গ্রীষ্মকালীন ফসল আবার প্রমাণ করেছে: চীনারা নিজেদের বাটি নিজেদের হাতে ধরে রাখে
2022-06-15 11:06:23

জুন ১৫: গ্রীষ্মের শস্য হচ্ছে চীনের শস্য উত্পাদনের প্রথম মৌসুম এবং যা সারা বছরের খাদ্য উত্পাদনের এক পঞ্চমাংশ। বর্তমানে চীনের গ্রীষ্মকালীন শস্যের প্রধান উত্পাদন এলাকায় ফসল কাটা শুরু হয়েছে। মনুষ্যবিহীন কৃষি মেশিন, স্যাটেলাইট রিমোট সেন্সিং এবং বুদ্ধিমান পর্যবেক্ষণসহ ‘হাই-টেক’ প্রযুক্তিগত মেশিন ও ব্যবস্থা একের পর এক আবির্ভূত হয়েছে, গ্রীষ্মের শস্যের ফলন নিশ্চিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আজকের ভিডিওতে দেখবো এসব হাই-টেক প্রযুক্তির সাহায্যে চীনা কৃষকরা কীভাবে গম কাটছেন এবং চীনারা কীভাবে নিজেদের চালের বাটি নিজেদের হাতে ধরে রাখে।

হ্যনান চীনের বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী প্রদেশ এবং চাষের আয়তন ও উত্পাদনের পরিমাণ সারা দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ। চীনে গম উত্পাদনের এলাকায় ফসল কাটার সময় শুরু হয়েছে। চাও চিয়েন ছেন নামে একজন বড় শস্য চাষি ব্যস্ত সময় শুরু করেছে।

ঘর্মাক্ত হয়ে ফসল কাটার দৃশ্য যেখানে স্বাভাবিক বিষয়, সেখানে ৫৬ বছর বয়সী চাও চিয়েন ছেন পরেন। তাঁকে গরম গমক্ষেতে একটু ভিন্ন রকম লাগে।

চলতি বছর তিনি ৭৩ হেক্টর জমিতে গম চাষ করেছেন। ক্যামেরার সামনে তিনি গর্বের সঙ্গে সে কথা জানান।

‘এখন এসব হার্ভেস্টার আমার গম কাটছে। আমি অনেক আনন্দিত। ফসল দেখে আমি খুব খুশি। আমরা আজকের ফসলের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করছি।’

চাও চিয়েন ছেনের মতো লিউ থাও নামে আনহুই প্রদেশের ফুইয়াং শহরের ফুনান জেলার আরকজন বড় শস্য চাষিও খুব খুশি হয়েছেন।

আনহুই প্রদেশের ফুইয়াং শহরের ‘ইয়াংচি নদী ও হুয়াইহ্য নদীর’ শস্যভাণ্ডারের খ্যাতি রয়েছে। আনহুই প্রদেশের ফুইয়াং শহরের কৃষিগত প্রযুক্তির প্রচারকেন্দ্রের ডেপুটি ডিরেক্টার চেং সিয়াং ইয়াং বলেন,

‘সারা শহরের ৪০টিরও বেশি গম পর্যবেক্ষণ সাইটের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ বছর হলো ফসল পাওয়ার বর্ষ।’

গ্রীষ্মকালীন শস্যের উচ্চ ফলন এবং ভাল ফলনকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গ্যারান্টি থেকে আলাদা করা যায় না। চীনের প্রধান গম উত্পাদন এলাকায় গম ক্ষেতে অনেক ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সময়মতো বিভিন্ন ডেটা পাওয়া যায়। সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় লাখেরও বেশি হার্ভারেস্টারে স্থাপিত এসব ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা নানা এলাকায় ফসল কাটার অগ্রগতি ও খাদ্য উত্পাদানসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন।

 

এক ইন্টারনেট প্রযুক্তি কোম্পানির সহকারী ম্যানেজার লিউ ছাও বলেন, ‘হার্ভারস্টারে স্থাপন করা ‘গোল্ডেন বক্স’ বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্সের’ মতো কাজ করে। এতে রিয়েল টাইমে জলের তাপমাত্রা ও হার্ভাস্টারের ইঞ্জিন গতিসহ নানা তথ্য দেখা যায়। সাথে সাথে আমরা সংগৃহীত নানা তথ্য গ্রাহকদের সেবাকেন্দ্রে পাঠাতে পারি।’

 

চীনের কৃষি ও গ্রাম মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এই বছর সারা দেশে গম কাটার জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহৃত হয়েছে। মেশিনে হার্ভেস্টিং হার ৯৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেট, ইন্টারনেট অফ থিংস, ক্লাউড কম্পিউটিংসহ অন্যান্য নেটওয়ার্ক তথ্য প্রযুক্তি কৃষিকে আরও বেশি বুদ্ধিমান করে তুলেছে।

ফসল কাটার নতুন গম স্টোরেজ করার জন্য ‘নতুন বাসা’ ও প্রযুক্তিগত। বৈজ্ঞানিক ও সবুজ শস্য সংরক্ষণ প্রযুক্তি শ্রমের খরচ বাঁচানোর পাশাপাশি স্টোরেজে লসের হারও কমাতে পারে এবং শস্যের গুণগত মান ও নিরাপত্তা বাড়াতে সক্ষম।

 

‘হাতে খাদ্যশস্য থাকলে মন উদ্বিগ্ন হবে না’। খাদ্য নিরাপত্তা চীনের ১৪০ কোটি মানুষের সঙ্গে জড়িত। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক সি চিন পিং বরাবরই খাদ্য নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীনা জনগণের খাবারের বাটি সময় দৃঢ়ভাবে নিজেদের হাতে রাখতে হবে এবং বাটিতে চীনের চাষ করা খাদ্যশস্যও রাখতে হবে। গ্রীষ্মকালীন শস্যের ফসল বার্ষিক শস্য অর্জনের ক্ষেত্রে  চীনের প্রথম প্রচেষ্টা।

 

সম্প্রতি ‘খাদ্য সংকট’ বিশ্বের আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ। বুধবার নিউ ইয়র্কে এক বক্তব্যে সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস এ হুঁশিয়ারি দেন। তার আশঙ্কা, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে একটি খাদ্য সংকট সৃষ্টি হতে পারে। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, এই যুদ্ধের কারণে দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। যাই হোক, অসাধু শক্তি ‘খাদ্য সংকটকে’ ‘চীন হুমকি তত্ত্বে’ অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে। একথা ভিত্তিহীন ও হাস্যকর।

 

চীন বিশ্বের প্রায় এক চতুর্থাংশ খাদ্য উত্পাদন করে এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক পঞ্চমাংশ মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন পূরণে বিশ্বের মাত্র ৯ শতাংশেরও কম ভূমি ব্যবহার করে। এটি বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা উন্নয়নে সবচে বড় অবদান।

শুধু তাই নয়, বড় রাষ্ট্র হিসেবে চীন বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্রিয় অবদান রেখেছে। চীনের উত্থাপিত বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রস্তাবে ‘খাদ্য নিরাপত্তাকে’ আটটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার বিষয় দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষির উত্পাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার মান বাড়াতে চীন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সাহায্য করেছে। কৃষি খাতে চীনের বৈশিষ্ট্যময় সহায়তার পথ বের হয়েছে।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)