মনরো মতবাদের কোনো ‘বাজার’ নেই
2022-06-07 15:42:55

 

জুন ৭: ‘এবারের আমেরিকান শীর্ষসম্মেলন লাতিন আমেরিকায় মার্কিন নেতৃত্ব পতনের আভাস দিতে পারে।’ এটি একটি মেক্সিকান মিডিয়ার মূল্যায়ন। নবম আমেরিকান শীর্ষসম্মেলন গতকাল (সোমবার) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জলেসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সম্মেলন আয়োজনের আগে বেশ কয়েকটি আমেরিকান দেশের নেতারা তার সমালোচনা করে বা সম্মেলন বয়কট করে। সেই সাথে সম্মেলনে কিউবা, ভেনিজুয়েলা ও নিকারাগুয়াকে আমন্ত্রণ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। সবাই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই আঞ্চলিক শীর্ষসম্মেলন একটি হাস্যরসের জায়গায়  পরিণত হতে যাচ্ছে।

 

আমেরিকান শীর্ষসম্মেলন ১৯৯৪ সালে শুরু হয়েছে এবং এবার যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয়বার শীর্ষসম্মেলন আয়োজন করেছে। এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথাকথিত ‘গণতন্ত্রের ইস্যু’  হিসেবে কিউবা, ভেনিজুয়েলা এবং নিকারাগুয়ার নেতাদের শীর্ষসম্মেলনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানাবে না। এই কারণ বর্তমান মার্কিন সরকারের বেশ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে—তথাকথিত ‘গণতন্ত্র’ এবং ‘মূল্যবোধ’-এর নামে ছোট দল গঠন এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের বিতাড়িত করার কৌশল খেলে। এটি স্বাভাবিকভাবেই লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জাগিয়েছে।

 

মেক্সিকো, বলিভিয়া ও অন্যান্য দেশের নেতারা অনেক দিন আগে জানিয়েছেন যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র সব আমেরিকান নেতাদের আমন্ত্রণ না-জানায় তবে তারা শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবে না। কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত আমেরিকান বলিভারিয়ান জোটের ২১তম শীর্ষসম্মেলনে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তীব্র নিন্দা জানানো হয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষসম্মেলনকে কাজে লাগিয়ে কিছু লাতিন আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান দেশের বিরুদ্ধে একচেটিয়া ও বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। অনেক লাতিন আমেরিকার দেশ প্রশ্ন তুলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র কি ‘আমেরিকান শীর্ষসম্মেলন’ আয়োজন করেছে নাকি ‘যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষসম্মেলন’ আয়োজন করেছে?

 

লাতিন আমেরিকান দেশগুলির এই তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণ হলো তারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে ভোগাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ১৮২৩ সালে লাতিন আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ‘মনরো মতবাদের’ প্রস্তাব করে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপ, রাজনৈতিক কারসাজি, নির্বিচার নিষেধাজ্ঞা ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

২০১৩ সালের নভেম্বরে তত্কালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আমেরিকান দেশগুলির সংস্থায় একটি ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘মনরো মতবাদের যুগ শেষ হয়েছে’, যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকার দেশগুলিকে ‘সমান অংশীদার’ হিসেবে বিবেচনা করবে। কিন্তু বাস্তবতা বলে যে, কিছুই পরিবর্তন হয়নি।

 

মেক্সিকোর আইবারো আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইস্যু বিশেষজ্ঞ হাভিয়ের রেয়েস সমালোচনা করে বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ‘শীর্ষসম্মেলনের মাধ্যমে আধিপত্য শক্তিশালী করেছে’। এই পদ্ধতি লাতিন আমেরিকার দেশগুলিকে সক্রিয়ভাবে একীকরণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায় এবং তীব্র বিরোধিতার মুখোমুখি হবে।

তা ছাড়া, কিছু বিশ্লেষক উল্লেখ করেন যে, চীন সম্পর্কিত ইস্যুতে লাতিন আমেরিকার দেশগুলিকে চাপ দেওয়ার জন্য এবারের শীর্ষসম্মেলনকে ব্যবহার করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে। লাতিন আমেরিকার জন্য আর্থিক পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন ইস্যু সবচেয়ে জরুরি, ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তাদের ইচ্ছা নয়।

 

আমেরিকা হলো ‘আমেরিকানদের আমেরিকা’, ‘যুক্তরাষ্ট্রের একার আমেরিকা’ নয়। এবারের আমেরিকান শীর্ষসম্মেলন সমালোচনা ও বয়কটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভেনিজুয়েলার সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফার্নান্দো রিয়েরোর বিচার বলেছেন- ‘যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যের সামনে কোনো পথ নেই’।

 

(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)