পৃথিবীর ৭০ শতাংশই জল। আর সমুদ্র হল জল তথা জীবনের উত্স। পৃথিবীর ৫০ শতাংশ অক্সিজেন এবং ১০০ কোটি মানুষের প্রোটিন সমুদ্র থেকে আসে। পাশাপাশি, সমুদ্র আমাদের অর্থনীতিরও জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০৩০ সালে, সমুদ্র সম্পর্কিত শিল্পে জড়িত হবে ৪ কোটি মানুষ।
সমুদ্র আমাদেরকে অনেক কিছু প্রদান করে এবং সেও আমাদের সমর্থন চায়। আজ ১৪তম বিশ্ব মহাসাগর দিবস এবং ১৫তম চীনের জাতীয় সাগর সচেতনতা দিবস। চীন একটি সামুদ্রিক রাষ্ট্র। এর সমুদ্রের আয়তন ৩০লাখ বর্গকিলোমটার এবং উপকূলরেখা ১৮ হাজার কিলোমিটার।
সাগরকে জানা, যত্ন নেয়া এবং ব্যবস্থাপনা ও শাসনসহ নানা বিষয় নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নানা ধারণা এবং প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। বর্তমান বিশ্বায়নের সময়ে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নেই। সাগরের শান্তি ও নিরাপত্তা বিশ্বের নানা দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। তাই একে আমাদেরকে অভিন্নভাবে রক্ষা করতে হবে।
২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়া সফরকালে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একবিংশ শতাব্দীর সমুদ্র রেশম পথ যৌথ নির্মাণের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, সমুদ্রের মাধ্যমে বাজার, প্রযুক্তি, তথ্য ও সংস্কৃতিসহ নানা বিষয়ের সহযোগিতা দিন দিন ঘনিষ্ঠতর হয়। চীন এ প্রস্তাবের মাধ্যমে সামুদ্রিক আন্তঃযোগাযোগ ও বাস্তব সহযোগিতা জোরদার করতে চায়। সাগর অর্থনীতি, সামুদ্রিক সংস্কৃতির বিনিময় ও কল্যাণ এগিয়ে নিয়ে যায়।
সি চিন পিং বলেছেন, মানব জাতি নীল এ গ্রহে বাস করে। সাগর আমাদের এক একটি দ্বীপকে ভাগ করে না, বরং আমাদেরকে একটি অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি হিসেবে যুক্ত করে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট সি প্রথম বারের মতো অভিন্ন লক্ষ্যের সামুদ্রিক কমিউনিটির ধারণা উত্থাপন করেন। এ ধারণা হল বিশ্ব সাগর প্রশাসনের জন্য চীনা সমাধান পরিকল্পনা এবং মানব জাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির ধারণা সাগর প্রশাসনের একটি বাস্তব অনুশীলন। সাগরকে আমরা বিভক্ত করতে পারি না, তবে ভাগাভাগি করতে পারি।
মানব জাতি ছাড়া অন্য অনেক জীবনও সমুদ্রের উপর নির্ভর করে। অভিন্ন লক্ষ্যের সামুদ্রিক কমিউনিটি মানে সাগরের জীববৈচিত্র্যর প্রতি আমাদের চেতনাও বাড়ছে। অর্থনীতি, সমাজ ও মানুষের জীবিকার মান উন্নয়নের সাথে সাথে সমুদ্রে দূষণও গুরুতর হয়েছে। সমুদ্র দূষণের ৭০ শতাংশ স্থল নিঃসরণ থেকে এসেছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, সাগরের উন্নয়নের সাথে এর প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণের ব্যাপারে বিবেচনা করতে হবে। ২০৩০ সালে শীর্ষ কার্বন এবং ২০৬০ সালে নিরপেক্ষ কার্বন বাস্তবায়ন হল বিশ্বের প্রতি চীনের প্রতিশ্রুতি।
প্রেসিডেন্ট সি আরও বলেছেন, সাগরের পরিবেশ অবনতি ঠেকাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মানুষ নিরাপদ ও গ্রীন সামুদ্রিক খাবার সরবরাহ করবে। সবার নীল আকাশ ও পরিষ্কার সমুদ্র, সৈকত উপভোগ করা নিশ্চিত করা হবে।
চলতি বছরের বিশ্ব সাগর দিবসের প্রতিপাদ্য হল সামুদ্রিক প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ মানুষ এবং প্রকৃতির সহাবস্থান বাস্তবায়ন। আসুন, আমরা একসাথে এই নীল গ্রহটিকে তথা আমাদের অভিন্ন ঘরকে রক্ষা করি। (শিশির/এনাম)