বিখ্যাত শিল্পী লান থিয়েন ইয়ে
2022-06-16 10:16:58

চলতি বছরের ৮ জুন ‘পহেলা জুলাই পদকের’ অর্জনকারী, পারফরম্যান্স শিল্পী ল্যান থিয়েন ইয়ে বেইজিংয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯৫ বছর। লোকেরা দুঃখজনকভাবে বললেন, ‘একটি যুগ শেষ হয়েছে।

ল্যান থিয়েন ইয়ের আসল নাম ছিলো ওয়াং রুন সেন। হ্যবেই প্রদেশের একটি বড় পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৭ সালের জুন মাসে মাত্র এক মাস বয়সে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেইপিং, বর্তমানের বেইজিং শহরে আসেন।

 

ল্যান থিয়ে ইয়ে ছোটবেলায় অপেরা এবং চিত্রকলা পছন্দ করতেন এবং মূলত বেইপিং আর্ট কলেজে (Central Academy of Fine Arts সেন্ট্রাল অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের পূর্ব নাম) তৈলচিত্র অধ্যয়ন করেন। বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী তৃতীয় বোনের প্রভাবে, তিনি বেইপিং প্রগতিশীল নাট্য আন্দোলনের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং কাকতালীয়ভাবে মঞ্চের কর্মজীবন শুরু করেন।

১৯৪৮ সালে ল্যান থিয়ে ইয়ে এক-অভিনয় নাটক ‘দ্য ট্রেন দ্যাট ডিডনট লিভ’-এ একজন পুরানো শ্রমিকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, কোনো বক্তব্য নেই, শুধু ভিড়ের পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও তিনি চরিত্রের মডেলিং নিয়ে গভীর আগ্রহের সঙ্গে চিন্তা করতেন। প্রতিটি পারফরম্যান্সে তিনি মঞ্চে উপস্থিতির চেয়ে মেকআপে অনেক বেশি সময় ব্যয় করেছেন।

 

ল্যান থিয়ে ইয়ে বলেন, তাদের প্রজন্মের অভিনেতাদের বেশিরভাগই নিজ নিজ উদ্যোগে মেকআপ করতেন। তিনি বলেন, ‘আমি যে চরিত্রে তৈরি করি সেটি কেমন হবে, কীভাবে অন্যরা ঠিক করতে পারে?’

১৯৫২ সালে, বেইজিং পিপলস আর্ট থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ল্যান থিয়ে ইয়ে প্রথম দফার অভিনেতা ছিলেন। চার বছর পরে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষজ্ঞদের আয়োজিত পারফরম্যান্স প্রশিক্ষণ ক্লাস থেকে স্নাতক হন এবং বেইজিং পিপলস আর্ট থিয়েটারে ফিরে আসেন, তখন ‘হু ফু’ নামে এক নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। অপ্রত্যাশিতভাবে, পারফরম্যান্সের দিনগুলোতে ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে, অনেক অভিনেতা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ভিড়ের দৃশ্য বা গ্রুপ পারফরম্যান্স জরুরিভাবে প্রতিস্থাপন করা দরকার। ল্যা থিয়ে ইয়ে তাদের মধ্যে একজন।

 

আস্তে আস্তে ল্যান থিয়ে ইয়ে কিছু কথা বলা চরিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন। ল্যান থিয়ে ইয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, বড় তারকা বা সুপারস্টার বলে পরিচিত অভিনেতা অভিনেত্রীরা আগে গ্রুপ পারফরম্যান্সে অংশ নিতেন। অভিনয়ের প্রতি আমার গভীর আগ্রহ আছে। চরিত্র যতই ছোট হোক না কেন, মনোযোগ দিয়ে অভিনয় করতে চাই আমি।

ল্যান থিয়ে ইয়ে’র অভিনয়ের জীবনে ‘tea house টি হাউস’ নামের নাটকটি উল্লেখযোগ্য।

১৯৫৭ সালে প্রথমবার এই নাটকের রিহার্সেল শুরু হয়। এরপর থেকে ১৯৯২ সালে শেষ পারফরম্যন্স পর্যন্ত ল্যান থিয়ে ইয়ে মোট ৩৭৪ বার অভিনয় করেছেন।

১৯৫৬ সালে টি হাউস’ নামে এই নাটকের লেখক লাও শে নিজ উদ্যোগে এই নাটকের ভিত্তিতে স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনান।

 

স্ক্রিপ্ট পড়ার পর লাও শে বলেন, বেইজিং পিপলস আর্ট থিয়েটার এই নাটকটি মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়। অভিনেতা অভিনেত্রীরা নিজেদের অবস্থা অনুযায়ী সঙ্গতিপূর্ণ চরিত্র বেছে নিতে পারেন।

‘একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আবেদন করা’ ছিলো তখনকার বেইজিং পিপলস আর্ট থিয়েটারের একটি ব্যবস্থা। অভিনেতাদের তাদের লিখিত আবেদনে বলতে হয়েছিল, কেন তারা একটি নির্দিষ্ট ভূমিকায় অভিনয় করতে চায়, তাদের কী শর্ত ছিল এবং কখনও কখনও একে-অপরকে সুপারিশ করতে হয়েছিল।

ল্যান থিয়ে ইয়ে জানতেন না, তিনি কোন চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন। তারপর অভিনেতা অভিনেত্রীর নাম প্রকাশিত হয়। তিনি ছিন আর ইয়ে এই চরিত্রে কাজের সুযোগ পান।

 

এটিই নাটকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। সবাই তাকে অভিনন্দন জানালেন। তবে ল্যান থিয়ে ইয়ের মনে একটু উদ্বিগ্ন ছিলেন। কারণ ছিন আর ইয়ে’র জীবন তার থেকে অনেক আলাদা।

প্রথমে ছিন আর ইয়ের জীবনে অভিজ্ঞতা জানাই। অভিনেতা অভিনেত্রীর নাম নির্ধারণের পর তাড়াহুড়া করে রিহার্সাল শুরু হয়নি। তাদের আধা বছরব্যাপী চরিত্রের জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে হয়।

১৯৬৩ সালে ল্যান থিয়ে ইয়ে অভিনেতা থেকে পরিচালকে পরিণত হন। ৭০ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি দর্শকদের জন্য অসংখ্য নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

১৯৮৭ সালে ল্যান থিয়ে ইয়ে অবসর নেন। অস্থায়ীভাবে নাটকের মঞ্চ ছেড়ে যাওয়া ল্যান থিয়ে ইয়ে বিশ্রাম নেন নি। বরং আগের তুলনায় আরো ব্যস্ত হয়ে ওঠেন।

১৯৯৬, ১৯৯৮ ও ২০১১ সালে তিনি তিন বার করে একক চিত্রকলার প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। (লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)