চীনের উত্তর শায়ানসি প্রদেশের পুরানো গ্রামের নতুন চেহারা
2022-06-16 10:33:17

গুহার বাসস্থানগুলো পাহাড়ের গঠন অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে, উঠানের দেয়ালগুলো সরল, মার্জিত ও পাথরের রাস্তাটি উঁচু-নিচু ও আঁকাবাঁকা। বৈশিষ্ট্যময় প্রাচীন গ্রামগুলো পাহাড় ও উপত্যকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যা শায়ানসি প্রদেশের ইয়েন ছুয়ান জেলার আকর্ষণীয় চিত্র হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সব বিপ্লবের ইতিহাসযুক্ত ফিল্ম এবং টেলিভিশন নাটক এখানকার খাঁটি প্রাচীন গ্রামে শুটিং করা হয়। বর্তমানে সেখানকার চেনচিয়াওয়ান, মাচিয়াওয়ান, নিয়েনপান গ্রাম ইত্যাদি জায়গা প্রত্যন্ত ছোট পাহাড়ি গ্রাম থেকে বিপ্লবের ইতিহাসযুক্ত ফিল্ম এবং টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় শুটিং লোকেশনে পরিণত হয়েছে।

 

২০১৩ সালে  ইয়েনছুয়ান জেলায় ফিল্ম ও টেলিভিশন বেস তৈরি  হয়েছিল। তখন এটি সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততার এলাকা ছিল। তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে, যেখানে একই সময়ে চিত্রগ্রহণের জন্য ৪জন ক্রুর অবস্থান করত। গ্রামবাসীরা অভিনেতা হওয়ার আশা করত। এতে আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি, তাদের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবনও সমৃদ্ধ হয়েছিল।

ইয়েনছুয়ান জেলার প্রাচীন গ্রামের সংখ্যা বেশি, তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। ২০১৩ সালে ইয়েনছুয়ান জেলার মাচিয়াওয়ানের গ্রামবাসীরা একের পর এক নতুন বাড়িতে স্থানান্তর হয়েছেন এবং গ্রামের ১৬৮টি গুহা-বাড়ি খালি হয়েছে। ভবিষ্যত সুরক্ষা এবং উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে উঠেছে, যা জরুরিভাবে সমাধান করা উচিত। বারবার আলোচনা এবং সতর্কতার সাথে পরিকল্পনা করার পর, ইয়েনছুয়ান জেলা এসব প্রাচীন গুহা বাসস্থান শক্তিশালী ও পুনরুদ্ধার করার সিদ্ধান্ত নেয়।

 

পুনরুদ্ধারের কাজটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়, যাতে গ্রামের আসল রূপ নষ্ট না-হয়। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে গাইড দিতে আমরা গ্রামের প্রবীণদের আমন্ত্রণ জানাই এবং গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গুহা-বাড়ি শক্তিশালী করে তুলি ও মেরামত করি। গুহার আবাসস্থলগুলোর অভ্যন্তরীণ আসবাবপত্র ও আঙ্গিনাগুলো যথাসম্ভব পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছি। ইয়েনছুয়ান জেলার চিয়াচিয়াপিং থানার সংস্কৃতি ও পর্যটন অফিসের পরিচালক হুয়েন ইয়ুন থিং এভাবে বলছিলেন।

 

এখন পর্যন্ত ইয়েনছুয়ান জেলার ৮টি গ্রাম জাতীয় ঐতিহ্যবাহী গ্রামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হুয়েন ইয়ুন থিং বলেন, ‘জেলায় পর্যটনের পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী গ্রামের সুরক্ষা এবং ব্যবহার একীভূত করেছে।’

ইয়েনছুয়ান জেলায় সক্রিয়ভাবে পর্যটনের আদর্শ অঞ্চল নির্মাণ করা, ঐতিহ্যবাহী গ্রামগুলো একীভূত করা এবং গ্রামীণ পর্যটন প্রকল্পের বিভিন্ন রূপ অন্বেষণ করার চেষ্টা করছে। প্রাচীন গ্রামগুলোতে নতুন প্রাণশক্তি দেখা দিয়েছে।

একটি দরিদ্র গ্রাম হিসাবে নিয়েনপান গ্রামের অধিবাসীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য জুজুব গাছ লাগানোর উপর নির্ভর করত। আজ, গ্রামটি জোরেশোরে গ্রামীণ পর্যটন বিকাশ করছে এবং গ্রামবাসীরা একের পর এক ফার্মহাউস এবং হোমস্টে স্থাপন করেছে। তাদের আয় অনেক বেড়েছে এবং তাদের জীবন আরো সুন্দর হয়েছে।

 

নিয়েনপান গ্রামের ৬০/৭০ শতাংশ গ্রামবাসী গ্রামীণ পর্যটন নিয়ে কাজ করছে। পর্যটন শিল্প বিকাশের কারণে গ্রামের রাস্তাগুলো পুনর্নির্মাণ হয়েছে এবং জল ও বিদ্যুৎ সম্পূর্ণরূপে সরবরাহ করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গ্রামীণ পর্যটন শিল্পে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম দফার গ্রামবাসীরা খামারবাড়ি পরিচালনা করার মাধ্যমে তাদের সন্তানদের বিবাহের ব্যবস্থা করেছেন এবং ধনী হয়ে উঠেছে।

 

বর্তমানে শায়ানসি প্রদেশের ইয়েনছুয়ান জেলার এসব গ্রামের অনেক দর্শনীয় স্থান জাতীয় ৫-এ শ্রেণীর দর্শনীয় স্থান হিসেবে আবেদন করছে। গ্রামবাসীদের গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়নের উত্সাহ কমে নি। এসব গ্রাম পর্যটকদের বাস করা, ভ্রমণ করা, কেনাকাটা করা এবং বিনোদন করাসহ নানা চাহিদা পূরণের একটি পর্যটন প্রদর্শনীর গ্রাম হয়ে উঠেছে।

গ্রামীণ পর্যটন শিল্প বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের সুপ্ত সম্পদ প্রকাশিত হওয়া এবং গ্রামবাসীদের ভবিষ্যত আরো সুন্দর ও সমৃদ্ধ হবে বলে বিশ্বাস করি।

লিলি/তৌহিদ/শুয়ে