‘কোভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ
2022-06-10 16:15:05

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। ‘কোভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের পরিমাণ ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার যেমন বড়, তেমনি এ বাজেটে ঘাটতিও বেশি। অর্থমন্ত্রী আশা করেন, আগামী অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়াবে তিন হাজার সাত মার্কিন ডলার। বাজেটের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়া ও কমার ঘটনা ঘটে। নানামুখী বিশ্লেষণও চলে। এবারে বাজেটের ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এটি বর্তমান সরকারের ২৩তম এবং বাংলাদেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট।

প্রস্তাবিত বাজেটের উল্লেখযোগ্য কিছু দিক শুরুতেই তুলে ধরা হলো।

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার আগামী অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, বেকার তরুণ যুবকদের জন্য বিমা-ব্যবস্থা চালুসহ চার ধরনের সামাজিক বিমা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। যা বেশ আশার দিক।

দেশে শিল্প ও বাণিজ্য সহায়ক পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্হা গড়ে তোলার লক্ষ্যে চলমান সেতু, উড়ালসড়ক ও টানেলসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে আরো নতুন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বৃহৎ সেতু নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।

 

 

করোনা মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনার মাধ্যমে ৭ কোটি ২৯ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের সময়োপযোগী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ বিপর্যয়কর অবস্থা সফলভাবে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। অর্থমন্ত্রী জানান সরকার ঘোষিত ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে সরাসরি উপকার পেয়েছেন প্রায় ৭ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার ব্যক্তি ও প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার প্রতিষ্ঠান ।

বিশ্ব অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি নতুন চাপ তৈরি করেছে। করোনা-পরবর্তী এই সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সরবরাহ ব্যবস্থায় যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। আমদানি করা মূল্যস্ফীতির চাপ আর করোনা মহামারিতে কাজ হারানোদের আয়ের সংস্থান—দুটিই নতুন বছরের বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুদের হার কমছে না।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী বলে দাবি করেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। কল্যাণমুখী বাজেট ঘোষণা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে দেশের বাজারে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। পাশাপাশি নির্মাণ-খাত জড়িত নানা পণ্যের দাম বাড়বে।  

২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এ বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজেটের এ ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। এসময় দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়াবে তিন হাজার সাত মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উদ্ধৃতি দিয়ে এই প্রত্যাশা করেন অর্থমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেই থেকে এ পর্যন্ত ৫১তম বাজেট পেশ করেছে বাংলাদেশ।