জুন ১৪: গত রোববার ১৯তম শাংরি-লা সংলাপ সিঙ্গাপুরে শেষ হয়। জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সংলাপে মূল বক্তব্য দেন। তিনি সামরিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে চীনকে মোকাবিলা করার কথা বলেন। জাপানি গণমাধ্যমগুলো একে ‘চীনের বিরোধিতা’ হিসাবে মূল্যায়ন করেছে।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জাপান শাংরি-লা সংলাপে মূল বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের একজনকে পাঠিয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালের সংলাপে সাবেক জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে চীনের বিরুদ্ধে আক্রমণত্মক বক্তব্য দিয়েছিলেন। তবে ফুমিও কিশিদা আগ বাড়িয়ে অন্যান্য এশিয়ান দেশকেও চীনের বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এদিকে জাপানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিশি নোবুও চীনের বিরুদ্ধে তাইওয়ান ইস্যুতে সামরিক ব্যবস্থার পক্ষে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন।
চীন ইস্যুতে জাপানের সাম্প্রতিক ধারাবাহিক পদক্ষেপগুলো বিবেচনায় নিলে, সদ্যসমাপ্ত শাংরি-লা সংলাপে জাপানি নেতার বক্তব্যে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল’ নিয়ে সামনে এগুচ্ছে। জাপানি রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, এটা চীনকে চ্যালেঞ্জ করার এবং খোদ জাপানকে এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দিয়েছে। তবে, মনে রাখতে হবে, এশিয়ায় হস্তক্ষেপ করার সেই আগের সামর্থ্য যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
ফুমিও কিশিদা সংলাপে আগামী বছর তথাকথিত ‘ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি পরিকল্পনা’ কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন। জাপান রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি, সামরিক ও শিল্প চেইনের ক্ষেত্রে চীনকে দমন করতে চায়। ফুমিও কিশিদা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ইউক্রেনের আজ হবে পূর্ব এশিয়ার আগামীকাল।
আসলে ফুমিও কিশিদার আসল লক্ষ্য হলো সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, জাপানের শান্তিপূর্ণ সংবিধান সংশোধন, এবং এশিয়ায় সামরিক দ্বন্দ্বের জন্য নতুন অজুহাত খোঁজা। জাপান তাইওয়ানে স্থায়ী কর্মকর্তা পাঠাতে চায়। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে তাইওয়ান ইস্যুতে চীনকে দমন করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করে।
জাপান অর্থনীতির ক্ষেত্রে চীনকে দমন করতে চায়। জাপান নিজের উচ্চ পর্যায়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অবস্থান ধরে রাখতে চায়। দেশটি নিজের প্রযুক্তি চীনে রফতানি সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। এবারের সংলাপে ফুমিও কিশিদার ‘অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা জোরদারসহ নতুন ক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার’ করার প্রস্তাবের আসল উদ্দেশ্য হলো চীনকে দমন করা।
এ ছাড়াও, এবারের সংলাপে জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ ও সহায়তা জোরদার করার কথা বলেছে। তবে, জাপান আসিয়ান দেশগুলোর কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি।
ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রাবোও সুবিয়ানতো সংলাপে বলেন, তাঁর দেশ সব দেশকে সম্মান করে এবং কোনো সামরিক জোটে অংশ নেবে না। মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেইন বলেন, আসিয়ানকে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আসলে এশিয়ার অধিকাংশ দেশ জাপানি সাম্রাজ্যবাদের শিকার। কোনো কোনো জাপানি রাজনীতিবিদের আসল উদ্দেশ্য সবাই জানে।
চীনের উন্নয়ন হলো বিভিন্ন দেশের জন্য সুযোগ, হুমকি নয়। এ ব্যাপারে এশিয়ার অধিকাংশ দেশ একমত। জাপানি রাজনীতিবিদ চীন ও এশিয়ান দেশগুলোর সম্পর্কে বিভেদের বীজ বপন করতে চান। কিন্তু এতে তিনি সফল হতে পারবেন না। জাপান যুক্তরাষ্ট্রের হাতিয়ার হতে চায়। এতে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাই শুধু নষ্ট হবে। (ছাই/আলিম)