চীনের সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের শহরে ভ্রমণ
2022-06-10 11:34:46

একটি সুন্দর নদী, দুই পাশে সবুজ পাহাড়। যা চীনের পাহাড় ও নদীর অসাধারণ দৃশ্যের পরিচয় তুলে ধরে। এই দৃশ্য সবার কাছে পরিচিত। জায়গাটি হল চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কুই লিন শহর। ‘কুই লিনের প্রাকৃতিক দৃশ্য চীনে সবচেয়ে সুন্দর’, কথাটা সব চীনারা জানে। এই সম্পর্কিত লেখা চীনের চীনা ভাষা কোর্সের একটি পাঠ। পড়ার পর সবাই কুই লিনে যেতে চায়।


 

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কুয়াং সি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কুই লিন শহর হল চীনে সবচেয়ে আগে উন্মুক্তকরণ চালু করা অন্যতম পর্যটন শহর। যা চীনের প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। বিগত ৪০ বছরে ১৮০ জনেরও বেশি বিদেশি নেতা বা সরকারি কর্মকর্তা কুই লিন পরিদর্শন করেছেন।

একটি ছোট নৌকায় করে কুই লিনের প্রধান নদী লি চিয়াং নদীর উত্স থেকে নেমে যাওয়া যায়, পথে দেখা যায় দুই পাশে সবুজ পাহাড়। ফু লুং চৌ দ্বীপ হল কুই লিন শহরের লি চিয়াং নদীর মাঝখানে অবস্থিত একটি দ্বীপ। এখন দ্বীপে সবখানে দেখা যায় সবুজ গাছপালা এবং সুন্দর ফুল। তবে আগে পরিবেশ সমস্যা এখানের সবুজ পাহাড় এবং পরিচ্ছন্ন নদনদীতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। অতীতে ফু লুং চৌ দ্বীপে শতাধিক বাসিন্দা বাস করত। তারা শাকসবজি চাষাবাদের মাধ্যমে জীবনযাপন করত। অথবা মাছের রেস্তরাঁর মাধ্যমে টাকা উপার্জন করত। তাদের রেস্তরাঁ কোনো সরকারি অনুমোদন পায় নি, নিজেদের ইচ্ছামত তৈরি। এভাবে তৈরি রেস্তরাঁর দূষিত পানি সরাসরি লি চিয়াং নদীতে পড়ত। দৈনন্দিন আবর্জনা ইচ্ছামত সবখানে ফেলত। যা আশেপাশের পরিবেশের খুব খারাপ প্রভাব ফেলে।

 

লি চিয়াং নদী রক্ষা করার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কুই লিন শহর ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছে। নদীর দূষণ প্রতিরোধ, পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, দ্বীপের পরিবেশ উন্নয়নের কাজ করা ইত্যাদি। এ ছাড়া আগের অবৈধ রেস্তরাঁ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরো দ্বীপের বাসিন্দাদের নতুন আবাসিক এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন ফু লুং চৌ দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার কাজে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আগের দূষিত দ্বীপ এখন একটি প্রাকৃতিক বাগানে পরিণত হয়েছে।

 

ফু লুং চৌ দ্বীপের আগের বাসিন্দা হুয়াং কাং সাংবাদিককে বলেন, এখানে প্রাকৃতিক বাগান তৈরি হয়েছে, আমরা সাধারণ মানুষও খুব আনন্দিত। কুই লিন শহর আরো সুন্দর হচ্ছে, পর্যটক আরো বেশি হচ্ছে, আমাদের আয়ও অনেক বেড়েছে।

আরেকজন বাসিন্দা হুয়াং চিয়ান বলেন, পরিবেশ অনেক ভালো হয়েছে, বায়ুর গুণগতমান অনেক বেড়েছে, পানির গুণগতমানও ভালো হয়েছে। আমাদের অনুভূতিও ভালো হয়েছে। ঠিক ছোটবেলার মতো পরিবেশ।

 

