চীনে একটি প্রদেশ আছে, যাকে ‘সবচেয়ে উর্বর জমি’ বলা হয়। সেই জায়গাটার উন্নয়ন কেমন হচ্ছে, দেশের শীর্ষনেতাও একে ‘ভালো জায়গা’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন। চলুন, আজকে এই উর্বর জমি- সিছুয়ান প্রদেশে যাবো।
গত বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিছুয়ান প্রদেশ সফর করেন। তা হল চীনের ১৯তম জাতীয় কংগ্রেসের পর সি চিন পিং-এর দ্বিতীয়বার সিছুয়ান প্রদেশ পরিদর্শন।
বুধবার সকালে সিছুয়ান প্রদেশ পরিদর্শনের প্রথম ধাপে তিনি মেই শান শহরের ইয়ুং ফেং গ্রামে যান। তিনি বলেন, এখন কৃষিকাজের ব্যস্ততার সময়। তাই তিনি দক্ষিণাঞ্চলের ধান চাষের অবস্থা জানতে চান। তিনি খাদ্য নিরাপত্তার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। এখন ধান বড় হওয়ার সময়। ‘উর্বর জমি’ সিছুয়ানের ক্ষেতে ফলনের আশা করা হচ্ছে। সি চিন পিং যে ধান ক্ষেতটি পরিদর্শন করেছেন, তা হলো সিছুয়ানের বৃহত্তম আকারের নতুন প্রযুক্তিতে নতুন ধরনের ধান চাষের পরীক্ষামূলক কেন্দ্র। শতাধিক ধরনের ধান এখানে চাষ হয়, তুলনা করা হয় এবং বাছাই করা হয়, যাতে শ্রেষ্ঠ মান নির্বাচন করা যায়।
পরিদর্শনকালে প্রেসিডেন্ট সি বলেছিলেন, জনগণের কাছে খাদ্যের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কৃষি কাজের আধুনিকায়ন করতে একদিকে চীনের কৃষি বিশেষজ্ঞের ওপর নির্ভর করতে হয়, অন্যদিকে আমাদের চীনা কৃষকের ওপর নির্ভর করতে হয়। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা বাস্তবায়নের আস্থা আছে। সিছুয়ানের উচিত কৃষিকাজ ভালোভাবে করা, খাদ্যের উত্পাদনের কাজ অব্যাহত রাখা।
এদিন বিকালে প্রেসিডেন্ট ই বিন শহরের তিন নদীর যুক্ত হওয়ার স্থান পরিদর্শন করেন। ই বিন শহরকে চীনের ইয়াংসি নদীর প্রথম শহর হিসেবে বলা হয়। শহরটি আগে ‘রাসায়নিক দূষণ’ সমস্যায় পড়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশি দূষণ সৃষ্টকারী প্রতিষ্ঠান, ছোট আকারের কাগজ কারখানা, নদীর তীরের বালি কারখানা বন্ধ করা, দূষিত পানির নির্গমন কমানো, জলাভূমি বাগান নির্মাণ করাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নত হয়েছে।
সি চিন পিং এসব ব্যবস্থার স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, ইয়াংসি নদীর উচ্চ অববাহিকা শহর হিসেবে দায়িত্ব অনেক বেশি। দূষিত পানি নির্গমন করা যায় না। নদীর পানির গুণগতমান নিশ্চিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাতে হবে। যাতে পুরো ইয়াং সি অববাহিকা রক্ষা করা যায়।
এখন চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্নাতক পাসের সময়। চলতি বছর চীনে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। যা আগের বছরের তুলনায় ১৬.৭ লাখ বেশি এবং ইতিহাসের নতুন রেকর্ড। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এ বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দেন।
গত বুধবার বিকালে তিনি ই বিন শহরের ই বিন ইন্সটিটিউট পরিদর্শনের সময় বিশেষভাবে শিক্ষার্থীদের স্নাতকের অবস্থা জানতে পারেন। তিনি বলেন, সরকার জনগণের জীবিকার ওপর খুব গুরুত্ব দেয়। জীবিকার প্রথম কাজ হলো কর্মসংস্থান। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্নাতকের বিষয়ে বেশি নজর রাখা উচিত।
তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, শ্রম সবচেয়ে গৌরবের বিষয়। আমাদের সুখী জীবন শ্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এক রাতে ধনী হওয়া, এক রাতে বিখ্যাত হওয়া- সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীর উচিত একটি সাধারণ মনে নিজের অবস্থা এবং সমাজের চাহিদা বিবেচনা করে কর্মসংস্থান বাছাই করা।
তিনি স্থানীয় সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদের বলেন, উচ্চশিক্ষা অব্যাহতভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে, এটি একটি বড় প্রবণতা। দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন খাতে মানবসম্পদ প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানবসম্পদের গুণগতমান বাড়ানো। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখার বিষয় সমাজের কর্মসংস্থান কাঠামোর উপযোগী হওয়া উচিত, অন্যদিকে মানবসম্পদকে উপযুক্ত মর্যাদা ও বেতন দেওয়া উচিত।
চীনের সিছুয়ান, চীনের এই উর্বর জমির জায়গা, এখন উন্নয়নের নতুন পথে এগিয়ে যাচ্ছে।