জাপানি রাজনীতিবিদরা বারবার তাইওয়ান ইস্যুকে ব্যবহার করে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে
2022-06-09 15:48:29

 

জুন ৯: জাপানি গণমাধ্যম সম্প্রতি দু’টি গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রকাশ করেছে। একটি হলো জাপান সরকার এই গ্রীষ্মের প্রথম দিকে চীনের তাইওয়ান অঞ্চলে ‘স্থায়ী’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেসামরিক কর্মকর্তাদের পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। তারা তথাকথিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে। দ্বিতীয়ত জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ‘তাইওয়ানের কিছু ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন’—এই অজুহাতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য একটি ইউনিফাইড কমান্ড ব্যবস্থা স্থাপন করার পরিকল্পনা করছে। যদি খবরটি সত্য হয়, তা হবে তাইওয়ান ইস্যুতে জাপানের প্রকাশিত সর্বশেষ বিপজ্জনক পদক্ষেপ। বিস্তারিত শুনবেন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

চীন-জাপান সম্পর্কের ইতিহাসের সাথে পরিচিত যে কেউ জানেন যে তাইওয়ান ইস্যুটি চীন ও জাপানের মধ্যে নীতিগত অত্যন্ত সংবেদনশীল সমস্যা। ঐতিহাসিকভাবে তাইওয়ান ইস্যুতে চীনা জনগণের কাছে জাপানের অনেক ঋণ রয়েছে।

১৮৯৫ সালে জাপানি সাম্রাজ্যবাদীরা আগ্রাসন যুদ্ধের মাধ্যমে চীনের তাইওয়ান ও ফেংহু দ্বীপপুঞ্জ দখল করে এবং অসংখ্য অপরাধ করেছে, যা তাইওয়ানের জনগণের জন্য গুরুতর বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

১৯৭২ সালে চীন ও জাপানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে থাকে। জাপান ‘এক-চীন নীতি’ মেনে চলার এবং তাইওয়ান ইস্যুকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়, যা দু’পক্ষের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পূর্বশর্ত। তারপর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে, জাপান সাধারণত তাইওয়ানের সঙ্গে বিনিময়ে সতর্কতা বজায় রাখে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কিছু জাপানি রাজনীতিবিদ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বারবার তাইওয়ান ইস্যুতে সমস্যা সৃষ্টি করেছে।

 

যেমন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা মে মাসের শেষ দিকে এক বৈঠকে দাবি করেন যে, তারা চীনের ‘পূর্ব চীন সাগর ও দক্ষিণ চীন সাগরের অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টার’ বিরোধিতা করেছে, এবং ‘তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতার গুরুত্বের’ উপর জোর দিয়েছে। জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং অন্যান্য রাজনীতিবিদ পদত্যাগ করার পর তারাও অনেকবার উস্কানি দিয়ে কথা বলেছে, যেমন ‘তাইওয়ান প্রণালীতে কিছু ঘটলে তা জাপানের জন্য সমস্যা হবে’।

 

জাপানি রাজনীতিবিদদের উস্কানিমূলক কথার উদ্দেশ্য কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন প্রভাবে জাপানের চরম ডানপন্থি শক্তি এবং তারা যে সামরিক মতবাদের প্রতিনিধিত্ব করে তা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে পারেনি। অনেক বছর ধরে তারা জাপানে তথাকথিত ‘চীনের হুমকি’ এবং আশেপাশের নিরাপত্তা সংকট প্রচার করে আসছে। তারা জাপানের সংবিধানের বিধিনিষেধ ভেঙ্গে, সামরিক আগ্রাসনের পথে ফিরে যেতে চায়।

বর্তমানে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’ কিছু জাপানি রাজনীতিবিদদের জন্য একটি সম্পদ।

 

একদিকে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী হিসেবে কাজ করে এবং ন্যাটোর ‘এশিয়া-প্রশান্তকরণ’-এর সাথে সহযোগিতা করতে কঠোর পরিশ্রম করছে দেশটি। অন্যদিকে তারা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি ব্যাহত করতে এবং জাপানের সামরিক অবস্থা পরিবর্তন করে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করতে চায়। তথাকথিত ‘তাইওয়ান সমস্যা’ সৃষ্টি করে ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে কিছু জাপানি রাজনীতিবিদ তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায়।

 

ঐতিহাসিকভাবে জাপান আগ্রাসী যুদ্ধ চালিয়ে চীন ও অন্যান্য এশীয় প্রতিবেশীদের জন্য বিশাল বিপর্যয় ডেকে এনেছে। আজ জাপানের ডানপন্থি শক্তির বিপজ্জনক প্রচেষ্টা এশিয়ায় নতুন বিভাজন ও সংঘর্ষ সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে আঞ্চলিক দেশগুলির উচ্চ সতর্ক থাকা উচিত।

তাইওয়ান ইস্যু স্পষ্টতই চীন-জাপান সম্পর্কের একটি বড় ঝুঁকি। চীনের মূল স্বার্থের ইস্যুতে জাপানি রাজনীতিবিদ এবং মার্কিন নীতিনির্ধারকরা যদি সমস্যা সৃষ্টি করতে চায়, তাদেরকে এজন্য গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে।

(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)