দেহঘড়ি পর্ব-৭৩
2022-06-10 19:44:27

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, স্বাস্থ্যগত ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আলোচনা ‘ভুলের ভুবনে বাস’, সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা ‘কী খাবো, কী খাবো না’।

#প্রতিবেদন

বরাদ্দ বেড়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে

আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা খাত এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য সরকারের বরাদ্দ বেড়েছে চার হাজার ১৩২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকায়।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং কোভিড-পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ছয়টি মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘মানবস্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস, কর্মসংস্থান, আয় এবং অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে কোভিড-১৯ থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার’। বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার।

মুস্তফা কামাল বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাই হবে সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য।

 ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার গেল বারের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, নাগরিকের সুস্বাস্থ্য ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য করোনা অতিমারির ক্রান্তিকাল মোকাবিলা করে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতের উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার, যাতে সকল নাগরিক মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায় এবং সুস্থ, সবল ও দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে ওঠে। - 


#বুলেটিন

ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন বাংলাদেশের সাড়ে ৪ কোটি মানুষ

বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন। সে হিসেবে প্রতি তিনজনে একজন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। আর তাদের মধ্যে প্রায় ১ কোটি মানুষ লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন।

রাজধানীতে সম্প্রতি আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ২ দশমিক ৮২ শতাংশ লিভারের রোগ। লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ লিভারে চর্বি জমাজনিত প্রদাহ।  বিশেষজ্ঞরা বলেন, লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করা ছাড়াও যকৃতে চর্বি জমার আরও কিছু খারাপ দিক রয়েছে। এই রোগটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। অথচ শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন এবং ওজন কমানোর মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করা যায়।

 

পরীক্ষামূলক ওষুধে সেরে উঠলেন ক্যানসার রোগীরা

বিশ্বে এবারই প্রথম কোনো ওষুধে ক্যানসারের রোগীদের পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্যানসারের ওষুধ আবিষ্কারে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আসছেন। এবার যুক্তরাষ্ট্রে এমনই একটি গবেষণায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। ক্যানসারে আক্রান্ত কয়েকজন রোগীকে প্রায় ছয় মাস ধরে ডোসটারলিমাব নামের একটি ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া রোগীদের প্রত্যেকেই সুস্থ হয়েছেন। বিশ্বে এবারই প্রথম কোনো ওষুধে ক্যানসারের রোগীদের পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেল।

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে সম্প্রতি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে জানানো হয়, পরীক্ষামূলকভাবে ১৮ জন ক্যানসার রোগীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছিল। সবাই কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। ছয় মাস ধরে প্রতি তিন সপ্তাহ পরপর ওষুধটি প্রয়োগের পর তাঁদের শারীরিক পরীক্ষায় দেখা হয় সবাই ক্যানসারমুক্ত হয়েছেন। ওষুধটি প্রয়োগের পর কারও শরীরে টিউমারের অস্তিত্ব ছিল না।

তবে গবেষকেরা বলছেন, শতভাগ সাফল্য পাওয়া গেলেও এই পরীক্ষা খুবই অল্পসংখ্যক মানুষের ওপর চালানো হয়েছে। তাই আরও বড় পরিসরে ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হবে।

বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ২১ শতাংশেরই উচ্চ রক্তচাপ

বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি পাঁচজনে একজন অর্থাৎ ২১ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, যার অন্যতম কারণ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ।

সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দেশে বছরে দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যান। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৫১ শতাংশ নারী এবং ৬৭ শতাংশ পুরুষ জানেন না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

 

করোনায় মৃত্যু কমেছে বিশ্বে

চলমান করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। একইসঙ্গে আগের দিনের তুলনায় কমেছে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। গেল ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রায় ১৪০০ মানুষ। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ।

শুক্রবার ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে তাইওয়ান। প্রাণহানির তালিকায় এরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ইতালি ও যুক্তরাজ্য।

যক্ষ্মা বিশ্বের ১০টি প্রধান মরণব্যাধির একটি। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। যক্ষ্মা একটি ব্যাক্টেরিয়াবাহিত রোগ। শ্বাসযন্ত্রে মাইক্রোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়। করোনাভাইরাসের মতো এ ব্যাক্টেরিয়াও বাতাসে ভেসে বেড়ানো ড্রপলেটের মধ্যে দিয়ে শরীরে সংক্রমিত হয়। একজনের হাঁচি-কাশি থেকে দ্রুত এটি অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যক্ষ্মা রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে বেশ নানা ভ্রান্ত ধারণা। আজ আমরা আলোচনা করবো এমন কয়েকটি ভুল ধারণা সম্পর্কে।

যক্ষ্মা কি কেবল ফুসফুস সংক্রমিত করে?

