আকাশ ছুঁতে চাই ৭৮
2022-06-16 20:09:44

১. সাক্ষাৎকার: মাসুমা শারমীন সুমি, উদ্যোক্তা

২. ব্যালেরিনা ছিও ইয়ানতিং

৩. ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে সাফল্য পেলেন দুই তরুনী

৪. গান: শিল্পী থান ওয়েই ওয়েই   

৫. রান্নায় খ্যাতি পেল শিশু

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। 

সুমির উদ্যোক্তা ভুবন

বর্তমানে নারীরা নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের আয়বৃদ্ধির কাজ করছেন। এমনি একজন তরুণ উদ্যোক্তা মাসুমা শারমীন সুমি। তিনি একাধারে একজন উপস্থাপক, শিক্ষক ও উদ্যোক্তা। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

সাক্ষাৎকার

 

মাসুমা শারমীন সুমি পেশাগতভাবে একজন শিক্ষক। তিনি চাকরি করেন ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। এক দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন সুমি। কিন্তু তিনি কখনও শুধু শিক্ষক হতে চাননি। চেয়েছেন ভিন্ন কিছু করতে। সেই চাওয়া থেকেই চাকরির পাশাপাশি তিনি গড়ে তোলেন নিজের উদ্যোক্তা ভুবন। তিনি প্রথমে তার উদ্যোক্তা পেজের কাজ শুরু করেন কিছু পোশাক বিক্রির মাধ্যমে।

নিজের শিশুকন্যার নামে তিনি পেজের নামকরণ করেন স্টাইল বাই সুনেরা।  পরে চীন ও বিভিন্ন দেশ থেকে চুল ও ত্বকের যত্নের জন্য কিছু প্রসাধনী সামগ্রী নিয়ে এসে বিক্রি করা শুরু করেন। ভালো সাড়া পান তিনি।

এরপর তিনি সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব পণ্য তৈরি করেন। সুমি মূলত  হেয়ার অয়েল ও হেয়ার প্যাক এবং ত্বকের যত্নের কিছু সামগ্রী তৈরি করেন।

সুমি বলেন, ‘বাংলার গ্রামেগঞ্জে অনেক রকম লোকজ পণ্য রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি সম্ভব।’ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু লোকজ পণ্য রয়েছে যেগুলো বিপণনের মাধ্যমে নিজের আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি দেশের পণ্যেরও প্রসার ঘটবে। গ্রামে গঞ্জে মুড়ি, চিড়া, পিঠা, গুড় ইত্যাদি যদি বড় পরিসরে বাজারজাত করা যায় তাহলে উদ্যোক্তা হিসেবে অনেকেই নিজের ভবিষ্যৎ জীবন গড়ে নিতে পারেন বলে মনে করেন সুমি।

উদ্যোক্তা বার্তা নামে একটি অনলাইন পোর্টালের উপস্থাপকও তিনি। একজন নারী হিসেবে তিনি মনে করেন প্রত্যেক নারীরই প্রয়োজন নিজস্ব উপার্জনের পথ বেছে নেওয়া। নিজস্ব উপার্জন তাকে আত্মবিশ্বাস এনে দেয়।

দুই সন্তানের জননী সুমি একজন সুখী মানুষ। সংসারের কাজে ও সন্তান পালনে  স্বামী তাকে অনেক সহযোগিতা করেন বলে জানালেন সুমি।

 

 

ব্যালেরিনা ছিও ইয়ানতিং

ব্যালে ডান্স খুব প্রাচীন একটি নৃত্য শিল্প। এ শিল্পের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই শিল্পের চর্চায় এসেছে পরিবর্তন।  আধুনিকতার মিশেলে তরুণ নৃত্যশিল্পীদের অংশগ্রহণে এই ব্যালে ডান্স অনেক এগিয়েছে।

 

চীনের এক তরুণ ব্যালে নৃত্যশিল্পী ছিও ইয়ানতিং। সুদৃঢ ইচ্ছাশক্তি আর নিরলস অনুশীলনের মাধ্যমে একে একে স্বপ্ন পূরণ করে চলেছেন তিনি।  ছোটবেলা থেকেই এই শিল্পের প্রতি তার ভীষণ আবেগ এবং আগ্রহ। প্রাইমা ব্যালেরিনা বা প্রধান নৃত্যশিল্পী হওয়ার লক্ষ্যে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কঠোর অনুশীলন করে আসছেন ছিও।  অসামান্য পারফরম্যান্সের জন্য পেয়েছেন বিভিন্ন পদক।  

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন ২৭ বছর বয়সী এই নারী।  খুব অল্প বয়সে নাচে তার প্রতিভা দেখান ছিও। এরপর শুরু হয় নতুন সম্ভাবনার। কিশোর বয়সে বেইজিং ডান্স একাডেমিতে পেশাদার ব্যালে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সপ্তাহে তার একদিনও ছুটি ছিল না। কারণ ছুটির দিনে অন্যরা মজা করতে বাইরে গেলেও স্টুডিওতে অনুশীলন করতে হতো তাকে।

ছিও ইয়ানতিং তার লক্ষ্য পূরণে এতোটাই সুদৃঢ আত্মবিশ্বাসী  যে এই কাজটি তার কাছে কখনই কঠিন মনে হয় না। তিনি বলেন, ‘অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন নাচ বা ব্যালে শেখা কঠিন কিনা। আমি ছোটবেলা থেকেই নাচ পছন্দ করি। যখন আমি স্টেজে নাচ বা স্টুডিওতে অনুশীলন করি, আমি সবসময় এতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখি। আমি এটা কখনো অনুভবই করি না যে এটা কঠিন।’ 

