চীনে প্রাচীনকালের একটি গল্প। গল্পে বলা হয়, ৯০ বছর বয়সী ইউকং দু’টি পাহাড় অন্য জায়গায় সরিয়ে মাঝখান দিয়ে সড়ক নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। এতে ইউকংয়ের সাহস প্রতিফলিত হয়। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সুন্দর জীবন গড়ে তোলার জন্য সড়ক নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। বর্তমান চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ইউননান প্রদেশে ইউ কংয়রের মতো মানুষ আছেন। তাঁরা খারাপ পরিবেশের মধ্যেও একটি ‘দারিদ্র্যবিমোচন সড়ক’ নির্মাণ করেছেন।
তাঁরা সীমের ফলন বাড়িয়ে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁরা দশ বছর ধরে ক্লিফসাইডে সড়ক নির্মাণ করেছেন। তাঁরা নিজেদের পরিশ্রম দিয়ে স্থানীয় মরুকরণ রোধ করেছেন।
ইউননান প্রদেশের ওয়েনশান (文山) চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত বান্নারের সিছৌ(西畴) জেলায় ৯৯.৯ শতাংশ ভূমি হলো পাহাড়। এর মধ্যে ৭৫.৫ শতাংশই গাছপালাবিহীন। চিয়াংলং গ্রাম আগে ছিল জেলাটির সবচেয়ে দরিদ্র। দারিদ্র্যবিমোচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরিবেশ রক্ষা। দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ২০০৩ সাল থেকে স্থানীয় বাসিন্দা লিউ ছাও রেন (刘超仁) গ্রামবাসীদেরকে নিয়ে বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু করেন ও কমলা চাষ করতে থাকেন। তবে খারাপ পরিবেশের জন্য অনেক মানুষ ছিলেন আশাহীন। তাঁরা মনে করেন, কমলা চাষ করলে খাদ্যশস্য চাষের জমি কমে যাবে। এ ছাড়া, গ্রামে ভাল সড়ক ছিল না, উত্পন্ন কমলা বাইরে পাঠানো ছিল একটি বড় সমস্যা।
কিন্তু লিউ ছাও রেন নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে সরে আসেননি। তাঁর নেতৃত্বে বর্তমান চিয়ালং (江龙) গ্রাম একটি সবুজ, সভ্য ও ধনী গ্রামে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে গোটা গ্রামে কমলার চাষ হয়। গত বছর কমলা শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ছিল ২০ হাজার ইউয়ান।
লিউ ছাও রেন’র মতো গল্প সিছৌ (西畴) জেলার বিভিন্ন গ্রামে আরও আছে। পাহাড়ি অঞ্চলে লোকসংখ্যা বেশি, তবে চাষের জমি কম। এ সমস্যার মধ্যেই ছেং দুন রু (程敦儒) পাথুরে মাটিতেই চীনা ঔষধি বৃক্ষ চাষ করার চেষ্টা করতে থাকেন। তিনি টানা তিন বছর পাহাড়ে কাটিয়ে দেন এ কাজে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে নিয়ে পাহাড়ে ঔষধি বৃক্ষ চাষ করতেন তিনি। বর্তমানে চীনা ওষুধ শিল্প সিছৌ জেলার দারিদ্র্যবিমোচন ও গ্রাম পুনরুজ্জীবন কার্যকর সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক শিল্পে পরিণত হয়েছে।
আগে সিছৌ জেলার ইয়ানথৌ (岩头) গ্রামের পরিবহনের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা লি হুয়া মিং (李华明) দশ বছর ধরে গ্রামবাসীদেরকে নিয়ে ক্লিফসাইডে একটি সড়ক নির্মাণ করেন। পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি ইয়ানথৌ গ্রাম দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে। বর্তমানে সিছৌ জেলার প্রতিটি গ্রামে সড়ক, জলের পানি ও ইন্টারনেট আছে। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর নিজেদের জন্মস্থানে ফিরে আসতে উত্সাহী হচ্ছেন।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, গ্রাম পুনরুজ্জীবনের চাবিকাঠি হলো মানুষ ও পরিশ্রম। তিনি বলেন, আমাদের নতুন যুগে ইউকংয়ের চেতনা প্রচার করে সুন্দর চীন গড়ে তুলতে হবে। সিছৌ জেলার বাসিন্দারা এমন কাজ করেন। (ছাই/আলিম)