জুন ২০: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১২তম মন্ত্রীদের সম্মেলন সম্প্রতি জেনিভায় শেষ হয়েছে। তাতে পরিকল্পনার বাইরে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চীনা প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত লি ছেং কাং সিএমজিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, এ সম্মেলনের সাফল্য সংস্থাটির সদস্য দেশসমূহের পারস্পরিক সমর্থনে অর্জিত হয়েছে, তাতে সদস্যদের সমন্বয় করে ও সংহতি গড়ে কঠিনতা কাটিয়ে ওঠার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা প্রতিফলিত হয়েছে। সম্মেলন চলাকালে চীন গঠনমূলক ও দৃষ্টান্তপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেছে। বাস্তব বহুপক্ষবাদ এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-কেন্দ্রিক বহুপক্ষবাদী ব্যবস্থা রক্ষা করা চীনের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রদূত।
গত ১২ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১২তম মন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশ কয়েকবার বৈঠকের ফলে ‘১ প্লাস ৪’ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এক মানে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১২তম মন্ত্রীদের সম্মেলনের সফল দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাতে বিভিন্ন পক্ষ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-কেন্দ্রিক বহুপক্ষবাদী ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার চালানোয় একমত হয়েছে। চার মানে করোনা মহামারি, মত্স্য খাতে ভতুর্কি, খাদ্য নিরাপত্তা ও ই-কমার্সসহ নানা ক্ষেত্রে মতৈক্য বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে সবপক্ষ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চীনা প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত লি ছেং কাং বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সমন্বয় ও সম্মতির নীতি পালন করে। সংস্থাটির সদস্য দেশসমূহের পরস্পরকে দেওয়া সমর্থন ও সমন্বয়ের কারণে এবারের সম্মেলনের সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চীন এ সম্মেলনে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন,‘চীন সম্মেলনে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছে বলে আমি মনে করি। সববিষয়ে সদস্য দেশ হিসেবে নিজের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। পাশাপাশি, সামগ্রিক অবস্থান পালন করে চীন। সেটি হল বাস্তব বহুপক্ষবাদ। আমরা সদস্য দেশগুলোর স্বার্থকে সমর্থন করি। তাই সকলের স্বার্থ ও চীনের স্বার্থে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা চালায় চীন। মাঝেমধ্যেই সকলের মতৈক্য অর্জনের জন্য আমরা নিজের চাহিদাও কমিয়ে আনি’।
লি ছেং কাং বলেন, করোনা ভাইরাসের টিকার মেধাস্বত্বে ছাড় দেওয়া, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংস্কার, মত্স্য খাতে ভর্তুকিসহ নানা ক্ষেত্রে চীনের গঠনমূলক ভূমিকা প্রতিফলিত হয়েছে। যেমন: করোনা ভাইরাসের টিকার মেধাস্বত্বে ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য একদিকে চীন নিজের উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিন ছাড়ের আওতাভুক্ত করেছে। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট উদ্বেগ সমাধানের প্রেক্ষাপটে করোনা ভ্যাকসিনের দিকে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে উপকারিতার জন্য প্রতিদ্বন্দিতা করেনি বেইজিং।
লি আরও বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় বড় সদস্য দেশগুলোর পরিচালনামূলক ভূমিকা উপেক্ষা করা যায় না। অনেক উন্নত দেশ বড় দেশ। চীন, ভারত ও ব্রাজিলসহ নবত্থিত অর্থনৈতিক সত্ত্বাও বড় দেশ। এবারের সম্মেলনে বড় দেশুলোর মধ্যে সমন্বয়, বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে সম্মেলনের সাফল্যের জন্য পরিচালনামূলক ও দৃষ্টান্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
লি ছেং কাং বলেন,‘বলা বাহুল্য, সম্মেলনের প্রক্রিয়ায় বড় দেশগুলোর মধ্যে এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পরিকল্পনার বাইরে ভালো হয়েছে। বিশেষ করে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক মন্দাবস্থানে থাকার প্রেক্ষাপটেও চীন-যুক্তরাস্ট্র সহযোগিতা ও সমন্বয় বহুপক্ষবাদ বাস্তবায়নে যে ভূমিকা পালন করেছে, তা সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে’।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় রয়েছে ১৬৪টি সদস্য দেশ। তাই রয়েছে অর্থনীতির বৈচিত্র্য। প্রতিটি নীতি প্রণয়ন করা হলে সকল সদস্যের সম্মতি দরকার। তাই সবপ্রক্রিয়া খুব কঠিন। লি ছেং কাং বলেন, এবারের সম্মেলনে চীন সমন্বয়কারী হিসেবেও ভূমিকা পালন করেছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন আকারে অর্থনৈতিক সত্ত্বার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছে চীন। বিশেষ করে উন্নত সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বড় অর্থনৈতিক সত্ত্বা হিসেবে চীনও সমন্বয়ে অংশগ্রহণ করেছে।
(রুবি/এনাম/শিশির)