৪০ হাজার শব্দের প্রবন্ধে মিথ্যাচারের সম্রাট- যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত চেহারা খণ্ডন করা হয়েছে সিএমজি সম্পাদকীয়
2022-06-21 14:29:18

জুন ২১: সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জন ব্লিনকেন এশিয়া সমিতিতে চীনবিষয়ক নীতি সম্পর্কে এক ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি ‘চীনা হুমকি’ নিয়ে অপপ্রচার করার পাশাপাশি চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছেন এবং চীনের ‘দেশি-বিদেশি নীতির’ সুনামহানি করার চেষ্টা করেছেন। তবে এসব বক্তব্য দিয়ে চীনকে প্রতিরোধ করার আচরণ ও মার্কিন দ্বৈত মানদণ্ডের চেহারা ঢাকা যাবে না। গত ১৯ জুন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভুল ধারণা এবং বাস্তবতা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। তাতে বাস্তব তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে চীন নিয়ে মার্কিন মিথ্যাচার, ভণ্ডামি ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ তুলে ধরা হয়।

 

কে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করেছে? কে বাধ্যতামূলক কূটনীতি চালাচ্ছে? কে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে? কে দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বজুড়ে নজরদারি করছে? সেই ৪০ হাজার শব্দের প্রবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ২১টি ভুল তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বিশ্ব স্পষ্টভাবে জানতে পারে যে- বিশ্বে বিশৃঙ্খলার উত্স, বাধ্যতামূলক কূটনীতি উদ্ভাবনকারী এবং বিশ্বের বৃহত্তম মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশ এবং বিশ্বের বৃহত্তম সাইবার হামলাকারী- হ্যাকার দেশ হলো একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র।

এর মধ্যে মার্কিন রাজনীতিকরা যে কথিত ‘চীন আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার জন্য বৃহত্তম কঠোর চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে’ বলে অপপ্রচার চালায়, তা সবচেয়ে খারাপ মিথ্যাচার। যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে আন্তর্জাতিক আইন, চুক্তি, নীতি ও সংস্থাকে রক্ষা করেছে, যা সাদাকে কালো করে দেখানোর মতো ব্যাপার। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও বিশ্ব উন্নয়নের দিক থেকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক আচরণ তুলনা করা যাক।

 

জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা দেশ হিসেবে চীন সর্বপ্রথমে জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষর করেছে। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীন সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষী সেনা পাঠিয়েছে এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার মিশনে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থদাতা দেশ হলো চীন। বিশ্বের নানা সমস্যা সমাধান এবং বিশ্বের শৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে চীন ধারাবাহিকভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ, বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ এবং বিশ্ব নিরাপত্তা উদ্যোগ উত্থাপন করেছে। ফিলিপিন্সের ব্রিক্স দেশসমুহের নীতিবিষয়ক গবেষণালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, চীন বাস্তবসম্মত পদ্ধতিতে বহুপক্ষবাদে অবিচল রয়েছে।

 

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ২৪০ বছরের বেশি সময়ে মাত্র ১৬ বছর যুদ্ধ-ছাড়া ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাই দেশটিকে বিশ্বের ইতিহাসে যুদ্ধ-অনুরাগী দেশ বলা যেতে পারে। গত সোমবার ছিল ২২তম বিশ্ব শরণার্থী দিবস। জাতিসংঘ শরণার্থী দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সংঘাত ও অত্যাচারের কারণে নিজের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থী, শরণার্থী আবেদনকারী এবং গৃহহীনের সংখ্যা প্রথমবারের মতো ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো কয়েকটি দেশ দীর্ঘকাল ধরে হামলা, সংগ্রাম ও অন্যায় হস্তক্ষেপের কারণে এ বিরাট সংখ্যায় পৌঁছেছে।

 

বিশ্বের উন্নয়ন লঙ্ঘন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নিজ দেশের আইনকে আন্তর্জাতিক আইনের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে দেশটি। জাতিসংঘের প্রস্তাব উপেক্ষা করে শাস্তি প্রয়োগ, ব্যাংকিং ও প্রযুক্তি খাতে আধিপত্য করে অন্য দেশের শৈল্পিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি আচরণ আন্তর্জাতিক নীতিমালা লঙ্ঘন করছে।

 

ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বর্তমান সরকার বহুপক্ষবাদের অজুহাতে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা ও চুক্তিতে পুনরায় যোগ দেয়। তবে বাস্তবতা প্রমাণ করেছে যে, এটি ‘যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দ্বিতীয় সংস্করণ”। সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র ৫৪তম বার আপীল সংস্থার বিচারপতিদের পুনরায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। যার ফলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই বৃহত্তম সংকট তৈরি হয়।

 

তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ‘নকল বহুপক্ষবাদের’ অজুহাতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে হাত বাড়িয়েছে। দেশটি কথিত ‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামো’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেছে। যার লক্ষ্য- যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাণিজ্যিক নীতিবিধি গড়ে তোলা এবং এ অঞ্চলের দেশগুলো থেকে চীনকে বিচ্ছিন্ন করা। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগত স্বার্থ-ভিত্তিক এই বাণিজ্যিক কাঠামো মহামারি উত্তর বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন ‘কূটনীতি’ ম্যাগাজিনের এক বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, দীর্ঘকাল ধরে এমন আচরণের কারণে আঞ্চলিক অর্থনীতির উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে।

(রুবি/তৌহিদ/শিশির)