এদের মধ্যে আছে ডুরিয়ান, অলিভ, কাউ, পিচ, কিউই ফল, অ্যাভোকেডো, আলমন্ডা, ড্রাসিনা, লোকাট ফল, এবিউ ফল কালোজাম, সাতকরা, সফেদা, কদবেল, আতা, কুল, বড়ই, ডালিম, করমচা, বেল, জাম্বুরা, কাঁঠাল, লাল কাঁঠাল, চাম কাঠাল, ডুমুর, কাজু বাদাম। আছে জবা, ম্যান্ডেভিলা, হাসনাহেনা, পলাশ, কনকচাঁপা, বাসন্তি, মালতী, নয়নতারা ফুলের চারা। দেখা মিলবে আঁশফল, ঘৃতকুমারী, লটকনসহ নাম জানা-অজানা হাজারো ফল ও ফলের দেশি-বিদেশি গাছ। চারাগুলোতেও ধরেছে মৌসুমী ফল।

মেলার বেশিরভাগ স্টলেই দেখা যায় নানা জাতের আমগাছের পসরা। এর মধ্যে রয়েছে জাপানি সূর্য ডিম, কিং অব চাকাপাত, ব্রুনাই কিংসহ দেশি–বিদেশি নানা জাতের আমগাছ। ছাদবাগানে চাষের উপযোগী এসব গাছে ঝুলছে রংবেরঙের থোকা থোকা আম।

-

বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের পাশাপাশি মেলায় বিভিন্ন ধরনের অর্কিড পাওয়া যাচ্ছে। বাসার বারন্দা কিংবা জানালায় ঝুলিয়ে রাখার মতো ডেনড্রোবিয়াম, ক্যাটারিয়া, ভ্যারেন্ডা জাতের অর্কিড পাওয়া যাবে ৩০০ থেকে আড়াই হাজার টাকায়।

রাজধানীর মুগদা থেকে বৃক্ষমেলায় এসেছে সুম্মিতা খাতুন। তিনি চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে জানান, ‘আমাদের বাসায় ছাদ বাগান আছে, এইজন্য মেলায় আসছি গাছ কিনতে, ভালো লাগে গাছ লাগাতে। দুই বছর আসার সুযোগ হয়েছে মেলায়”।

মায়ের সাথে মেলায় গাছ কিনতে এসেছে বারো বছর বয়সী আজমির রায়হান। চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে জানান, “গাছ আমার খুব পছন্দ। তাই কিনতে এসেছি গাছ”।

মহামারির গেল দুই বছরের ধাক্কা কাটিয়ে এবার ভালো বিক্রির আশা নিয়ে স্টল দিলেও খুব বেশি ভালো বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান আবাদী নার্সারির মালিক সালমা বানু শিফা। ২০০৫ সাল থেকে জাতীয় বৃক্ষমেলায় অংশ নেন তিনি।

আবাদী নার্সারির মালিক সালমা বানু শিফা চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে জানান, “দুই বছর খুব লস হয়েছে আমাদের। কর্মীও ছাটাই করতে বাধ্য হয়েছি। এখন মেলায় আসছি আশা নিয়ে। কিন্তু তেমন বিক্রি হয়নি এবার। মানুষ-জনও কম আসতেছে মেলায়।

অন্যদিকে এবার গাছ বিক্রি নিয়ে আশাবাদী সুবুজ আলো নার্সারীর মালিক সুলাইমান রহমান। তিনি চীন আনতর্জাতিক বেতারকে জানান, “সব ধরনের গাছই বিক্রি হচ্ছে কমবেশি। তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে ফলের গাছ। আশা করি এবার ভালো বিক্রি হবে”।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী এই বৃক্ষমেলা চলবে আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য বৃক্ষমেলায় প্রবেশ একদম ফ্রি।

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু