‘প্রেসিডেন্টের আন্তরিকতা আমাদের মুগ্ধ করেছে’
2022-06-17 19:52:02

কিছু স্মৃতি চিরদিন মনে থেকে যায়। চীনের নিং সিয়া হুই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বাসিন্দা সিয়ে সিং ছাং’র জন্য তার গ্রামে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের পরিদশর্ন তাদের আন্তরিক উত্সাহ দিয়েছে, সেটি সত্যি তাকে মুগ্ধ করেছে এবং তিনি কখনো এ স্মৃতি ভুলে যাবেন না।   

 

২০১৬ সালের ১৯ জুলাই চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নিং সিয়া হুই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইং ছুয়ান শহরের ইয়ো নিং জেলার মিন নিং উপজেলার ইউয়ান লুং গ্রামে স্থানান্তরিত জনগণকে দেখতে যান। তিনি স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলেন। সিয়ে সিং ছাং সে সময় সেখানে ছিলেন।

 

সম্প্রতি তিনি সে সময়ের কথা এবং তার গ্রামের লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, আমরা যেখানে স্থানান্তরিত হয়েছি, সে স্থান গত ২০ বছর আগে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং’র নির্দেশনায় ফু চিয়ান প্রদেশ ও নিং সিয়া অঞ্চল

 

যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। সে সময় এ স্থানের আকাশে পাখি উড়তো না, মাটিতে ঘাস হতো না। কেবল বালি আর বালি ছিল। বর্তমানে স্থানটি সুন্দর পরিবেশ এবং সুখী জীবনের সোনালী বালির সৈকতে পরিণত হয়েছে। স্থানান্তরিত হওয়ায় আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।

 

আমি প্রায়ই প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং’র পরিদর্শনের সে দিনের কথা স্মরণ করি। সে দিন আমি খুব উত্তেজিত হয়ে প্রেসিডেন্টকে বলেছিলাম, আমার পরিবার সি হাই কু নামের পাহাড়ী উপত্যকা থেকে এখানে স্থানান্তরিত হয়েছে। সে সময় থেকে এখন প্রায় বিশ বছর হয়েছে। প্রতিদিন পরিবর্তন ঘটছে এখানে।

 

সে সময় সি চিন পিং বলেছিলেন, ‘আমাদের সমাজতন্ত্রের বড় পরিবারের সবার কাছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকারের উষ্ণতা পৌঁছে দিতে চাই। এখানে নতুন গ্রামের সুন্দর পরিবেশ এবং সবার সুখী ও দারিদ্র্যমুক্ত জীবন দেখে আমি মন থেকে আনন্দিত।

 

 চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং’র আন্তরিকতা আমাদের মনকে উষ্ণ করে দিয়েছিল। তাঁর মন এবং আমাদের সাধারণ মানুষের মন ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত হয়েছিল বলে আমি অনুভব করেছি।

 

আমি সে সময় প্রথম দফায় এখানে স্থানান্তরিত হয়েছি। তাই মিন নিং উপজেলার উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছি। মিন নিং উপজেলা অতীতে মিন নিং গ্রাম ছিল। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সে দিনই তত্কালীন ফু চিয়ান প্রদেশের সিপিসির উপসম্পাদক সি চিন পিং এক অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছিলেন। আমি তাঁর বার্তা শুনেছি এবং খুব উত্তেজিত ছিলাম। কারণ সে সময় মিন নিং খুব গরিব হলেও ভবিষ্যত সম্ভাবনায়ময় বলে আমি বিশ্বাস করেছিলাম।

 

গত কয়েক বছরে মাশরুম, আঙ্গুর চাষ, গরু লালনসহ নানা শিল্প উন্নয়ন করেছে এখানকার গ্রাসবাসীরা। গ্রাসবাসীর সংখ্যা হাজার থেকে বর্তমানে ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে।

 

আমাদের গ্রাম পরিদর্শনের সময় সি চিন পিং আমাদের বলেছেন, মিন নিং উপজেলা একটি সুষম পথ আবিস্কার করেছে। এ দৃষ্টান্তমূলক অভিজ্ঞতা সম্প্রসারণ করতে হবে। সকল বাসিন্দাদের আরও সুখী জীবনের কামনা করেন তিনি। প্রেসিডেন্টের উত্সাহে আমরা আরও পরিশ্রমী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছি।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিন নিং উপজেলায় আরও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। রাস্তাঘাট, চিকিত্সা একাডেমী ও স্কুলসহ নানা কাঠামোগত ব্যবস্থা অধিকতর ভালো হয়েছে। সবাই সুন্দর পরিবেশ ও সুবিধাজনক জীবন উপভোগ করতে পারছেন।