যক্ষা কেবল ফুসফুসকে সংক্রমিত করে না; শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক, হাড় ও মেরুদণ্ডেও এ ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে লক্ষণ এবং উপসর্গ ভিন্ন হয়। ফুসফুসের বাইরে যে যক্ষ্মা হয় তাকে এক্সট্রাপালমোনারি টিউবারকিউলোসিস বলা হয়।

যক্ষ্মা কি ছোঁয়াছে?

সব যক্ষা ছোঁয়াছে নয়। কেবল ফুসফুস কিংবা শ্বাসনালি যে যক্ষায় আক্রান্ত হয়, সেটি একজনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে শরীরের অন্য অঙ্গে সংক্রমণ হলে সে রোগী থেকে যক্ষা অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই যক্ষ্মা মানেই ছোঁয়াচে রোগ নয়।

যক্ষ্মা কি জিনবাহিত রোগ?

অনেকের ধারণা, যক্ষ্মা একটি জিনবাহিত রোগ। প্রকৃতপক্ষে তা নয়। এ রোগের বিস্তারের ক্ষেত্রেও জিনের কোনও ভূমিকা নেই। এ ব্যাক্টেরিয়া যে কোনও সময় যে কাউকে সংক্রমিত করতে পারে। বাবা-মায়ের যক্ষ্মা হলেই সন্তনের মধ্যে যক্ষ্মা রোগের সম্ভাবনা বাড়ে, এমন তথ্যের পক্ষেও কোনও রকম প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

যক্ষ্মার কি চিকিৎসা নেই?

অনেকে মনে করেন, এ রোগের কোনও চিকিৎসা নেই। এ ধারণা ঠিক নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে যক্ষা ধরা পরলে ওষুধের মাধ্যমেই এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি দিন কাশি হলে কিংবা কাশির সঙ্গে রক্ত বের হইলে দেরি না চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বিসিজি টিকা নিলে কি যক্ষ্মা থেকে পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়া যায়?

বর্তমানে কোনও শিশুর জন্মের পর যে টিকাগুলো দেওয়া হয়, বিসিজির তার একটি। বিসিজি টিকা শিশুদের মধ্যে যক্ষ্মা সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। তবে এ টিকা থেকে প্রাপ্তবয়স্করা কতটা সুরক্ষিত তা কোনও গবেষণা থেকে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই শৈশবে এ টিকা নেওয়া হলে ভবিষ্যতে আর কখনও যক্ষা হবে না এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।

ধূমপানই কি যক্ষ্মা কারণ?

অনেকে মনে করেন, ধূমপান না করলেই যক্ষা থেকে বাঁচা যায়। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। ধূমপানই যক্ষ্মা হওয়ার একমাত্র কারণ নয়। এইচআইভি, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ থাকলেও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। - রহমান

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি অ্যাকনি নিয়ে। মানব ত্বকের একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ ব্রণ বা অ্যাকনি ভালগারিস। ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী ৬৫ কোটি মানুষের অষ্টম সাধারণ রোগ হিসেবে এটি নির্ণীত হয়। অ্যাকনি হলে মানুষের মধ্যে ভীতি, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতার জন্ম হয় এবং আত্মবিশ্বাস কমে যায়। অতিরিক্ত পর্যায়ে মানসিক অবসাদ এবং আত্মহত্যার মতো অবস্থারও উদ্ভব হতে পারে ব্রণের কারণে। অ্যাকনি কেন হয়, কী এর প্রতিকার – এ বিষয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাদিয়া তাবাস্সুম। তিনি ঢাকার গুলশানে লেজার মেডিকেল সেন্টারের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।