জুন ২৩: চলতি বছর চীন ও পূর্ব তিমুরের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ২০তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। পূর্ব তিমুরে চীনের রাষ্ট্রদূত চিয়াও চিয়াংকুও এক সাক্ষাত্কারে বলেন, ২০ বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সবসময় একটি সুস্থ ও স্থিতিশীল উন্নয়নের গতি বজায় রেখেছে। দেশদুটি একে অপরকে সমান হিসাবে বিবেচনায় রেখে, একে অপরকে সমর্থন করে এসেছে এবং জয়-জয় ভিত্তিতে সহযোগিতা করে চলেছে। দু’দেশের সম্পর্ক ছোট দেশের সঙ্গে বড় দেশের সম্পর্কের মডেলে পরিণত হয়েছে।
এশিয়ার ‘কনিষ্ঠ’ দেশ হিসাবে, পূর্ব তিমুর এখনও অনেক চীনার কাছে অপরিচিত একটি নাম। চিয়াও চিয়াংকুও দেশটিকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সুন্দর ও নির্মল, মানুষগুলো সহজ-সরল, এবং দেশটি তরুণ ও উদ্যমী।” পূর্ব তিমুরে গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়া বিরাজ করে। এখানে আর্দ্রতা বেশি। এখানকার আকাশ নীল, সমুদ্র পরিষ্কার, দৃশ্যাবলী সুন্দর, এবং এখানে কোনো ইন্ডাস্ট্রি নেই। ২১ শতকে একটি দেশে কোনো ইন্ডাস্ট্রি না থাকা সত্যিই বিরল। পর্যটকরা দেশটির প্রতি আকৃষ্টি হচ্ছেন ক্রমবর্ধমান হারে। এখানকার স্থানীয় রীতিনীতির সাথে চীনাদের রীতিনীতির খানিকটা মিল আছে। পূর্ব তিমুরের মানুষ পরিবারকে গুরুত্ব দেয়। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিকাজ করে। তাদের জীবন সহজ, চাহিদা কম। তারা অল্পতে সন্তুষ্ট, সহজ-সরল ও বন্ধুভাবাপন্ন। দেশটির বয়স মাত্র ২০ বছর। এটি এশিয়ার সর্বকনিষ্ঠ দেশ। এ দেশের তরুণ-তরুণীরা উদ্যমী।
২০০২ সালের ২০শে মে পূর্ব তিমুর চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। একই দিনে, দুটি দেশ পূর্ব তিমুরের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দেয়। রাষ্ট্রদূত চিয়াও চিয়াংকুও বলেন, পূর্ব তিমুরের সাথে চীনের সম্পর্ক ছোট দেশের সাথে বড় দেশের সম্পর্কের মডেলস্বরূপ। তিনি বলেন,
“পূর্ব তিমুর মাত্র ২০ বছর আগে স্বাধীনতা পায়। কিন্তু দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিনিময়ের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। চীনের থাং, সং, ইউয়ান, মিং এবং ছিং রাজবংশ আমলের শুরুতে, পূর্ব তিমুর প্রাচীন সামুদ্রিক রেশমপথের একটি স্টপেজ ছিল। কথিত আছে, প্রাচীন কালের একজন নৌযাত্রী চেং হ্য এই দ্বীপটি পরিদর্শন করেছিলেন। এদেশের বিদেশী জনগোষ্ঠীল একটা বড় অংশ চীনা। আধুনিক সময়ে পূর্ব তিমুরের জাতীয় মুক্তি ও জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রক্রিয়ায়, চীন পূর্ব তিমুরের জনগণকে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছে। পূর্ব তিমুর তার স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার পর, চীন তার সামর্থ্যের মধ্যে উন্নয়ন-সহায়তা দিয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারিক সহযোগিতা দিয়েছে, ঐতিহ্যগত বন্ধুত্ব ক্রমাগত গভীর থেকে গভীরতর করেছে, এবং পূর্ব তিমুর "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগের আওতায় চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালে পূর্ব তিমুরের সাথে চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস ও কল্যাণের ভিত্তিতে ব্যাপক অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত হয়। অতএব, পূর্ব তিমুর আমাদের ভাল বন্ধু, ভাল অংশীদার এবং আমাদের ভাল ভাই এবং ভাল প্রতিবেশী।”
পূর্ব তিমুর ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের’ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। রাষ্ট্রদূত চিয়াও চিয়াংকুও বলেন, দুই দেশের মধ্যে, যৌথভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায়, অবকাঠামোগত আন্তঃসংযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চীনা উদ্যোগের আওতায় "এক নেটওয়ার্ক", "এক রাস্তা" এবং "এক বন্দর" শীর্ষক বিভিন্ন প্রকল্প পূর্ব তিমুরের জন্য বাস্তব কল্যাণ বয়ে এনেছে। রাষ্ট্রদূত বলেন,
“‘ওয়ান গ্রিড’ বলতে চায়না ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার কর্পোরেশন দ্বারা নির্মিত ও রক্ষণাবেক্ষণকৃত ইস্ট স্টেট পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পকে বোঝায়। এই প্রকল্পটি পূর্ব তিমুরে আলো এনেছে এবং দেশটির তীব্র বিদ্যুতের ঘাটতি অনেকটাই দূর করেছে। এর আগে এদেশের রাজধানীর নাগরিকরা লোডশেডিংয়ের শিকার হতেন নিয়মিত বিরতিতে। 'এক রাস্তা' চীন রেলওয়ে কর্তৃক নির্মিত সুয়াই এক্সপ্রেসওয়েকে বোঝায়, যা একটি আদর্শ দ্বি-মুখী চার-লেনের আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে এবং পূর্ব তিমুরের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াত এতে অনেক সহজ হয়েছে। 'এক বন্দর' হল টিবা বন্দর প্রকল্প চীনের হংকংয়ের একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি নির্মাণাধীন রয়েছে এবং বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এর কাজ শেষ হবে। এটি হবে দেশটির প্রথম আধুনিক আন্তর্জাতিক বন্দর। বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল পূর্ব তিমুরের সরবরাহ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি ঘটাবে, আমদানি ও রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াবে এবং পূর্ব তিমুরের অর্থনীতি ও জনগণের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এই প্রকল্প স্থানীয় জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা বয়ে আনবে।"
বিভিন্ন প্রকল্প-চুক্তির পাশাপাশি, চীন সরকার অবকাঠামোগত দিক দিয়েও পূর্ব তিমুরকে অনেক নিঃস্বার্থ সহায়তা দিয়েছে। ১০ বছর আগে, পূর্ব তিমুরের রাজধানীতে চীনা সহায়তায় নির্মিত হয় ইস্ট প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এগুলো দেশটির ল্যান্ডমার্ক ভবনে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীন শস্যভাণ্ডার নির্মাণ, ডিজিটাল টিভি সম্প্রচারের প্রদর্শনী প্রকল্প বাস্তবায়নেও দেশটিকে সহায়তা করেছে এবং শীঘ্রই একটি হাসপাতাল, একটি স্কুল এবং একটি ফুটবল মাঠ নির্মাণে সহায়তা করবে৷ (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)