এই ছোট দ্বীপের আকাশপাতাল পরিবর্তন হল কুই লিন শহরের পরিবেশ সংরক্ষণ কাজের একটি উদাহরণ। বহু বছর ধরে শহরটি প্রকৃতি সংরক্ষণে শীর্ষস্থানে ছিল। দূষিত পানি শোধন, দ্বীপ পুনরুদ্ধার প্রকল্প, বন্দরের নির্মাণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, বিশ্ব প্রাকৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সক্রিয়ভাবে চালু হয়েছে। লি চিয়াং নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নতি সম্ভব হয়েছে। নদী অববাহিকায় বনভূমির হার ৮০ শতাংশেরও বেশি।

 

কুই লিন শহরের সিপিসি শাখা সম্পাদক চৌ চিয়া বিন বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সবসময় কুই লিনের পরিবেশ সংরক্ষণ কাজের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, কুই লিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ হল চীনা জাতিকে দেওয়া প্রকৃতির একটি মূল্যবান সম্পদ। তিনি কুই লিন সরকারকে এই সম্পদ ভালোভাবে রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আজকের কুই লিন আকাশ আরো নীল, পাহাড় আরো সবুজ, পানি আরো পরিচ্ছন্ন।

লি চিয়াং নদীর সৌন্দর্য বেড়েছে। কুই লিন সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। লি চিয়াং নদীর তীরে অবস্থিত সি চিয়ে রাস্তা হল কুই লিন শহরের ইয়াং সুও জেলার ১৪০০ হাজারেরও বেশি সময়ের পুরানো বাণিজ্যিক সড়ক। এখন এই প্রাচীন ও সমৃদ্ধ রাস্তা বিশ্ব বিখ্যাত ‘গ্লোবল ভিলেজে’ পরিণত হয়েছে। শহর ও গ্রাম, ঐতিহ্য ও আধুনিকতা এবং পূর্ব ও পশ্চিমের সংস্কৃতি এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

একই সঙ্গে ইয়াং শুও জেলাটি গত শতাব্দীর ৬০-এর দশকের এক পুরানো চিনি কারখানার ভিত্তিতে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় হোটেলে পরিণত হয়। যা অনেক পর্যটক আকর্ষণ করেছে। হোটেলের ভিতরে আগের চিনি কারখানার সব কিছু সংরক্ষিত হতো।

 

হোটেলের ম্যানেজার ছুই ইং বলেন, কুই লিন শহরকে বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের পর্যটন শহর হিসেবে উন্নত করতে আমরা চেষ্টা করছি। হোটেল নির্মাণের সময় আমরা আগের পুরাকীর্তিগুলো সংরক্ষণ করেছি।

কুই লিন শহরের সিপিসি’র শাখা সম্পাদক চৌ চিয়া বিন বলেন, কুই লিন পরিদর্শনের সময় সি চিন পিং বলেছিলেন, জনগণকেন্দ্রিক চিন্তাধারা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন শহর গড়ে তুলতে হবে। কুইলিন বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি, চীনের বৈশিষ্ট্য, কুয়াংসি’র রীতিনীতি, কুই লিনের স্টাইল অনুযায়ী শহরের পর্যটন শিল্প উন্নত হচ্ছে। উন্নয়নের লক্ষ্য হল ২০২৫ সালের মধ্যে কুই লিন শহর আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক পর্যটনের অন্যতম গন্তব্যস্থল হবে এবং ২০৩০ সালে আন্তর্জাতিক উচ্চ মানের পর্যটন স্থান হিসেবে তৈরি করতে হবে।

 

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, কুই লিনের প্রাকৃতিক দৃশ্য চীনের সেরা। যা চীনা জাতিকে দেওয়া এক প্রকৃতির মূল্যবান সম্পদ। একে নিশ্চয় ভালোভাবে রক্ষা করতে হবে। বর্তমানে কুই লিন শহরে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি সংস্কৃতি ও পর্যটন শিল্প উন্নত হচ্ছে। ‘সবুজ পাহাড় ও পরিচ্ছন্ন পানি হল সোনার পাহাড় রূপার পাহাড়’ চেতনার প্রতিফলন।