ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে চীনের অবাধ বাণিজ্যের ‘বন্ধু চক্র’
2022-06-06 11:45:18

উচ্চমানে আরসিইপি কার্যকর করা, ইতিবাচকভাবে আসিয়ানের সদস্যদের সঙ্গে চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের ৩.০ সংস্করণ তৈরি করা এবং ধারাবাহিকভাবে সিপিটিপিপি ও ডিইপিএ’তে যোগদান ত্বরান্বিত করায় চীনের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নত কৌশল দ্রুততার সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে।

 

সম্প্রতি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে চীন ২৬টি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে ১৯টি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এটি ১০ বছর আগের চেয়ে প্রায় ১ গুণ বেশি। আরো বেশি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের কী কী লাভ আছে? কিভাবে আরো ভালোভাবে অবাধ বাণিজ্য চুক্তির ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে আরো উঁচুমানের উন্মুক্তকরণ ত্বরান্বিত করা যাবে? আজকের ব্যবসা-বাণিজ্য অনুষ্ঠানে আমি এসব প্রশ্নের উত্তর দিব।

 

২০০৮ সালে স্বাক্ষরিত চীন-নিউজিল্যান্ড অবাধ বাণিজ্য  চুক্তি ছিল উন্নত দেশের সঙ্গে চীনের প্রথম অবাধ বাণিজ্য চুক্তি। গত বছরের জানুয়ারিতে দু’পক্ষ অবাধ বাণিজ্য চুক্তির বৃদ্ধি প্রোটোকল চলতি বছরের ৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করে। আপগ্রেড সংস্করণ কার্যকর হওয়াতে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আবেদন করে কল্যাণ উপভোগের অনুরাগ অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।

 

শেনজেনের একটি বাণিজ্য কোম্পানির মিস্টার ইয়ে বলেন, চলিত বছর কোম্পানি সাফল্যের সঙ্গে শুল্ক বিভাগ থেকে ৮টি চীন-নিউজিল্যান্ড অবাধ বাণিজ্য চুক্তির উৎপত্তি প্রশংসাপত্র আবেদন করেছে। তা দিয়ে নিউজিল্যান্ড থেকে ১৭ লাখ ইউয়ানের আমদানি শুল্ক রেয়াত পেয়েছে।

 

আপগ্রেড সংস্করণ চীন-নিউজিল্যান্ড অবাধ বাণিজ্য চুক্তির শুধুমাত্র একটি ক্ষুদ্র চিত্র। চীনের উপ-বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াং শৌ ওয়েন জানান, এ পর্যন্ত চীনের অবাধ বাণিজ্য অংশীদার এশিয়া, ওশেনিয়া, লাতিন-আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকাজুড়ে বিস্তৃত। অবাধ বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে বাণিজ্যিক পরিমাণ মোট বৈদেশিক বাণিজ্যিক পরিমাণের প্রায় ৩৫ শতাংশ।

 

অধিকতরভাবে অবাধ বাণিজ্য ‘বন্ধু চক্র’ সম্প্রসারণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুততার সাথে বেশ কয়েকটি অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা ত্বরান্বিত করেছে। “চীন সক্রিয়ভাবে সিপিটিপিপি ও ডিইপিএ’তে যোগদানের পথে এগুচ্ছে। এটা চীনের উচ্চমানের অবাধ বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে নতুন পদক্ষেপ নেয়ার প্রমাণ।” ওয়ান শৌ ওয়েন বলেন, ভবিষ্যতে অধিকতরভাবে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি), ইসরায়েল ও ইকুয়েডরের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা ত্বরান্বিত করা হবে। অবাধ বাণিজ্য ‘বন্ধু চক্র’ অব্যাহতভাবে সম্প্রসারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে চীনের অধিকতর উন্মুক্তকরণের কল্যাণ আরো বেশি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে উপকৃত করবে। 

 