 

 

ভারতের গ্রামবাসীদের পানীয় জল সংকট সমাধানে ব্রিক্স ব্যাংক

 

ভারতের উত্তরাঞ্চলের পার্বত্য হিমাচল প্রদেশে ব্রিক্স’র নতুন উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে গ্রামীণ জল ব্যবস্থা প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে। এ প্রকল্প সম্পন্ন হলে স্থানীয় ৫ লাখ গ্রামবাসীর জল সংকট সমাধান হবে। বর্তমানে পাইপ সম্প্রসারণের কাজ সুষ্ঠুভাবে চলছে এবং পানির ট্যাংক স্থাপনের কাজও শুরু হতে যাচ্ছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা গণমাধ্যমকে বলেন, তারা জন্মের পর থেকে বাড়ীতে পানি সরবরাহ সংকট দেখে আসছেন। পানি থাকলেও তা কেবল আধা ঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এক ঘন্টা স্থায়ী হতে কখনো দেখেননি তারা। মাঝেমধ্যে বিদ্যুত্ চলে গেলে ৫ থেকে ৮ দিন পানি থাকে না।

 

হিমাচল রাজ্যে গ্রামীণ পানি সরবরাহের কাঠামোগত ব্যবস্থা ছিল না। প্রয়োজনীয় পানি ব্যবহার করতে অনেকে অসুবিধায় পড়ে। ব্রিক্স’র নতুন উন্নয়ন ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ রাজ্যের ৪২ শতাংশ মানুষ পানীয় জল সংকটে রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে প্রতিদিন পানি আনতে ও সেভ করতে অত্যন্ত দুঘন্টা সময় লাগে।

 

২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্রিক্স’র নতুন উন্নয়ন ব্যাংক এ অঞ্চলের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রকল্পে ৮ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ অনুমোদন করেছে। এ প্রকল্পে মোট ১০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে। বাকি অর্থ ভারত বহন করবে। এ প্রকল্প সম্পন্ন হলে হিমাচল রাজ্যের ৮টি অঞ্চলের ১,২৫৫টি গ্রামের ৫ লাখ বাসিন্দা সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

 

এ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ব্রিক্স’র নতুন উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্প হিমাচল রাজ্যের বাসিন্দাদের জন্য কল্যাণকর হবে। হিমাচল রাজ্য পবর্তাঞ্চলে অবস্থিত। বাসিন্দারা অনেক দূর থেকে পানি আনেন। বিশেষ করে নারীরা দৈনন্দিন পানীয় জল আনতে ছুটেন।

 

প্রকৌশলী আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে এ প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ শুরু হয়েছে। শুরুর চার মাসের মধ্যেই নতুন ব্যাংক থেকে তারা প্রথম অর্থ লাভ করেছেন। এটি রেকর্ডের মতো দ্রুত।

 

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিক্স’র নতুন উন্নয়ন ব্যাংক। এ ব্যাংকের সদর দপ্তর শাংহাইয়ে অবস্থিত। তার লক্ষ্য হচ্ছে ব্রিক্স দেশগুলোসহ নানা অর্থনৈতিক সত্ত্বা ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কাঠামোগত ব্যবস্থা ও টেকসই উন্নয়নের প্রকল্পগুলোর সম্পদ সুবিন্যাস্ত করার পাশাপাশি বহুপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ব্যাংকিং সংস্থা হিসেবে বিশ্ব উন্নয়ন ও বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা। ২০২২ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি সদস্য দেশগুলোকে ৩,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেবে।

 

নতুন উন্নয়ন ব্যাংক সম্প্রতি ভারতে আঞ্চলিক শাখা অফিস স্থাপনের ঘোষণা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ শাখা অফিস সদর দপ্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চালাবে, যাতে ভারত ও বাংলাদেশের অবকাঠামো ও টেকসই উন্নয়নের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য নিজের অবদান রাখা যায়।

 

ভারতের নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া-বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের মহাপরিচালক বলেন, ব্রিক্স দেশগুলোর মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন উন্নয়ন ব্যাংক ব্রিক্স দেশগুলোর উন্নয়ন ও সামাজিক কাঠামোগত ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

 

(রুবি/এনাম)