২০১৩ সালে "রেড ডিটাচমেন্ট অফ উইমেন" এবং তুনহুয়াংয়ের মতো প্রাচীন চীনা ব্যালে প্রোগ্রামে অভিনয় করেন তিনি। পাশাপাশি তন ছুইসোট এবং "সোয়ান লেক" সহ পশ্চিমা ক্লাসিকগুলোতেও অভিনয় করেন। 

২০১৪ সালে, তিনি প্রথমবারের মতো সিসিটিভির স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালায় চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান "রেড ডিটাচমেন্ট অফ উইমেন"-এ একজন সৈনিক হিসেবে অভিনয় করেন।    

চলতি বছরের মার্চে ছিউ তার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য প্রাইমা ব্যালেরিনা অর্জন করেন। তিনি পুরো দলের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী একজন। ব্যালে প্রেমিক এই তরুণী সারাজীবন এই শিল্প চর্চাকে ধরে রাখতে চান।

ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে সাফল্য পেলেন দুই তরুনী

চীনে বিভিন্ন জাতির রয়েছে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে সাফল্যের পথ গড়ে নিয়েছেন দুই নারী। শুনবো তাদের গল্প। 

 


 

চীনের দুই তরুণীবন্ধু তারগেল ও চাং আয়োইয়ু। ঐতিহ্যবাহী নকশায় রূপার অলংকার তৈরি করে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তারা। মঙ্গোলীয় জাতিগোষ্ঠির নারী তারগেল। কলেজে পড়ার সময় তার বন্ধুত্ব হয় চাং আয়োইয়ুর সঙ্গে। তাদের দুজনেরই জন্ম ৯০ দশকে। ২০১৪ সালে তারা চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল ইনার মঙ্গোলিয়ার ইনার মঙ্গোলিয়া নরমাল ইউনিভারসিটিতে ভর্তি হন। সে সময় তারা দেখেন যে, দুজনেরই আগ্রহ রয়েছে মঙ্গোলীয় জাতির ঐতিহ্যবাহী এথনিক শিল্পে বিশেষ করে রূপার অলংকারে।

 

গ্র্যাজুয়েশনের পর তারগেল এবং চাং নিজেদের একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তারা ঐতিহ্যবাহী  এথনিক নকশায় ফ্যাশনেবল একসেসরিজ তৈরি শুরু করেন। তাদের পণ্য তাারা অনলাইন ও অফলাইনে বিক্রি করেন। তাদের লাইভস্ট্রিমিং সেল বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

 

দিনে দিনে তরুণ ক্রেতারা আরও বেশি করে তাদের তৈরি রুপার অলংকারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন এবং এটা ইনার মঙ্গোলিয়াসহ চীনের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিণত হচ্ছে। এইভাবে ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে নিয়েছেন দুই নারী উদ্যোক্তা বন্ধু।

গান: শিল্পী থান ওয়েওয়েই

চীনের একজন বিখ্যাত শিল্পী থান ওয়েইওয়েই। তার জন্ম ১৯৮২ সালে সিচুয়ান প্রদেশে। তিনি সুপার গার্ল নামে একটি সংগীত প্রতিযোগিতায় কৃতিত্ব প্রদর্শন করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। এখন শুনবো থান ওয়েইওয়েইর কণ্ঠে একটি গান ।

রান্নায় খ্যাতি পেল শিশু

চীনের এক শিশু সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মাত্র ১০ বছরের মেয়ে সুন চিয়ারুই চমকপ্রদ রান্নার দক্ষতায় মুগ্ধ করেছে নেটিজেনদের।

চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ১০ বছরের মেয়ে শিশু সুন চিয়ারুই সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে তার একটি বিশেষ গুণের জন্য। ছোট্ট সুন এই বয়সেই রান্নায় দারুণ এক্সপার্ট হয়ে গেছে। সে ৮ বছর বয়স থেকে তার বাবার কাছে রান্না শিখছে। আর এখন এক্সপার্ট শেফের মতো রান্না করতে পারে সে। সুন এখন ৫০টিরও বেশি ডিশ রান্না করতে পারে যা তাক লাগিয়ে দিয়েছে নেটিজেনদের।

চীনের প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্কুলগুলোতে আসন্ন সেপ্টেম্বর শিক্ষা কার্যক্রমে একটি নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। সেটি হলো ‘ব্যবহারিক কার্যক্রম’। এই ‘প্র্যাকটিকাল অ্যাকটিভিটিস’ ক্লাসে শিশু কিশোররা প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় কাজগুলো দক্ষতা অর্জন করবে। এই কাজের মধ্যে রয়েছে রান্না, বাসনপত্র ধোয়া, ছোটখাটো মেরামতির কাজ   এবং গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ।

সুন চিয়ারুইর এমন রান্নার দক্ষতা এরই মধ্যে শিশুদের বেশ অনুপ্রাণিতও করেছে।

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা।

আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা : শান্তা মারিয়া

ব্যালেরিনা ছিও ইয়ানতিং, প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে সাফল্য পেলেন দুই তরুনী এবং রান্নায় খ্যাতি পেল শিশু প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী ও শান্তা মারিয়া