অবাধ বাণিজ্য চুক্তি শুধুমাত্র একটি বাণিজ্য চুক্তি নয়, বরং চীনের উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ ত্বরান্বিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন। চায়না সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এক্সচেঞ্জ সিসিআইইই’র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বিভাগের প্রধান গবেষক জাং মুও নান বলেন, চীনের উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ করতে প্রাতিষ্ঠানিক উন্মুক্তকরণের জরুরী প্রয়োজন রয়েছে এবং আরো বেশি করে আন্তর্জাতিক উচ্চমানের বাজার নিয়মাবলীর সঙ্গে সংযুক্ত করার ওপর মনোযোগ দেয়া উচিত। আরো বেশি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করাটা হচ্ছে বাজারের দিক থেকে চীনের অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আর্থ-বাণিজ্যিক যোগাযোগ ত্বরান্বিত করা। তা নিজেই উচ্চমানের উন্মুক্তকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত প্রতিফলন।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালে চীনের কার্যকর হওয়া অবাধ বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে মোট আমদানি-রপ্তানি পরিমাণ ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ২৩.৬ শতাংশ বেশি। এটি একই সময় চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের সাধারণ বৃদ্ধির চেয়ে বেশি। ইউনিভার্সিটি অফ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স ইউআইবিই’র আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য স্কুলের অধ্যাপক ছুই ফান বলেন, অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর অবাধ বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক ও পুঁজি বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণ করতে এবং মৌলিক বিদেশী বাণিজ্য অফার স্থিতিশীল করার জন্য সহায়ক।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের প্রথম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে দেশ ও অঞ্চলের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। চীনের ধারাবাহিক সম্প্রসারিত অভ্যন্তরীণ বাজার মাত্রা এবং আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা চালানোর কারণে অনেক দেশের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করার মাধ্যমে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার অনুরাগ ও আগ্রহ আছে। ছুই ফান আরো বলেন, অবাধ বাণিজ্য চুক্তির স্বাক্ষর চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যিক মাত্রা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চীন ও অবাধ বাণিজ্য অংশীদারদের মূল্য চেইন সহযোগিতা সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে চীন বিশ্ব মূল্য চেইনের মধ্য থেকে উচ্চ প্রান্তে ওঠতে ত্বরান্বিত করে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যিক কাঠামো সুবিন্যস্ত করে।

 

গত ১০ বছরে অবাধ বাণিজ্য চুক্তির সংখ্যা এক গুণ বৃদ্ধি হবার সঙ্গে সঙ্গে গুণগতমানও অব্যাহতভাবে উন্নত হয়। এটা চীনের উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন।

 

পরিষেবা বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগে বাজারে প্রবেশ আরো প্রশস্ত হয়, উন্মুক্তকরণের মাত্রা আরো বড় হয়। পরিষেবা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয়ার সময় ১শ’ বিভাগ খোলার প্রতিশ্রুতি দেয় চীন। সম্প্রতি আরসিইপি’তে চীন নতুন করে ২২টি বিভাগ খোলে। ওয়াং শৌ ওয়েন বলেন, পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চীন নেতিবাচক তালিকার উপায়ে নির্মাণ শিল্প, কৃষি ও খনির শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে আরো উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ প্রতিশ্রুতি দেয়।

 

আরো বেশি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা ত্বরান্বিত করার সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নত কৌশল নতুন অতিক্রম বাস্তবায়িত হয়।

 

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আরসিইপি কার্যকর হবার পর থেকে বাণিজ্যিক কল্যাণ ধারাবাহিকভাবে মুক্তি দিয়ে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নতুন চালিকাশক্তি যুগিয়েছে। কার্যকর হবার প্রথম প্রান্তিকে আরসিইপি’র অন্য ১৪টি সদস্য দেশে চীনের আমদানি-রপ্তানি ছিল ২.৮৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৯ শতাংশ বেড়ে চীনের মোট বৈদেশিক পরিমাণের ৩০.৪ শতাংশ দখল করে। দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও নিউজিল্যাণ্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দুই অঙ্ক ছাড়ায়।

 

ছাই ফান বলেন, অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের বৃদ্ধি কৌশল চীনের প্রাতিষ্ঠানিক উন্মুক্তকরণ বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল। নতুন উন্নয়ন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে চীনের দ্রুততার সাথে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের বৃদ্ধি কৌশল কার্যকর করা উচিত।

 

চাইনিজ একাডেমি অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক জাং চিয়ান পিং বলেন, ভবিষ্যতে অব্যাহতভাবে উচ্চমানের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো ভালোভাবে বিশ্বে সরবরাহ চেইন শিল্প চেইন বন্টনে সহায়তা করে, আরো ভালো প্রাতিষ্ঠানিক নিশ্চয়তা সরবরাহ করে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দ্বৈত প্রচলনের পারস্পরিক ত্বরান্বিত করা উচিত। “এক অঞ্চল এক পথ”সহ বিশ্বমুখী অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চীন অবাধ বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে পারস্পরিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বিশ্ব সরবরাহ চেইনের সঙ্গে সমন্বয় ত্বরান্বিত করে। এছাড়া, একে অপরকে আরো বেশি কর্মসংস্থান ও কর সৃষ্টিতে সহায়তা করে, দু’পক্ষের অভিন্ন উন্নয়ন এবং চীনের প্রতিযোগিতার শক্তি বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  (প্রেমা/এনাম)